সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে কি ধরনের সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় এবং কে হস্তান্তর করতে পারে? একজন নাবালক কি হস্তান্তরগ্রহীতা হতে পারে?


প্রশ্নঃ সম্পত্তি হস্তান্তরের সংজ্ঞা দাও। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে কি ধরনের সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় এবং কে হস্তান্তর করতে পারে? একজন নাবালক কি হস্তান্তরগ্রহীতা হতে পারে?

[Define Transfer of Property What kind of Property can be transferred under the T. P Act and Who can transfer? Can a minon s a transfer?]

উত্তরঃ

সম্পত্তি হস্তান্তর (Transfer of Property): হস্তান্তর শব্দের অর্থ হচ্ছে হাত বদল। অতএব সম্পত্তি হস্তান্তর বলতে এক ব্যক্তি কর্তৃক তার সম্পত্তির অধিকার অপর ব্যক্তির নিকট অর্পণ করা বুঝায়। ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫ ধারায় এর সুস্পষ্ট সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই ধারা অনুসারে সম্পত্তি হস্তান্তর বলতে এমন এক কাজকে বুঝায় যা দ্বারা কোন জীবিত ব্যক্তি বর্তমানে বা ভবিষ্যতে কোন সম্পত্তি এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তির নিকট বা তার নিজের নিকট অর্পণ (Convey) করে।

যে ব্যক্তি সম্পত্তির কোন বিলি ব্যবস্থা করেন এবং নিজেকে এর একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন, সেক্ষেত্রে নিজের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়।

এই ধারায় জীবিত ব্যক্তি বলতে কোন কোম্পানী তা বিধিবদ্ধ হোক বা না হোক, সমিতি বা ব্যক্তিসমষ্টিকে বুঝাবে। তবে এই আইনের বিধান বলে কোম্পানী, সমিতি, ব্যক্তিসমষ্টি কর্তৃক হস্তান্তর বা তাদের নিকট হস্তান্তর সম্পর্কে বর্তমানে বলবৎ কোন আইন প্রভাবিত হবে না।

হস্তান্তরের জন্য সম্পত্তির অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক এবং হস্তান্তরের চুক্তির জন্য চুক্তির অন্যান্য উপাদানগুলিও থাকতে হবে।

‘বর্তমান ও ভবিষ্যত' কথাগুলি দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় বুঝানো হয়েছে। হস্তান্তর বর্তমানে সংঘটিত হতে পারে বা ভবিষ্যতেও হতে পারে। বিধিমত হস্তান্তরের চুক্তি সম্পাদন করলে ভবিষ্যতে যখনই এর অস্তিত্ব দেখা দিবে তখনই চুক্তিটি কার্যকর হবে।

১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের আওতায় পাঁচটি পদ্ধতির মাধ্যমে এক ব্যক্তি তার স্থাবর সম্পত্তি অপর কোন জীবিত ব্যক্তির অনুকূলে হস্তান্তর করতে পারে। এগুলি হচ্ছে বিক্রয়, রেহেন, ইজারা, দান ও বিনিময়।

কি ধরনের সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়ঃ

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ নম্বর ধারার বিধান সাপেক্ষে যে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, এই আইনে বা বর্তমান বলবৎ অন্য কোন আইনে ভিন্নরূপ বিধান না থাকলে যে কোন প্রকার সম্পত্তি হস্তান্তর করা যেতে পারে। তবে কতিপয় সম্পত্তির কথা এই ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলি কোন অবস্থায় হস্তান্তরযোগ্য নয় ৷

কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় নাঃ

১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ ধারার বিধান মতে নিম্নোক্ত সম্পত্তিগুলি হস্তান্তর করা যায় নাঃ

(ক) ভবিষ্য উত্তরাধিকারের সম্ভাবনা (Spes Successionis): সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর সম্পত্তি পাবার সম্ভাবনা, আত্মীয়ের মৃত্যুর পর তার অছিয়ত অনুসারে সম্পত্তি পাবার সম্ভাবনা অর্থাৎ সম্পত্তি লাভের কোন সম্ভাবনাকে হস্তান্তর করা যায় না।

(খ) পুনঃপ্রবেশের অধিকার (Right of re-entry): পরবর্তীকালীন শর্তভঙ্গের জন্য দখল পাবার অধিকার সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিক ব্যতীত অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করা যায় না। যেমন, ইজারা শর্ত ভঙ্গ করলে ইজারা শর্ত অনুসারে ইজারাদাতা ইজারা সম্পত্তিতে পুনঃপ্রবেশ করতে পারে। এই পুনঃ-প্রবেশের অধিকার ইজারাদাতা অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করতে পারে না।

(গ) ব্যবহার স্বত্ব (Right to Easement): এটা হচ্ছে একজনের সম্পত্তির উপর আর এক ব্যক্তির অধিকার। যেমন Easement বা ব্যবহার স্বত্ব এককভাবে কোন সম্পত্তি নয়, ইহা কোন সম্পত্তির বিশেষ সুবিধা। এই সুবিধা কিন্তু অর্থাৎ ব্যবহার স্বত্বের অধিকারকে বিচ্ছিন্ন করে হস্তান্তর করা যায় না।

(ঘ) ব্যক্তিগত স্বার্থ (Interest property to the owner): কোন সম্পত্তির ভোগ দখলের অধিকার এর মালিকের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে সীমাবদ্ধ থাকলে, তিনি তা হস্তান্তর করতে পারেন না। তাই চুক্তিমূলে অর্জিত বিধবার ভবিষ্যৎ ভরণ পোষণের ব্যক্তিগত অধিকার হস্তান্তরযোগ্য নয়। অনুরূপভাবে পুরোহিতের সুযোগ সুবিধাসহ পুরোহিতের পদ হস্তান্তর করা যায় না।

(ঙ) ভবিষ্যৎ খোরপোষের অধিকার (Right to Future Maintenance): ভবিষ্যৎ খোরপোষের অধিকার জনস্বার্থে হস্তান্তরের অযোগ্য করা হয়েছে। এমন কি এ অধিকারটি কোন সম্পত্তির উপর চার্জ সৃষ্টি দ্বারা বা কোন আদালতের ডিক্রি দ্বারা নিশ্চিত করা থাকলেও তা হস্তান্তরযোগ্য নয়। কিন্তু অতীতের ভরণপোষণের অধিকার হস্তান্তর করা যায়।

(চ) ) কেবল মামলা করার অধিকার ( Mere right to Sue): শুধুমাত্র মামলা করার অধিকার হস্তান্তরযোগ্য নয়। তাই চুক্তিভঙ্গের কারণে ক্ষতিপূরণের মামলা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকেই দায়ের করতে হবে এটা হস্তান্তর করা যায় না। অনুরূপভাবে প্রতিনিধির বিরুদ্ধে হিসাবের জন্য মামলা দায়ের করার অধিকার, হারানো মালের জন্য মামলা করার অধিকার ইত্যাদি হস্তান্তরযোগ্য নয়। কিন্তু একটি সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের জন্য শুধু মামলা করার অধিকার হস্তান্তর না করে সম্পত্তিসহ ঐ অধিকার হস্তান্তর করা হয় তবে তা বৈধ হবে। (1943 Calcatta 321)

(ছ) সরকারী পদ বা বেতন (Public office or the Salary of a public officer): কোন সরকারী পদ বা সরকারী কর্মচারীর বেতন পাওনা হবার আগে বা পরে হস্তান্তর করা যায় না। অর্থাৎ কোন সরকারী পদের স্বত্ব কিংবা কোন সরকারী কর্মচারীর বেতন কোন অবস্থায় হস্তান্তরযোগ্য নয়।

(জ) বৃত্তি ও পেনশন (Stipends and Pensions): সামরিক, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদেরকে প্রদত্ত বৃত্তি এবং বেসামরিক ব্যক্তিদেরকে প্রদত্ত পেনশনসমূহ অর্থাৎ এগুলির স্বত্ব হস্তান্তর করা যায় না।

(ঝ) সংশ্লিষ্ট স্বার্থের প্রকৃতি বিরোধী কোন স্বত্ব (Opposed to the nature of the interest):

১. সংশ্লিষ্ট স্বার্থের প্রকৃতি বিরোধী কোন স্বার্থ হস্তান্তর করা যায় না। মালিক না হয়ে কেউ কোন জিনিস হস্তান্তর করতে পারে না। তাই সূর্য কিরণ, চন্দ্র কিরণ, নদীর পানি এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত যেমন, মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি হস্তান্তরের অযোগ্য।

২. এছাড়া চুক্তি আইনের বিধান অনুযায়ী যে সকল হস্তান্তরের প্রতিদান অবৈধ সেগুলির হস্তান্তর আইনতঃ বাতিল। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২৩ ধারার বিধান অনুসারে নিম্নোক্ত প্রতিদানগুলি অবৈধঃ
(ক) যে সকল কাজ আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, 
(খ) প্রচলিত আইনের কোন বিধানের পরিপন্থী, 
(গ) প্রতারণামূলক কাজ, 
(ঘ) অন্যের শরীরে বা সম্পত্তিতে ক্ষতিকারক কোন কাজ, ও 
(ঙ) নৈতিকতা বিরোধী বা জননীতির বিরোধী কাজ। 

৩. যে ব্যক্তি হস্তান্তরগ্রহীতা হবার জন্য আইনতঃ অযোগ্য তার নিকট সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না।

এইভাবে ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ ধারায় কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য এবং কোন্‌গুলি নয় তার বিধান সন্নিবেশিত রয়েছে।

কে হস্তান্তর করতে পারেঃ

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৭ ধারার বিধান মোতাবেক প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে যদি সে চুক্তি সম্পাদনের জন্য যোগ্য হয়ে থাকে এবং হস্তান্তরযোগ্য সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকে অথবা হস্তান্তরের জন্য যথাযথভাবে ক্ষমতাগ্রস্ত হয়ে থাকে ।

১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ১১ ধারা অনুসারে প্রত্যেক ব্যক্তি চুক্তি সম্পাদনের জন্য যোগ্য যদি সে সাবালকত্ব অর্জন করে থাকে, মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ হয়ে থাকে এবং কোন আইন দ্বারা চুক্তি করার অযোগ্য ঘোষিত না হয়ে থাকে ৷

১৮৭৫ সালের ভারতীয় সাবালকত্ব আইন অনুসারে যার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে সে ব্যক্তিকে সাবালক হিসেবে গণ্য করা হয়। নাবালকত্ব থাকাকালীন সময়ে আদালতের তত্ত্বাবধানে থাকলে ১৮ বছর পূর্ণ হলেই চুক্তি করার যোগ্য বিবেচিত হবে না; সেক্ষেত্রে ২১ বছর বয়স পূর্ণ হলে চুক্তি করার যোগ্য বিবেচিত হবে।

তাই দেখা যায় যে (১) সাবালক (২) সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন (৩) কোন আইন দ্বারা অযোগ্য চুক্তি করার অযোগ্য ঘোষিত হয়নি।

(৪) নিজে উক্ত সম্পত্তির মালিক অথবা হস্তান্তরের জন্য যথাযথভাবে ক্ষমতাগ্রস্ত ব্যক্তি সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে।

নাবালক হস্তান্তর গ্রহীতা হতে পারে কিনাঃ

হ্যাঁ, নাবালক হস্তান্তরগ্রহীতা হতে পারে নাবালক হস্তান্তর করতে না পারলেও তার অনুকূলে হস্তান্তর করতে আইনে কোন বাধা-নিষেধ নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক