প্রশ্নঃ জন লকের সম্পত্তি তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, লকের সম্পত্তি তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য কী কী?আলোচনা কর ।
ভূমিকাঃ জন লক ছিলেন একজন কর্মতৎপর প্রতিভাবান ব্যক্তি। ১৬৮৮ সালে ইংরেজ দার্শনিক ইংল্যান্ডের পুঁজিবাদী বিপ্লবের তাত্ত্বিক জন লক তার 'সম্পত্তি তত্ত্ব'-এর ধারণাটি 'Of civil government' নামক গ্রন্থে তুলে ধরেন। জন লকের সম্পত্তি সংক্রান্ত মতবাদ তার রাজনৈতিক দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সম্পত্তি তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যঃ জন লকের সম্পত্তি তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো-
(১) সম্পত্তি কায়িক পরিশ্রমের ফলঃ জন লকের মতে প্রাকৃতিক রাজ্যে সকলের নিকটই সম্পত্তির অবাধ অধিকার বিদ্যমান ছিলো। যে যার ইচ্ছেমতো সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারতো। তিনি বলেন যে, মানুষ কায়িক পরিশ্রমের সংযোগসাধন করে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার সৃষ্টি করেছে।
(২) উৎপাদন ও কল্যাণ একই সূত্রে গাঁথাঃ যে ব্যক্তি যত বেশী সম্পত্তি চাষাবাদ করতে পারবে সে তত বেশী সম্পত্তির অধিকারী হবে। লক মনে করেন যে, সম্পত্তির উপর অধিকার থাকলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই জমি চাষাবাদ করে ফসল ফলাবে। তিনি ব্যক্তিগত কৃষি, অর্থনীতির ওপর অধিক জোর দিয়েছেন। এতে জমির ফসল বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে সমাজের প্রতিটি মানুষের কল্যাণ ও জীবনধারণের মান অনেক বেশী উন্নততর হবে।
(৩) উৎপাদিত বস্তুই শ্রমের মর্যাদা নির্ণায়কঃ ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপরে জন লকের জোর দেয়ার আরো কারণ আছে। তার প্রধান যুক্তি হলো এই যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষকে শ্রমের মর্যাদা পুরোপুরি দেয় এবং শ্রমের মাধ্যমে উৎপাদিত বস্তু সমুদয়ের মধ্যে তার ব্যক্তিসত্তাকে সঞ্চারিত ও সম্প্রসারিত করে দেয়। শ্রমের মর্যাদা ও মূল্য নিরুপিত হয় তার উৎপাদিত বস্তুর মাধ্যমে।
(৪) সম্পত্তি মানুষের চুক্তিহীন অধিকারঃ আদিম সমাজকে জন লক প্রাকৃতিক রাজ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার এই ধারণা স্বভাবতই সম্পত্তির ধারণা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তার মতে, 'সম্পত্তি' কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়াই জনগণের অধিকারভুক্ত। দৈহিক শক্তির মতো এই অধিকার ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে সমাজে আনয়ন করে থাকে।
(৫) সীমাহীন সম্পত্তি ন্যায়সঙ্গত নয়ঃ একজন লোক তার নিজের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে কী পরিমাণ সম্পত্তি দাবি করতে পারে সে সম্পর্কে জন লক যদিও কোনো সুস্পষ্ট মতামত উল্লেখ করেননি তথাপি তিনি সাধারণভাবে বিশ্বাস করেন যে, কোন লোকই সীমাহীনভাবে সম্পত্তি অর্জনের দাবি করতে পারেন না।
(৬) উদ্বৃত্ত সম্পত্তি ন্যায়সঙ্গত অধিকার নয়ঃ যখন ব্যক্তিগত সম্পত্তি তার প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলে তখন উদ্বৃত্ত অংশের ওপর সে কোনো মালিকানা দাবী করতে পারে না। এবং উদ্বৃত্ত সম্পত্তিটা ন্যায়সঙ্গতভাবে তার প্রাপ্যও নয়, যা অন্যদের প্রয়োজনে লাগবে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সম্পত্তির অধিকারকে জন লক পবিত্রতম অধিকার বলে বর্ণনা করে মানব জাতির কল্যাণ সাধন করেছেন। শ্রমিক শ্রেণীর দাবির ভিত্তি হিসেবে তার ভূমিকা অগ্রগণ্য। তিনি সম্পত্তি তত্ত্বের মাধ্যমে 'মূল্যের নীতি' বিকাশ সাধন করেছেন এবং পরিবর্তীতে পুঁজিবাদী ও সমাজতন্ত্র উভয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিশ্লেষণে এ নীতি সাফল্যজনকভাবে প্রয়োগ করা হয়। এখানেই লকের সম্পত্তি তত্ত্বের সার্থকতা।
0 মন্তব্যসমূহ