জন লকের সম্পত্তির শ্রমতত্ত্ব কী?


প্রশ্নঃ জন লকের সম্পত্তির শ্রমতত্ত্ব কী?
অথবা, জন লকের সম্পত্তির শ্রমতত্ত্ব সংক্ষেপে লিখ।

ভূমিকাঃ ইংল্যান্ডের বিপ্লবের সময় যারা রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে মৌলিকত্বের দাবিদার, জন লক তাদের মধ্যে অন্যতম। রাজনৈতিক দর্শনে লকের সম্পত্তি তত্ত্ব গুরত্বপূর্ণ বিষয়। লকের মতে মানুষের শ্রম মিশ্রিত হওয়ার ফলে সম্পত্তির সৃষ্টি হয়। লকের সম্পত্তি তত্ত্বের সাথে শ্রমতত্ত্বের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক।


লকের সম্পত্তির শ্রমতত্ত্বঃ নিম্নে লকের সম্পত্তির শ্রম তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো-

(১) সম্পত্তি শ্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশঃ লকের মতে, দেহের শ্রম ও হাতের কর্ম একান্তভাবে মানুষের নিজস্ব, এমন জিনিস যখন কোনো বস্তুর সাথে মিশ্রিত হয় তখন সে বস্তুটি তার দেহের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় । সুতরাং সম্পত্তি শ্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

(২) শ্রমই সম্পত্তির স্রষ্টাঃ লকের শ্রম তত্ত্বে এক কথা প্রমাণিত হয়। 'Labour creats property' তিনি বলেন, মানুষ সম্পত্তির সাথে কায়িক পরিশ্রমের সংযোগসাধন করে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি যত বেশি সম্পত্তি চাষাবাদ করতে পারবে ততবেশি সম্পত্তির অধিকারী হবে।

(৩) শ্রমের সম্পত্তির তত্ত্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উপায়ঃ লকের মতে, সম্পত্তির ওপর অধিকার থাকলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই চাষাবাদ করে ফসল ফলাবে। তিনি ব্যক্তিগত কৃষি অর্থনীতির ওপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করেন। কারণ তিনি মনে করেন, এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জীবনযাপনের মান উন্নত হবে, ফলে অর্থনৈতি ক উন্নয়ন সাধিত হবে।

(৪) মূল্যের শ্রমনীতিঃ লকের মতে, বস্তুর ওপর যে পরিমাণ শ্রম ব্যয়িত হয়, ঠিক সে অনুসারে তার মূল্য নির্ধারিত হয়। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, পরবর্তীকালে সনাতনপন্থী অর্থনীতিবিদগণ ও সমাজতন্ত্রবাদী অর্থনীতিবিদগণ মূল্যের শ্রমনীতি বলে যে তত্ত্ব প্রদান করেন, মূলত লকের শ্রমনীতি থেকেই তার প্রেরণা নিয়েছেন। 

পরিশেষঃ সৃষ্টিকর্তা মানুষকে নিজ নিজ জীবনের প্রয়োজন মিটাতে পরিশ্রম করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই মানুষের পরিশ্রম ও প্রয়োজন উভয় মিলেই সম্পত্তির পরিমাণ নির্ধারিত হয়। পরিশ্রম মানুষের সম্পত্তির ওপর মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক