১। মৌলিক উদ্দেশ্যসমূহঃ হিসাববিজ্ঞানের সর্বপ্রথম উদ্দেশ্য হলো আর্থিক লেনদেনগুলো ধারাবাহিক ও সুষ্ঠুভাবে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা। হিসাববিজ্ঞান লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে প্রাথমিক পর্যায়ে জাবেদা এবং স্থায়ীভাবে খতিয়ানে সংরক্ষণ করে। প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই কোনো নির্দিষ্ট সময়ান্তে তার আর্থিক কার্যাবলির ফলাফল জানতে আগ্রহী। হিসাববিজ্ঞান এক্ষেত্রে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। নির্দিষ্ট সময়ান্তে মোট লাভ বা মোট ক্ষতি, নিট লাভ বা নিট ক্ষতি এবং কারবারের মোট সম্পত্তি ও দায় আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থার বিবরণীর মাধ্যমে জানা যায়। অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠানের আয় ও আয়-ব্যয় বিবরণীর মাধ্যমে জানা যায়। একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিষ্ঠানের দেনা-পাওনা, সম্পদ ও দায় তথা সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা হিসাববিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য। নির্দিষ্ট সময়ের শেষ তারিখে আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা যায়। উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় নির্ণয় ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎপাদন ব্যয় হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে। হিসাববিজ্ঞানের এ শাখা পণ্যের ব্যয় লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণিবিন্যাসকরণ ও ব্যয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম শাখা ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞান হিসাব তথ্যসমূহকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপকের চাহিদা মোতাবেক হিসাব উপস্থাপন করে; যা তাদেরকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন, ফলাফল মূল্যায়ন ও অন্যান্য আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
২. সহায়ক উদ্দেশ্যঃ দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী স্থায়ীভাবে লিখিত হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম সহায়ক উদ্দেশ্য। সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে লেনদেন লিপিবদ্ধ করে সেই লিপিবদ্ধকৃত লেনদেনের ভুল-ত্রুটি ও জালিয়াতি রোধ করা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে আয় বৃদ্ধি করা। একটি প্রতিষ্ঠানে যে বিভিন্ন ধরনের বাজেট প্রণয়ন করা হয় সেই বাজেট প্রস্তুতের জন্য যে তথ্য ও উপাত্ত প্রয়োজন তা সরবরাহ করা হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। আয়কর, বিক্রয়কর ইত্যাদি সম্পর্কে বিবৃতি প্রস্তুত করতে সাহায্য করা হিসাববিজ্ঞানের একটি উদ্দেশ্য। হিসাববিজ্ঞানের তথ্য থেকেই আয়কর নির্ধারণের জন্য আয় বিবরণী ক্সতরি করা হয়। দুর্নীতি, জুয়াচুরি, তহবিল তছরূপ প্রভৃতি রোধ করে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করা হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ দিক। উপর্যুক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, প্রতিষ্ঠানের লেনদেনসমূহ সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধকরণ এবং লিপিবদ্ধকৃত লেনদেন থেকে আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করে ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে সাহায্য করা হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। সুতরাং দেখা যায়, লেনদেনসমূহের স্থায়ী হিসাব সংরক্ষণ, আর্থিক প্রতিবেদন ক্সতরি এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য আগ্রহী পক্ষসমূহকে তাদের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে সঠিক হিসাব তথ্য প্রদান করাই হিসাববিজ্ঞানের মুখ্য উদ্দেশ্য।
0 মন্তব্যসমূহ