উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদ। চর্যার গীত (পদ)-গুলাে অনধিক তেইশ জন কবির রচনা। তিব্বতে রক্ষিত বিশাল বিশ্বকোষের দুটি অংশ তেঙ্গুর ও কেঙ্গুর। তেঙ্গুরে সিদ্ধাচার্যগণের পরিচয় আছে। তেঙ্গুর অনুসারে লুইপা চর্যাপদের প্রথম ও উনত্রিশতম সংখ্যক চর্যার রচয়িতা। তেঙ্গুরে লুইপাকে বাঙালি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাহুল সাংকৃত্যায়নের সিদ্ধান্তে লুইপা ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ধর্ম পাল দেবপালের রাজত্বকালে (৭৭০-৮০৯-৪৯) জীবিত ছিলেন। তার দেশ ছিল মগধ এবং কুল কায়স্থ। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লুইপাকে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী বলেছেন। তার শিষ্য দারিক। চৌত্রিশ নম্বর চর্যার দারিক তাকে গুরুরূপে স্বীকার করেছেন। মুণিদত্ত লুইপাকে দু দুবার আদি সিদ্ধাচার্য বলেছেন। কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, লুইপাকে আদি সিদ্ধাচার্য বলে স্বীকার করেন নি। তিনি চর্যাকার শবরপাকে লুইপার গুরু মনে করেছেন। তার এ ধারণার উৎস লামা তারানাথ প্রদত্ত বিবরণের ভিত্তিতে রাহুল সাংকৃত্যায়নের তৈরি সিদ্ধাচার্যদের গুরু তালিকা। এ পীঠিকায় কোন এক শবরপা লুইয়ের গুরু। কিন্তু উক্ত লুই-ই যে লুইপা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। রাহুল সাংকৃত্যায়ন বলেছেন, লুইপা রাজা ধর্মপালের কায়স্থ বা লেখক ছিলেন। ধর্মপালের রাজত্বকাল ৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দ এ হিসেবে লুইপা অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে জন্মগ্রহণ করেন। তিব্বতী অনুবাদের মাধ্যমে তার গ্রন্থগুলাের নাম জানা যায়- অভিসময় বিভঙ্গ, তত্ত্বস্বভাব দোহাকোষ, বুদ্ধোদয় ভগবত অভিসময়, গীতিকা। সুকুমার সেন লিখেছেন, “লুই অভিসময়ের বই লিখিয়াছিলেন। আর কোন চর্যাকর্তা বা বৌদ্ধতান্ত্রিক সিদ্ধাচার্য বিশুদ্ধ বৌদ্ধ দর্শনের বই লিখেন নাই।” এখানেও লুইয়ের প্রাচীনত্বের প্রমাণ।
0 মন্তব্যসমূহ