অথবা, আদিম অর্থনীতি কী?
ভূমিকাঃ মহাকালের প্রবহমানতার প্রেক্ষিতে মানবসমাজ সতত পরিবর্তিত ও বিকশিত হচ্ছে। সমাজের এ পরিবর্তন ও বিকাশ তার সহজাত ধর্ম। বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে মানবসমাজ আধুনিক জটিল শিল্প সমাজে এসে উপনীত হয়েছে। মানবসমাজ বিকাশের সর্বপ্রথম স্তর হলো আদিম সমাজ।
আদিম সমাজের সংজ্ঞাঃ আদিম সমাজের সংজ্ঞা দেয়ার আগে আদিম তথা 'Primitive' শব্দটি একটু বিশ্লেষণ করা দরকার।
‘আদিম'-এর শাব্দিক বিশ্লেষণঃ আদিম শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Primitive। সাধারণভাবে শব্দটি নিকৃষ্ট কিংবা সাদাসিধে ধরনের একটা কিছু বুঝাতে ব্যবহার করা হয়। মানব সমাজ বিকাশের সর্বপ্রথম স্তর বুঝাতে নৃ-বিজ্ঞানীরা ‘আদিম' শব্দটি ব্যবহার করেন । কিন্তু আধুনিক নৃ-বিজ্ঞানীরা সে সমাজ বুঝাতে ‘আদিম' শব্দটি ব্যবহার করতে চান না। এর পরিবর্তে তারা 'Pre-Industrial Society' কিংবা 'Illiterate Society' বলার মতামত ব্যক্ত করেন। বর্তমানে আদিম সমাজের পরিবর্তে 'Illiterate Society' তথা অনক্ষর সমাজ ব্যবহৃত হচ্ছে।
আদিম অর্থনীতিঃ আদিম অর্থনীতিকে জীবিকা নির্বাহের অর্থনীতি বলা যায়। আদিম সমাজে মানুষ ভরণ- পোষণের জন্যই উৎপাদন করত। জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানই ছিল তাদের কাম্য। খাদ্য সংগ্রহের জন্য তারা যুথবদ্ধ হয়ে বাস করত।
আদিম অর্থনীতি কিঃ সাধারণত খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতিকে আদিম অর্থনীতি নামে আখ্যা দেয়া হয়। অনেকে পশু পালন ও উদ্যান চাষকেও আদিম অর্থনীতির পর্যায়ভুক্ত করে থাকেন। তবে কৃষি কাজ শুরু হওয়ার পর আদিম অর্থনীতির প্রশ্নই আসে না। আদিম অর্থনীতি বলতে বুঝায় খাদ্য আহরণ, কিঞ্চিৎ উৎপাদন- ভোগ ও বন্টনের পদ্ধতির কথা। আদিম সমাজে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রয়োজন ছিল। এ সকল উপকরণ সংগ্রহ আদিম মানুষের অর্থনীতির মূল লক্ষ্য ছিল।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আদিম সমাজ তথা অনক্ষর সমাজ ছিল মানবসমাজ বিকাশের সর্বপ্রথম স্তর। এখান থেকে মানবসভ্যতার উন্মেষ ঘটে। মানুষ নতুন করে সভ্যতার ভিত রচনা করে। ওপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্য দিয়ে সে সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে।
0 মন্তব্যসমূহ