একাধিপত্য (Hegemony) ও প্রতিরোধ বিরোধিশক্তি কী? আলােচনা কর


প্রশ্নঃ একাধিপত্য (Hegemony) ও প্রতিরোধ বিরোধিশক্তি কী? আলােচনা কর।
অথবা, একাধিপত্য (Hegemony) ও প্রতিরােধ বা বিরােধিশক্তি কী? বিশ্লেষণ কর।

ভূমিকাঃ একাধিপত্য বা Hegemony এবং প্রতিরােধ বা বিরােধিশক্তি সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলােচ্য বিষয়। নিম্নে একাধিপত্য ও বিরােধিশক্তি সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে-

একাধিপত্যঃ ‘একাধিপত্য' বিষয়টি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানী গ্রামশির সেবাদান সবচেয়ে বেশি। একাধিপত্যের বৈশিষ্ট্যগুলাে হলাে-
(১) একাধিপত্য একটি পরিপূর্ণ মার্কসবাদী প্রত্যয় হিসেবে বিকশিত হয়েছে।
(২) পূর্বে এটি শ্রমিক শ্রেণির রণকৌশলের অর্থে ব্যবহৃত হয়।
(৩) শুধু শক্তি দিয়ে নয় বরং নৈতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক নেতৃত্বে দেয়ার মাধ্যমে ও একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(৪) সামাজিক জোটের একীভূত শক্তিসমূহের মাধ্যমেও একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।
(৫) একাধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধিজীবীদের অবদান অনেক বেশি।
(৬) একাধিপত্য অনেক সময় শােষণের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
(৭) একাধিপত্য প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্র বা সমাজ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
(৮) একটি সমাজে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে বুর্জোয়া শ্রেণি।
(৯) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহ।
(১০) একাধিপত্য যেকোনাে ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যথাঃ ক. সামাজিক, খ, অর্থনৈতিক, গ, রাজনৈতিক, ঘ, সামরিক ইত্যাদি।

প্রতিরােধ বা বিরােধিশক্তিঃ সাধারণ কথায় প্রতিরােধ বা বিরােধিশক্তি বলতে বুঝায় পুঁজিবাদী দেশসমূহের আগ্রাসন প্রতিরােধ জন্য আন্দোলন। প্রতিরােধ বা বিরােধিশক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ হলােঃ
(১) পুঁজিবাদকে প্রত্যাখ্যানের উদ্দেশ্যই বিরােধিশক্তির উৎপত্তি।
(২) বিরােধিশক্তির মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতি ও মূল্যবােধকে টিকিয়ে রাখা হয়।
(৩) বিরােধিশক্তি সামাজিক বা আঞ্চলিকভাবে হতে পারে।

উপযুক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একাধিপত্য বা বিরােধিশক্তি হচ্ছে দু'টি বিপরীতধর্মী বিষয়। সাধারণত স্বার্থরক্ষার জন্য এগুলাে হয়ে থাকে। গ্রামশি ওপর আলােচনার দেখিয়েছেন যে, একাধিপতক্য প্রতিষ্ঠাকারী সমাজ বা দেশ একটি নিয়ন্ত্রিত সমাজ বা দেশ হয়ে থাকে। কারণ, নিয়ন্ত্রিত না হলে তারা নিজেরাই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় তারা অন্যের ওপর অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। একাধিপত্য প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রসমূহ সাধারণত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী হয়ে থাকে। অপরদিকে বিরােধি শক্তির সদস্যরাও জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে এ বৈশিষ্ট্যগুলাে অর্জন করার চেষ্টা করে।

পরিশেষঃ উপযুক্ত আলােচনার বলা যায় যে, একাধিপত্য বা বিরােধি শক্তি পরস্পর বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে বিপরীতধর্মী। একাধিপত্য বা বিরােধিশক্তি প্রতিষ্ঠাকালী সমাজ বা রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। এ দ্বন্দ্বের কারণে অনেক সমাজ বা রাষ্ট্র একাধিপত্য হারিয়ে ফেলেও বিরােধিশক্তি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক