অথবা, বাস্তববাদ ও নব্য বাস্তববাদের সংজ্ঞা দাও।
ভূমিকাঃ জ্ঞান হতে হলে জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর প্রয়ােজন। যিনি বস্তুর জ্ঞান পান তিনি জ্ঞাতা। আর জ্ঞাতা যে বস্তুর জ্ঞান পায় তা জ্ঞেয় বস্তু। আমরা কি জানি, কাকে জানি। আমরা যা জানি তা কি জানার ওপর নির্ভর করে, না জ্ঞান নিরপেক্ষভাবেই থাকে। অর্থাৎ যা জানি তার স্বরূপ কি? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে মতবিরােধ দেখা দেয়। দর্শনের ইতিহাসে একদল দার্শনিক বলেন, জ্ঞেয় বস্তু মনের বা জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল।
বাস্তববাদ কীঃ যে মতবাদ অনুসারে জ্ঞেয় বস্তুর একটি স্বাধীন সত্তা আছে, জ্ঞাতা জানুক বা না জানুক জ্ঞেয় বস্তু স্বাধীনভাবে অস্তিত্বশীল তাকে বাস্তববাদ বা (Realism) বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বাস্তববাদের সংজ্ঞায় বিখ্যাত দার্শনিক টাইটাস তার রচিত Living Issues in Philosophy-তে বলেন, "Realism insists that we widely accepted commonsense position is sound, that is that the realism of nature of physical objects, exists independently of us and that our experience does not change the nature of the object experienced." (Page-243)
বাস্তববাদ অনুসারে, বস্তু জ্ঞানের বিষয় হতে পারে, তাই বলে বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতা বা জ্ঞাতার মনের ওপর নির্ভর করে। বরং জ্ঞাতার যেমন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে, তেমনি জ্ঞেয় বস্তুরও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। আমাদের আলােচ্য প্রশ্নানুসারে নিম্নে নব্যবাস্তববাদের বিস্তারিত আলােচনা করা হলাে-
নব্য বাস্তববাদঃ আমরা জানি দর্শনের যাত্রা শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ছয় শতকে। সেখান থেকে দর্শন বিভিন্ন সীমা অতিক্রম করে দার্শনিক হেগেল পর্যন্ত পৌঁছে। হেগেলের দ্বান্দ্বিক ভাববাদকে ঘিরে আবার দর্শন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আধুনিককালের একদল দার্শনিক বস্তুবাদের পতাকা নিয়ে প্রতীকবাদ এবং হেগেলের পরব্রহ্মবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন এবং এরা সকল প্রকার ভাববাদকেও চ্যালেঞ্জ করলেন। দর্শনের ইতিহাসে এরা নব্য বাস্তববাদী নামে পরিচিত। মার্কিন দার্শনিক হােল্ট, মার্ভিন, মন্টেগু, পেরি, স্পর্ডিং ও পিটুনিক প্রমুখ দার্শনিক এ আন্দোলনের স্রষ্টা। ব্রিটিশ দার্শনিক মুর, রাসেল, আলেকজান্ডার নানা দিক থেকে এ আন্দোলনের সমর্থক। কিন্তু আমেরিকা ও ব্রিটিশ দার্শনিকদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে মতবিরােধ দেখা দেয়।
নব্য বাস্তববাদের ব্যাখ্যাঃ ১৯১২ সালে আমেরিকার কয়েকজন দার্শনিক নব্য বাস্তববাদ প্রকাশ করেন। নব্য বাস্তববাদ লৌকিক বাস্তবাদের সাথে মিলে যায়। এ মতের বিভিন্ন বিষয় নিচে পেশ করা হলাে-
বস্তুকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায়ঃ এ মতবাদের সমর্থকরা বলেন, বহির্জগতের বস্তুগুলােকে সরাসরি মন দ্বারা প্রত্যক্ষ করা যায়। এদেরকে ধারণার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করা যায় না, বস্তু প্রতিকৃতি বা প্রতীক নয়। বহির্জগতের বস্তুকে মনাতিরিক্ত বস্তুসত্তা হিসেবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায়। নব্য বাস্তবাদীরা সাক্ষাৎ বাস্তববাদী বিশ্বাসী। তারা সরাসরি প্রত্যক্ষণে বিশ্বাসী। মাধ্যমে প্রত্যক্ষণে তারা বিশ্বাস করেন না। তারা ডেকার্ট ও লকের প্রতীক প্রত্যক্ষণকে অস্বীকার করেন। তারা জ্ঞানের দ্বৈতবাদ স্বীকার করেন না।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, যদিও নব্য বাস্তববাদের বিভিন্ন সমালােচনা রয়েছে, তবুও এর বাস্তব মূল্য অপরিসীম। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এসে নব্য বাস্তববাদের উদ্ভব। এ মতবাদ হেগেলের ভাববাদের বিরুদ্ধে একটা বিদ্রোহ। বর্তমান প্রগতির যুগে ভাববাদের প্রয়ােগ নেই বললেই চলে।
0 মন্তব্যসমূহ