মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারত উপমহাদেশের ধর্মীয় অবস্থা আলােচনা কর


প্রশ্নঃ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারত উপমহাদেশের ধর্মীয় অবস্থা সংক্ষেপে আলােচনা কর।

উপস্থাপনাঃ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল যেমনি শােচনীয়, তেমনি ধর্মীয় স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এক শ্রেণির ধর্মযাজকের চাপিয়ে দেয়া রীতিই ধর্মের নামে অনুসরণ করতে হতাে। ঐতিহাসিক ওয়াল ব্যাস্ক বলেন, জাতি, ধর্ম ও ভাষার দিক থেকে ভারত উপমহাদেশ পৃথিবীর একটি জটিল দেশ। ড. স্মিথ বলেন- The partial Unity of India History vanish gs with Horsha. ফলে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আরব বীর মুজাহিদ মুহাম্মদ বিন কাসিম কর্তৃক সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হয়।

মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের ধর্মীয় অবস্থাঃ

১. হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণঃ মৌর্য সম্রাটদের পৃষ্ঠপােষকতায় ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হতে থাকে, কিন্তু পরবর্তীকালে গুপ্তযুগে বৌদ্ধ ধর্মের অবনতির সুযােগে হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটে। বৌদ্ধদের রক্তে ভারতভূমি রঞ্জিত হয় আর হিন্দু ধর্ম সমাজের সকল স্তরে প্রভাব বিস্তার করে।

২. তিনটি প্রধান ধর্মঃ মুসলমানদের বিজয়ের প্রাক্কালে ভারত উপমহাদেশে তিনটি প্রধান ধর্মমত ছিল। যেমন- বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম ও হিন্দু ধর্ম। জৈন ধর্মের জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল না, বৌদ্ধ ধর্ম লুপ্ত হওয়ার পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। তাই হিন্দু ধর্মই ছিল দেশের একমাত্র ধর্ম। অধিকাংশ রাজাই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

৩. ব্রাহ্মণদের প্রাধান্যঃ পুরােহিত শ্রেণি সম্ভূত হওয়ায় ব্রাহ্মণদের সমাজে উচ্চ মর্যাদা দেয়া হতাে। সেই সুযােগে তারা সাধারণ লােকদের শােষণ করত। তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ব্রাহ্মণরা ইচ্ছাপূর্বক জনসাধারণকে অজ্ঞ করে রাখত, দুর্নীতিপরায়ণ ব্রাহ্মণরা জনসাধারণের দুর্বলতা ও ভীতির সুযােগের সদ্ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করত। এভাবে তারা সমাজে নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

৪. মূর্তিপূজাঃ বৈদিক যুগে ভারতে মূর্তিপূজার প্রচলন ছিল না, কিন্তু ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনরুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে মূর্তিপূজা প্রাধান্য লাভ করে। এ সময় হিন্দুরা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ব্রহ্মা, সংহারকর্তা হিসেবে শিব এবং পালনকর্তা হিসেবে বিষ্ণুর পূজা করত।

৫. অংশীবাদীদের প্রভাবঃ এ সময় অংশীবাদীদের প্রভাব ছিল সর্বত্র। এরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বস্তু, প্রাণী ও জড় পদার্থকে আল্লাহর সাথে শরীক করে পূজা অর্চনা করতে দ্বিধা করত না।

৬. ধর্মোৎসবে অসামাজিক কার্যকলাপঃ হিন্দুরা তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালনের সময় সীমাহীন বেপরােয়া হয়ে উঠত। সমাজের উচ্চ শ্রেণি দুর্গাপূজা, হােলি ও কাম মহােৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন অশ্লীল এবং অসামাজিক কাজ করত। বিশেষ করে এক শ্রেণির লােক অবলীলায় নারীদেহ ভােগ ও মদ্যপান করত। তাদের কেউ বাধা দিত না।

৭. ধর্মীয় বিভেদঃ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতে ধর্মীয় বিভেদ বিরাজমান ছিল। একই ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণি ও অংশ সমগ্র জাতিসত্তাকে খণ্ডিত করেছিল। যেমন শৈব ও বৈষ্ণব নামের ব্রাহ্মণ্য ধর্মের দুটি শাখা। ফলে সব সময় সমাজে অশান্তি বিরাজ করত।

উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলােচনায় প্রতীয়মান হয়, মুসলিম আগমনের প্রাক্কালে ভারত ছিল এক অন্ধকারাচ্ছন্ন উপমহাদেশ। আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা ও কুসংস্কার ভারত উপমহাদেশে মানবতার প্রগতি স্তিমিত করে রেখেছিল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক