বহুত্ববাদ কী?


প্রশ্নঃ বহুত্ববাদ কী?
অথবা, বহুত্ববাদ বলতে কী বােঝ?

ভূমিকাঃ এই মতবাদ একত্ববাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বলে যে, এ বিচিত্র জগৎ নানা রকম বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র বস্তুতে পরিপূর্ণ। বস্তুর বিভিন্নতা, স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্যই এ জগতের আড়ালে বহু সত্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। বহু সত্তার সংযােগের ফলেই এ বৈচিত্র্যময় জগৎ সৃষ্টি। বহুত্ববাদের চারটি রূপ আছে।

(ক) জড়াত্বক বহুত্ববাদঃ গ্রিক দার্শনিক এম্পিডক্লিস এ মতবাদের সূচনা করে বলেন, আগুন, পানি, মাটি ও বায়ু এই চারটি মূল উপাদানের সমন্বয়ে জগতের সবকিছু সৃষ্টি। তারপর ডেমােক্রিটাস প্রবর্তন করেন জড় পরমাণুবাদ। কোন দ্রব্যকে ক্রমাগত বিভক্ত করা হলে শেষ পর্যন্ত যেসব অবিভাজ্য সূক্ষ্ম কণা পাওয়া যায় তাকে পরমাণু বলে। পরমাণুগুলাে মহাকাশে বিক্ষিপ্ত ও ঘূর্ণায়মান অবস্থায় ছিল এবং তারপর তাদের আকস্মিক সংযােগ ও বিয়ােগের ফলে এই জড়জগতের উৎপত্তি হয়। জড়পরমাণু থেকে জীবদেহ ও প্রাণের আবির্ভাব ঘটেছে এবং জীবদেহের স্নায়ুকেন্দ্র ও মস্তিষ্ক থেকে মন বা চেতনার উৎপত্তি হয়েছে। এই মতানুযায়ী ঈশ্বরের কল্পনা ছাড়াই পরমাণুর আকস্মিক সংযােগ ও বিয়ােগের সাহায্যে জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়কে ব্যাখ্যা করা হয়।

(খ) আধ্যাত্মিক বহুত্ববাদঃ এই মতবাদের প্রবর্তক লাইবনিজ বলেন, মােনাড বা চিৎপরমাণু হচ্ছে জগতের আদিম উপাদান। মােনাড হলাে মূর্ত, বিস্তৃতিহীন, স্বতন্ত্র ও গবাক্ষহীন আধ্যাত্মিক বিন্দু যা গাণিতিক বিন্দু ও জড় বিন্দু থেকে ভিন্ন। এটি অবিভাজ্য, স্বনির্ভর, আত্মকেন্দ্রিক, চেতনসক্রিয় এবং সংখ্যায় অগণিত। এরা পরস্পরের ওপর প্রভাব বিস্তার বা ক্রিয়া করে না। চেতনা অনুসারে মােনাড চার প্রকার-(ক) আত্মসচেতন জীবাত্মা, (খ) চেতন প্রাণীর আত্মা, (গ) অবচেতন উদ্ভিদ আত্মা এবং (ঘ) নির্জীব জড়বস্তু। বিশ্বজগতের সবকিছুই মােনাড দ্বারা গঠিত। ঈশ্বর হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মােনাড় যিনি অন্য সব মােনাড সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে পূর্বপ্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলা স্থাপন করেছেন। এ জন্যই এ জগৎ এত সুশৃঙ্খল, ঐক্যপূর্ণ ও সূক্ষ্ম কলাকৌশলপূর্ণ।

(গ) প্রয়োগবাদী বহুত্ববাদঃ এ মতবাদের প্রবর্তক উইলিয়াম জেমস বলেন, এ জগৎ স্বাধীনতাহীন ও বৈচিত্র্যহীন নয় বরং বহু স্বতন্ত্র বস্তুর সমষ্টি। এই বিচিত্র ও অভিনব জগৎ ঈশ্বরের প্রকাশ নয়। এর স্বাধীন অস্তিত্ব আছে এবং বস্তুসমূহের বহুরূপতা, স্বাতন্ত্র্য, স্বনির্ভরতা, বিচ্ছিন্নতা, বিশৃঙ্খলা, অভিনবত্ব, স্বাধীনতা ও বৈচিত্র্য এসবই সত্য। প্রকৃতপক্ষে এ জগৎ এক নয়, বহু।

(ঘ) নব্যবস্তুবাদী বহুত্ববাদঃ নব্যবস্তুবাদীদের মতে, জগতে যেমন বহু বস্তু আছে তেমনি বহু মনও আছে। এ জগৎ এক আঙ্গিক ঐক্য নয়, বরং বহু বস্তুর সমষ্টি। এদের সম্পর্ক বাহ্যিক; অভ্যন্তরীণ নয়। সত্তার স্তরভেদ আছে- জড় নিম্নতর স্তর, প্রাণ উচ্চতর স্তর এবং মন উচ্চতম স্তর। জড় থেকে প্রাণ এবং প্রাণ থেকে মনের উন্মেষ ঘটে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, এ বিচিত্র জগৎনানা রকম বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র বস্তুতে পরিপূর্ণ। বস্তুর বিভিন্নতা, স্বাতন্ত্র ও বৈচিত্র্যই এ জগতের আড়ালে বহু সত্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। বহু সত্তার সংযােগের ফলেই এ বৈচিত্র্যময় জগৎ সৃষ্টি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক