অথবা, নব্য বাস্তববাদী বহুত্ববাদীর সংজ্ঞা দাও।
ভূমিকাঃ বিশ্ব তত্ত্বের নানা প্রশ্ন নিয়ে আবহমান কাল থেকে দার্শনিকদের মধ্যে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এক নয়, দুই সত্তা থেকেই এ জগতের সৃষ্টি। আবার কেউ বা বলেন, বহুসত্তা থেকে বিশ্বজগতের যাবতীয় বস্তু সৃষ্ট হয়েছে। অতএব, আমরা সত্তার সংখ্যাসম্পর্কিত তিনটি মতবাদ পাই- ১. একাত্ববাদ, ২. দ্বৈতবাদ ও ৩. বহুত্ববাদ।
নব্য বাস্তববাদের ব্যাখ্যাঃ ১৯১২ সালে আমেরিকার কয়েকজন দার্শনিক নব্য বাস্তববাদ প্রকাশ করেন। নব্য বাস্তববাদ লৌকিক বাস্তবাদের সাথে মিলে যায়। এ মতের বিভিন্ন বিষয় নিচে পেশ করা হলো-
সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায়ঃ এ মতবাদের সমর্থকরা বলেন, বহিঃজগতের বস্তুগুলােকে সরাসরি মন দ্বারা প্রত্যক্ষ কর যায়। এদেরকে ধারণার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করা যায় না, বস্তু প্রতিকৃতি বা প্রতীক নয়। বহিঃজগতের বস্তুকে মনাতিরিক্ত বস্তসত্তা হিসেবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায়। নব্য বাস্তবাদীরা সাক্ষাৎ বাস্তববাদে বিশ্বাসী। তারা সরাসরি প্রত্যক্ষণে বিশ্বাসী। স্বমাধ্যমে প্রত্যক্ষণে তারা বিশ্বাস করেন না। তারা ডেকার্ট ও লকের প্রতীক প্রত্যক্ষণকে অস্বীকার করেন। তার জ্ঞানের দ্বৈতবাদ স্বীকার করেন না।
মুখ্য ও গৌণ গুণঃ মুখ্য, গৌণ এবং সুন্দর, অসুন্দর গুণগুলাে সত্য, মনাতিরিক্ত ও বস্তুনির্ভর। এরা ব্যক্তি মনের ধারণা নয়। সুতরাং নব্য বাস্তববাদের সাথে একমত।
সত্তা মননির্ভরঃ নব্য বাস্তববাদীরা মনে করেন, বহির্জগতের বস্তুসমূহের সত্তা মননির্ভর নয়। এরা সসীম এবং অসীম মনাতিরিক্ত। নব্য বাস্তববাদ আগত এবং বস্তুগত উভয় প্রকার ভাববাদকে অস্বীকার করে। এ মতানুসারে জ্ঞান বস্তুর স্বতন্ত্রতার পরিবর্তন ঘটায় না। জ্ঞানের সম্পর্ক বহিঃসম্পর্ক। জ্ঞান জ্ঞেয় বস্তুর প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে না। জ্ঞান ও জ্ঞেয় বস্তুর একটা বহিঃসম্পর্ক আছে।
নিরপেক্ষ একত্ববাদঃ নব্য বাস্তববাদীদের মতে, জড় হলাে নিরপেক্ষ পদার্থ, যা এক পরিপ্রেক্ষিতে জড় বা ভৌতিক এবং অন্য পরিপ্রেক্ষিতে চেতনা বা মানসিক রূপে প্রতীয়মান হয়। কাজেই যেকোনাে বিষয়ই মন বা জাগতিক বিষয়ের একটি মাত্র অংশ।
একক জগৎঃ নব্য বাস্তববাদীরা একক জগতে বিশ্বাস করে না। প্রয়ােগবাদীদের মত তার বহু জগতে আস্থাবান। জগতের মধ্যে কোনাে আঙ্গিক ঐক্য নেই। বস্তুই সত্য।
পরমাত্মার প্রকাশঃ নব্য বাস্তববাদীরা মনে করেন, এ জগৎ কোনাে পরব্রহ্ম বা পরমাত্মার প্রকাশ নয়। এটা আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়েছে। পরব্রহ্মের ধারণাও অলীক কল্পনা মাত্র।
বাহ্য সম্পর্কঃ নব্য বাস্তববাদীরা বস্তুর মধ্যে প্রাপ্ত সকল সম্পর্ককেই বাহ্য সম্পর্ক বলে মনে করেন। এ সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটলেও বস্তুর প্রকৃতির কোনাে পরিবর্তন ঘটে না। এ সম্পর্কগুলাে মনের সৃষ্টি নয়। দেশ, কাল এবং কার্যকারণ সম্পর্ক সত্য এবং এদের অস্তিত্ব আছে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, একত্ববাদীরা একটি আদিসত্তায় এবং বহুত্ববাদীরা বহুসত্তায় বিশ্বাসী। এরূপ দুটি বিরােধী মতবাদের মধ্যে সমন্বয় করেছে দ্বৈতবাদ। দ্বৈতবাদের মতে, জগতের আদিসত্তা দুটি- জড় ও মন। জগতের সব কিছুই দুই শ্রেণিভুক্ত- জড়াত্মক ও মানসিক। বৈচিত্র্যময় জগৎ এই দুটি ভিন্নধর্মী উপাদান দ্বারা গঠিত। তা ছাড়া দ্বৈতবাদ ও বাস্তববাদ সম্পূর্ণ দু'টি ভিন্নধর্মী মতবাদ। তাই এদের মধ্যে সম্পর্ক না থাকাই শ্রেয়।
0 মন্তব্যসমূহ