প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি বিশেষ কি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা ও গুণাবলী অর্জন করতে পারে? এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের অবস্থান সম্পর্কে আলােচনা কর।ভূমিকাঃ শান্তি চায় না এমন কোন মানুষ বা জাতি নেই। সকল জাতি ও সকল মানুষের একান্ত কাম্য হলাে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তারপরও বিভিন্ন কারণে যুদ্ধ-বিগ্রহ আরম্ভ হয়। ইতিমধ্যে দু'টি বিশ্বযুদ্ধও অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতিসংঘ। প্রতিষ্ঠার পর জাতিসংঘ ঘােষণা করে যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রের বৈধতা বা আচার আচরণের মাপকাঠি হবে আন্তর্জাতিক আইন।
আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব (International Personality) কাকে বলেঃ
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সত্ত্বার অবস্থানকে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বলে। আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের উপর বিভিন্ন রাষ্ট্রের আচরণ বিধি ও সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। শুধু কোন রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করতে পারে। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোন ব্যক্তিকেও আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
আন্তর্জাতিক ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য অথবা সকল শ্রেণির রাষ্ট্র কি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিঃ
সকল শ্রেণির রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ব্যক্তি কি না তা নিম্নে উল্লেখ করা হলাে-
কোন রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে অধিকারী হতে হলে বা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করতে হলে-
(i) সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক গােষ্ঠীর সদস্য হতে হবে।
(ii) স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করতে হবে।
(iii) সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে বিশ্ব সংস্থার সদস্য হতে হবে।
(iv) নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড, জনসংখ্যা, আয়তন ইত্যাদি থাকতে হবে।
(v) আন্তর্জাতিক আইনের ক্রম উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে হবে।
কোন ব্যক্তি বিশেষ কি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা ও গুণাবলী অর্জন করতে পারেঃ
কোন ব্যক্তি বিশেষ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা ও গুণাবলী অর্জন করতে পারে কিনা তা নিম্নে উল্লেখ করা হলাে-
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। শুধু কোন রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করতে পারে। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোন ব্যক্তিকেও আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
এক্ষেত্রে আইনবিদদের মধ্যে মতবিরােধ রয়েছে। একদল মনে করেন শুধু রাষ্ট্রই হবে আন্তর্জাতিক আইনের একমাত্র বিষয়। আবার অন্য দল মনে করেন কোন ব্যক্তিই হবে আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়।
যারা শুধু রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়বস্তু মনে করেন তাদের যুক্তি হলাে-
(১) কোন ব্যক্তি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়, শুধু রাষ্ট্রই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
(২) আন্তর্জাতিক আইনের প্রধান উৎস হলাে বিভিন্ন চুক্তি। আর এই ধরনের চুক্তি শুধু কোন রাষ্ট্রই করতে পারে।
(৩) আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা যে অধিকার সৃষ্টি হয় তা শুধু রাষ্ট্র ভােগ করতে পারে।
(৪) আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের মূল কেন্দ্র হলাে রাষ্ট্র সুতরাং রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক আইনের মূল বিষয়।
(৫) আন্তর্জাতিক আদালতের বিধি অনুসারে কোন রাষ্ট্রই কেবল কারাে বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে এবং কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে ইত্যাদি।
অন্যদিকে যারা শুধু ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়বস্তু মনে করেন তাদের যুক্তি হলাে-
(১) মানবাধিকার ঘােষণাপত্র ও অন্যান্য সনদে কোন ব্যক্তির মর্যাদা প্রত্যক্ষভাবে স্বীকৃত।
(২) আন্তর্জাতিক সন্ধির মাধ্যমে ব্যক্তির যে অধিকার সৃষ্টি হয় তা রাষ্ট্র প্রকাশ্যভাবে অনুমােদন করে।
(৩) যুদ্ধের সময় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কোন সদস্য যদি আন্তর্জাতিক আইনের বিধান লংঘন করে তাহলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে উক্ত সদস্য শাস্তিযােগ্য বলে বিবেচিত হবে।
(৪) নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল এক পর্যালােচনায় বলেন, কোন বিমূর্ত সত্তা অপরাধ করে না বরং ব্যক্তিগণই অপরাধ করে। সেই ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
(৫) জলদস্যুতা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। যারা এই কাজে লিপ্ত তারা আন্তর্জাতিক আইনের বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের উপযুক্ত আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের অবস্থানঃ
কোন রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে অধিকারী হতে হলে বা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করতে হলে-
(i) সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক গােষ্ঠীর সদস্য হতে হবে।
(ii) স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করতে হবে।
(iii) সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে বিশ্ব সংস্থার সদস্য হতে হবে।
(iv) নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড, জনসংখ্যা, আয়তন ইত্যাদি থাকতে হবে।
(v) আন্তর্জাতিক আইনের ক্রম উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে হবে।
কোন ব্যক্তি বিশেষ কি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা ও গুণাবলী অর্জন করতে পারেঃ
কোন ব্যক্তি বিশেষ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা ও গুণাবলী অর্জন করতে পারে কিনা তা নিম্নে উল্লেখ করা হলাে-
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। শুধু কোন রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করতে পারে। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোন ব্যক্তিকেও আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
এক্ষেত্রে আইনবিদদের মধ্যে মতবিরােধ রয়েছে। একদল মনে করেন শুধু রাষ্ট্রই হবে আন্তর্জাতিক আইনের একমাত্র বিষয়। আবার অন্য দল মনে করেন কোন ব্যক্তিই হবে আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়।
যারা শুধু রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়বস্তু মনে করেন তাদের যুক্তি হলাে-
(১) কোন ব্যক্তি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়, শুধু রাষ্ট্রই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
(২) আন্তর্জাতিক আইনের প্রধান উৎস হলাে বিভিন্ন চুক্তি। আর এই ধরনের চুক্তি শুধু কোন রাষ্ট্রই করতে পারে।
(৩) আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা যে অধিকার সৃষ্টি হয় তা শুধু রাষ্ট্র ভােগ করতে পারে।
(৪) আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের মূল কেন্দ্র হলাে রাষ্ট্র সুতরাং রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক আইনের মূল বিষয়।
(৫) আন্তর্জাতিক আদালতের বিধি অনুসারে কোন রাষ্ট্রই কেবল কারাে বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে এবং কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে ইত্যাদি।
অন্যদিকে যারা শুধু ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়বস্তু মনে করেন তাদের যুক্তি হলাে-
(১) মানবাধিকার ঘােষণাপত্র ও অন্যান্য সনদে কোন ব্যক্তির মর্যাদা প্রত্যক্ষভাবে স্বীকৃত।
(২) আন্তর্জাতিক সন্ধির মাধ্যমে ব্যক্তির যে অধিকার সৃষ্টি হয় তা রাষ্ট্র প্রকাশ্যভাবে অনুমােদন করে।
(৩) যুদ্ধের সময় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কোন সদস্য যদি আন্তর্জাতিক আইনের বিধান লংঘন করে তাহলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে উক্ত সদস্য শাস্তিযােগ্য বলে বিবেচিত হবে।
(৪) নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল এক পর্যালােচনায় বলেন, কোন বিমূর্ত সত্তা অপরাধ করে না বরং ব্যক্তিগণই অপরাধ করে। সেই ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
(৫) জলদস্যুতা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। যারা এই কাজে লিপ্ত তারা আন্তর্জাতিক আইনের বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের উপযুক্ত আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের অবস্থানঃ
জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। যদিও আন্তর্জাতিক আইনের বিধান অনুযায়ী জাতিসংঘ কোন রাষ্ট্র নয় তবুও এই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করেছে।
মূলতঃ এই প্রতিষ্ঠানই বিশ্বের সকল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সনদ প্রদান করে। অর্থাৎ জাতিসংঘের সনদ ব্যতিত কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব নিশ্চিত হয় না।
Reparation Case (ICJ, 1949) মামলায় আদালত ঘােষণা করেন যে, জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক ব্যক্তি।
সুতরাং বলা যায় জাতিসংঘ অবশ্যই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
উপসংহারঃ আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন বিষয় পর্যালােচনা করে বলা যায়, রাষ্ট্র হলাে আন্তর্জাতিক আইনে প্রথম বিষয়বস্তু। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোন ব্যক্তিকেও আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে গণ্য করা যায়।
মূলতঃ এই প্রতিষ্ঠানই বিশ্বের সকল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সনদ প্রদান করে। অর্থাৎ জাতিসংঘের সনদ ব্যতিত কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব নিশ্চিত হয় না।
Reparation Case (ICJ, 1949) মামলায় আদালত ঘােষণা করেন যে, জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক ব্যক্তি।
সুতরাং বলা যায় জাতিসংঘ অবশ্যই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
উপসংহারঃ আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন বিষয় পর্যালােচনা করে বলা যায়, রাষ্ট্র হলাে আন্তর্জাতিক আইনে প্রথম বিষয়বস্তু। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোন ব্যক্তিকেও আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে গণ্য করা যায়।
0 মন্তব্যসমূহ