গণতন্ত্র অর্থ জনগণের সরকার, কিন্তু জনগণের দ্বারা পরিচালিত নয়”- (আব্রাহাম লিংকন) আলােচনা কর


প্রশ্নঃ “গণতন্ত্র অর্থ জনগণের সরকার, কিন্তু জনগণের দ্বারা পরিচালিত নয়”- (আব্রাহাম লিংকন) আলােচনা কর।

অথবা, “গণতন্ত্র অর্থ জনগণের সরকার, কিন্তু জনগণের দ্বারা পরিচালিত নয়” - আব্রাহাম লিংকন) বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনার বিষয়বস্তুগুলাের মধ্যে গণতন্ত্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন কালে গ্রিসে এ শাসনব্যবস্থার উদ্ভব হয় এবং বর্তমানে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। তাই বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্র দেখা যাচ্ছে। মূলত জনগণের জন্য একটি কল্যাণভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তােলাই হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্র অর্থ জনগণের সরকার, কিন্তু জনগণের দ্বারা পরিচালিত নয়- এ উক্তিটি আলােচনার পূর্বে আমাদের জন্য প্রয়ােজন গণতন্ত্র, সরকার ও জনগণ বলতে কি বুঝায়। কেননা এ তিনটি প্রত্যেকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

“গণতন্ত্র অর্থ জনগণের সরকার, কিন্তু জনগণের দ্বারা পরিচালিত নয়”- বক্তব্যের আলােচনাঃ

প্রথমত, গণতন্ত্র বলতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা যা বলেছেন তা হলাে, গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সমাজে বিরাজ করে। বার্নসের মতে, "Democracy is an ideal is a society not of a similar person but of equals in the sense that is each an integral and irreplaceable part of the whole."

দ্বিতীয়ত, যাদের উপর রাষ্ট্র পরিচালনার ভার থাকে তাদেরকে সমষ্টিগতভাবে সরকার বলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলােবর মতে, "The organization are machinery through which the state formulates and executes its which is termed as governments." সংক্ষেপে সরকার বলতে বুঝায় আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগকে।

তৃতীয়ত, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিসে যখন প্রযুক্তি মাধ্যমের ধরন চালু হয় তখন জনগণ প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্যে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারতাে। কেননা তখন রাষ্ট্র ছিল ছােট। কিন্তু অষ্টাদশ শতকে গণতন্ত্রের ধারণা আধনিক উদারনৈতিক রূপ লাভ করায় জনগণের ধারণাও পাল্টাতে শুরু করে। প্রত্যক্ষ শাসনের পরিবর্তে পরােক্ষ শাসনকার্য পদ্ধতি চালু হয় এবং তখন থেকেই জনগণ ও সরকার এক না হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা উদ্ভবের পর থেকে জনগণের ধারণা পরিবর্তিত হয়। এ বিভক্ততা অনুযায়ী বিভিন্ন রাষ্ট্রে সরকারের সম্পর্কের বিভিন্নতা দেখা যায়।

অব্রাহাম লিংকন প্রদত্ত সংজ্ঞাঃ বর্তমানে যে অর্থে গণতন্ত্র শব্দটির প্রয়ােগ করা হয় তা ধনতান্ত্রিক যুগের সূত্রপাত থেকেই ব্যাপকতা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে। গণতন্ত্রের তিনটি রূপ। যথা-
১. শাসনব্যবস্থার রূপ হিসেবে গণতন্ত্র;
২. জীবনাদর্শ হিসেবে গণতন্ত্র ও
৩. আদর্শ বা প্রকৃত গণতন্ত্র।

উদারনৈতিক গণতন্ত্রের সমর্থকরা উদারনৈতিক গণরাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলে প্রচার করেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্র সম্পর্কে তার বিখ্যাত উক্তিটি বলেছেন, "Government of the people, by the people and for the people."

লিংকনের সরকার বিশ্লেষণ ও বাস্তবতাঃ পরােক্ষ শাসনকার্য অর্থাৎ প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনকার্যের প্রেক্ষাপটে লিংকনের গণতন্ত্রের সরকারটিকে দু'দিক থেকে বিচার করা যায়। যথা-
১. পুঁজিপতি বা বুর্জোয়া গণতন্ত্র এবং
২. সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র।

অন্যদিকে, লিংকনের সরকারটির যে তিনটি অংশ তা আলাদাভাবে বিশ্লেষণযােগ্য তা হলো-
১. জনগণের শাসন।
২. জনগণের জন্য সরকার ও
৩. জনগণ দ্বারা পরিচালিত শাসন।

পুঁজিপতি বা বুর্জোয়া গণতন্ত্রের দৃষ্টিতেঃ Suregy এর মতে, জনগণের শাসন বলতে বুঝায়-
১. জনগণই সরকারের উৎস।
২. সরকারকে জনগণ হতে পৃথক করে দেখা যায় না।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিকে অধিকতর গ্রহণযােগ্য বলে ধরা হয়। কেননা জনগণ সরকারের প্রতি আনুগত্য পােষণ করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এরূপ সরকার গঠনে জনগণ কার্যত কোন ভূমিকা থাকে না তাই এরূপ শাসনব্যবস্থাকে জনগণের শাসক বলে অভিহিত করা যায় না।

জনগণের জন্য সরকারঃ জনগণের জন্য সরকার বলতে বুঝায় গণতান্ত্রিক সরকার। সকলের স্বার্থে কাজ করবে এরূপ সরকার কোন বিশেষ ব্যক্তি, গােষ্ঠী বা শ্রেণি স্বার্থের জন্য কাজ করবে না। আপামর জনসাধারণের কল্যাণ বিধান করাই এরূপ সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য।

বাস্তবতাঃ অথচ যে আমেরিকার সমাজকে কেন্দ্র করে লিংকন তার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বরুপ ব্যক্ত করেন সেখানকার বর্তমান বাৎসরিক আয়ব্যয়ের হিসেবে অর্থাৎ বাজেট আলােচনা করলে দেখা যায় যে, পারমাণবিক অস্ত্রসহ সামরিক খাতে যে অর্থ ধরা হয় তা জনকল্যাণমূলক অর্থের থেকে অনেক বেশি। আবার তৃতীয় বিশ্বের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, অধিকাংশ সরকার জনগণের স্বার্থের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত, কখনই সর্বসাধারণের স্বার্থে পরিচালিত না। কেননা সেখানকার প্রতিষ্ঠিত সরকার কতকগুলাে পুঁজিপতিদের সমন্বয়ে পরিচালিত বিশ্বব্যাংক, আই.এম,আই গৃহীত সাহায্যকারী ও পরামর্শদানকারী দেশ তথা সংস্থার কথামতাে চলে, ফলে জনসাধারণের পরিবর্তে সে শাসকগােষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষিত হয় যারা আধা সামন্তবাদী ও আধা পুঁজিবাদী দেশের প্রতিনিধিত্ব করে।

জনগণের দ্বারা পরিচালিত সরকারঃ Government by the people বলতে Seely বুঝিয়েছেন, "government in which everybody has a share." Mill বলেছেন, "Admission of all to a share of the sovereign power of the state." কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন শাসনব্যবস্থাতেই সকলে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করতে পারে না এমন বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালিত হয়ে থাকে।

লর্ড ব্রাইসের ধারণাঃ লর্ড ব্রাইসের ধারণায় প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থায় শাসনক্ষমতা সম্প্রদায়ের সকলের হাতে থাকলেও কার্যক্ষেত্রে এটি সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনে পরিণত হয়। কারণ তাদের সবকিছু প্রকাশ হয় ভােটাধিকারের মাধ্যমে। গণতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের ভিত্তি হলাে শাসিতের সম্মতি।

বাস্তবতাঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছাড়া গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম সম্ভব নয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবেই এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্রের কথা। সেখানে জনগণের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়ে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে যেখানে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। সুতরাং বলা যায়, গণতন্ত্র জনগণের সরকার নয়, জনগণ কর্তৃক পরিচালিত হয় না।

আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যায় যে, সেখানকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সরকার পরিচালনা করে থাকে। তাই সেখানে ভােট সংখ্যার শতকরা হার ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ সামাজিক স্বাধীনতা থাকলেও স্বাধীনতা রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে হরণ করে।

তৃতীয় বিশ্বের গণতান্ত্রিক সরকারগুলাের দিকে তাকালে দেখতে পাই যে, এখানে অনেক সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় না এসে অভ্যুত্থান বা অন্য কোন অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রের মুখােশ পরে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ও জয়লাভের জন্য নিশ্চিত থাকে। এখানে জনগণ সুষ্ঠুভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না এমনকি এসব ক্ষেত্রে অস্ত্রবাজিও চলে। যেমন- স্বাধীনতা মুখর বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট পাকিস্তান। কাজেই এ ধরনের শাসনব্যবস্থাকে জনগণের দ্বারা পরিচালিত সরকার বলা যায় না।

গণতন্ত্র জনগণের দ্বারা নয়ঃ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাম্য ছাড়াও ১. আইনের দৃষ্টিতে সাম্য ২. ভােটাধিকারের ক্ষমতা; ৩. নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিনিধি নির্বাচন; ৪. সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের প্রবর্তন; ৫. রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলাে যে শাসনব্যবস্থায় থাকে না তাকে অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করা হয়। এদিক থেকে বলা যায় যে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্র জনকল্যাণ ও শাসকবর্গের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হলেও উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলাে প্রায় ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত থাকে।

শিক্ষাক্ষেত্রে যে স্বাধীনতা তা অনেক পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাম্য করা হয় না। এক্ষেত্রে প্রকার তাদের নিজেদের অনুকূলে শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি করে বিভিন্ন শ্রেণির সৃষ্টি করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলাে তার একটি উদাহরণ।

আবার গণমাধ্যমগুলাের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, যেখানে প্রচার যন্ত্র হওয়া উচিত জনগণের ইচ্ছামতাে তাদের স্বার্থে পরিচালিত। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায়, পুঁজিপতিরা নিজেদের শ্রেণির প্রতিকূলে নির্বাচন ছাড়াও অন্যান্য সকল কাজে প্রচার যন্ত্রকে কাজে লাগায়। উপযুক্ত এসব দেশে পার্শ্ববর্তী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মাধ্যমগুলাের প্রচার নির্দিষ্ট করে দেয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ভয়ে।
সুতরাং বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, যারা প্রতিনিধি হিসেবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হন তারা প্রকৃত ভূমিকা গ্রহণ করেন নি; অতঃপর তা কোন ক্ষেত্রেই জনগণ দ্বারা পরিচালিত নয়।

সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে লিংকনের সংজ্ঞার ব্যাখ্যাঃ সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে লিংকনের সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণের পূর্বে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র সম্পর্কে বিশ্লেষণের প্রয়ােজন।

মার্কসবাদ ও লেনিনবাদ আলােচনার উপর ভিত্তি করে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। মার্কসীয় অনুসারে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র হলাে পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে সাম্যবাদে উত্তরণের এক অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়। যেখানে ব্যক্তি কর্তক ব্যক্তি শােষিত হয় না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সাম্য না থাকার ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্য অতি সহজেই প্রতিষ্ঠিত এরূপ গণতন্ত্রের সমর্থকেরা মনে করেন যে, শাসনব্যবস্থার রূপ হিসেবে গণতন্ত্র কখনই সাফল্যমণ্ডিত হতে পারে না। যদি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকে। বৈষম্যমূলক সাম্য ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র শ্রেণি কখনই রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না। কার্যক্ষেত্রে এরূপ গণতন্ত্র ব্যক্তির শাসনে রূপ গৃহীত হয়। সুতরাং বলা যায় যে, সমাজে যে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বর্তমান তা কখনাে প্রকৃত বা আদৌ গণতন্ত্র নয়।

গণতন্ত্র হলাে একটি শ্রেণিভিত্তিক ধারণা। মার্কসবাদীদের বিশ্লেষণ বাস্তবাদী ব্যাখ্যা সাপেক্ষে একথা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেছেন যে, কোন কারণেই শ্রেণি চরিত্রহীন অর্থাৎ নির্ভেজাল গণতন্ত্র বলে কোনকিছুর অধিকার অতীতে ছিল না বর্তমানেও নেই।

উপসংহারঃ উপযুক্ত আলােচনা শেষে বলা যায় যে, লিংকনের সংজ্ঞাটি কিছুটা বাস্তবতা বিবর্জিত হলেও পুরােপুরিভাবে অকার্যকর নয়। কারণ গণতন্ত্রে অজ্ঞতা, স্থিতিশীলতা দীর্ঘসূত্রিতা, রক্ষণশীলতা, দলীয় কোন্দল ইত্যাদি দেখা গেলেও জনসম্মতি, দায়িত্বশীলতা, স্বাধীনতা, সাম্য, মতামত, জ্ঞানের অধিকার ইত্যাদি কেবলমাত্র গণতন্ত্রেই দেখা যায়। সুতরাং এখনও এমন অনেক গণতান্ত্রিক দেশ রয়েছে যেখানে লিংকনের এ সংজ্ঞার সত্যতা আছে। গণতন্ত্রের বিভিন্ন শর্ত পূরণ করলে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক