সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণসমূহ লিখ


প্রশ্নঃ সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণসমূহ লিখ।
অথবা, সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণসমূহ বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ সংস্কৃতি ও সভ্যতা শব্দ দু’টিকে অনেক সময় সমার্থক শব্দরূপে ব্যবহার করা হয় যদিও এদের সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা চলে না। নৃ-তত্ত্ববিদগণ সংস্কৃতি শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। তাদের মতে জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, নৈতিকতা, আচার-ব্যবহার এবং সমাজের সভ্য হিসেবে মানুষের অর্জিত অভ্যাস ও কর্মক্ষমতা সবই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সভ্যতা বলতে তারা বুঝেন মনুষ্য সমাজের উন্নত স্তরে, শহরে এবং রাষ্ট্রে মানুষের যে কর্মকুশলতার আবির্ভাব ঘটেছে তার সমষ্টি, কোনাে কোনাে লেখক মনে করেন, মানুষের আচরণের দুটি দিক রয়েছে একটি সংস্কৃতি যা আচরণের ভেতরের দিক, অন্যদিক হচ্ছে আচরণের বাইরের দিক, যা সভ্যতা নামে অভিহিত করা হয়।

সিন্ধু সভ্যতা পতনের কারণসমূহঃ নিম্নে সিন্ধু সভ্যতা পতনের কারণগুলাে তুলে ধরা হলাে-

(১) সামগ্রিক জলবায়ুতে পরিবর্তনঃ সাধারণ প্রাকৃতিক কারণেই জলবায়ুতে পরিবর্তন সংঘটিত হয়ে থাকে। তা ছাড়া সিন্ধু উপত্যকা সংকীর্ণ হওয়ায় এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই বেশি ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার জন্য এখানকার বন-জঙ্গল পরিষ্কার হয়ে যায় এবং মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার ফলে কৃষির ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। আর কৃষির ওপর ভিত্তি করে যেহেতু সিন্ধু সভ্যতা টিকে ছিল যার ফলে সিন্ধু অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে।

(২) বনভূমি ধ্বংসঃ তৎকালীন সময়ে যে নিদর্শনগুলাে পাওয়া যায় তা থেকে বুঝা যায় যে, একসময় সিন্ধু সভ্যতায় অনেক বনভূমি ছিল। কিন্তু তৎকালীন সময়ে এর প্রসার উদ্ভব এবং পােড়া মাটির ব্যবহারের ফলে বনভূমির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বনভূমি উজাড় করে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করা হয়। যার ফলে বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ায় কৃষি কাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যা সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে।

(৩) প্রাকৃতিক পরিবর্তনঃ নদীপথের গতিপথ পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক একটি বিষয়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের অন্যতম কারণ ছিল এই নদীপথের গতি পরিবর্তন। এ সম্পর্কে আরল স্টাইন-এর উক্তিটি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, “তাম্রযুগ থেকে সিন্ধুর উপত্যকা ক্রামন্বয়ে স্বল্প হতে শুরু করে এবং কৃষিজমির উপরিভাগ সাদা, শুষ্ক এবং ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

(8) প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধিঃ সাধারণত কোনাে অঞ্চলে যদি ভূ-প্রকৃতিগত এবং জলবায়ুগত পরিবর্তন। সংগঠিত হয় তাহলে সে অঞ্চলে স্বাভাবিক কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বেড়ে যায়। সিন্ধু নদে ব্যাপক পলি জমাট হওয়ার কারণে সেখানে প্রায় বন্যা দেখা দিত। আমরা যদি মহেঞ্জোদারাে ও চানাহুদারা শহর দু’টির ধ্বংসাবশেষ বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যায় যে, এই শহর দু’টি বহুবার নানা কারণে প্লাবিত হয়েছে।

(৫) অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টিঃ সিন্ধু সভ্যতা আকস্মিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এটা বলা যায় না। বরং দীর্ঘ সময় ধরে এ সভ্যতার ধ্বংস প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। এ সভ্যতার ব্যাপকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বৃহৎ অট্টালিকার জায়গায় বাসস্থানগুলাে সংস্কুচিত হয়ে যায়। এমনকি জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থান রাজপথের ওপরও চলে আসে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পৃথিবীতে যত সৃষ্টি রয়েছে তার প্রতিটির ধ্বংসও অনিবার্য প্রক্রিয়া-এর ব্যতিক্রম সভ্যতার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। সিন্ধু সভ্যতা এক সময় বিকাশ লাভ করেছিল এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারেই এতে কোনাে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে সঠিক কোনাে কারণে এর বিলুপ্তসাধন হয়েছিল তা নিয়ে এখনও রহস্য রয়ে গেছে। এমনকি ঐতিহাসিকরা এখনও এর কারণ অনুসন্ধানে ব্যস্ত রয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক