অথবা, যন্ত্রবাদ ও প্রাণবাদের মধ্যকার কিছু বৈসাদৃশ্যমূলক পার্থক্য নির্ণয় কর।
ভূমিকাঃ পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার। এ বিষয়টি দার্শনিক, বিজ্ঞানী, ধর্মতত্ত্ববিদ; এক কথায় প্রতিটি বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রতিটি এক সৃষ্টিবাদী ধর্মে বলা হয়ে থাকে যে, স্রষ্টা নিছক শূন্য থেকে অথবা পূর্বস্থিত কোনাে জড়পদার্থ থেকে প্রাণ সৃষ্টি করেছেন। কিছু কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, জড় থেকেই প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে। এখন কথা হলাে প্রাণ কী? সাধারণত প্রাণ বলতে এক ধরনের শক্তি বােঝায় যা জড়দেহকে কেন্দ্র করেই বিদ্যমান। এটি জীবদেহের বিভিন্ন অংশের সামঞ্জস্য বিধান করে সন্তানসন্ততি উৎপাদনের মাধ্যমে স্বীয় বংশ রক্ষা করে।
যন্ত্রবাদ ও প্রাণবাদের পার্থক্যঃ এতক্ষণ আমরা যন্ত্রবাদ এবং প্রাণবাদ আলােচনা করলাম, এখন আমরা এদের মধ্যকার পার্থক্য আলােচনা করব।
(১) যন্ত্র মানুষের সৃষ্টি আর প্রাণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিঃ মানুষ বুদ্ধির সাহায্যে যন্ত্র আবির করতে পারে। কিন্তু বুদ্ধির সাহায্যে জীব বা প্রাণ সৃষ্টি করতে পারে না। প্রাণ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়।
(২) যন্ত্র স্থানান্তরযােগ্য কিন্তু প্রাণ স্থানান্তরযােগ্য নয়ঃ যন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে আবার যথাস্থানে লাগালে যন্ত্রটি আবার পূর্ণাঙ্গ হয়, কিন্তু প্রাণ বা জীবের কোনো কোনাে অংশ এভাবে লাগানাে বা স্থানান্তর করা যায় না।
(৩) যন্ত্র উদ্দেশ্যহীন, প্রাণ উদ্দেশ্যপ্রণােদিতঃ যন্ত্রের নিজস্ব কোনাে উদ্দেশ্য নেই, লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতনতাও নেই। যন্ত্র অন্যের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্রাণের নিজস্ব উদ্দেশ্য আছে। প্রাণের বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে সে উদ্দেশ্য সাধন করে।
(৪) যন্ত্র বংশবিস্তার করতে পারে না, জীব পারেঃ যন্ত্রের এমন কোনাে ক্ষমতা নেই যার দ্বারা সে বংশবৃদ্ধি করতে পারবে। কিন্তু প্রাণের বা জীবের এ ক্ষমতা বিদ্যমান। এবং এ ক্ষমতাবলেই আজকের পথিবীতে আমরা বিচরণ করছি।
(৫) যন্ত্রের মৃত্যু নেই, প্রাণের আছেঃ যন্ত্রের নিজস্ব কোনাে মৌলিক শক্তি নেই বা প্রাণও নেই তাই তার মৃত্যুও নেই। কিন্তু প্রাণের জন্মও আছে আবার মৃত্যুও আছে, কেননা প্রাণের মধ্যে মৌলিক গুণাবলি বিদ্যমান।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাণ এবং যন্ত্র আলাদা শক্তি। প্রাণের মধ্যে যন্ত্রের কোনাে অস্তিত্ব নেই, আবার যন্ত্রের মধ্যেও প্রাণের কোনাে অস্তিত্ব নেই। উভয়ই সম্পূর্ণ আলাদা।
0 মন্তব্যসমূহ