ভূমিকাঃ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় মানুষের পারদর্শিতা ও ঐক্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে স্থায়ী বসতি বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ও পরিবর্তনের মাধ্যমে সভ্যতার আবির্ভাব হয়। প্রাচীন সভ্যতাগুলাে প্রকৃতির আশীর্বাদ নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠেছে। এমনি নদী তীরবতী সভ্যতাসমূহের অন্যতম একটি সভ্যতা হলাে সিন্ধু সভ্যতা। নব্য প্রস্তর যুগে নীল নদের তীরে যেমন মিশরীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে তেমনি সিন্ধু নদের তীরে প্রাচীন মানুষের সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতা গড়ে ওঠে। এটা মিশরীয় সভ্যতার সমসাময়িক সভ্যতা।
(১) রাস্তাঃ দুই নগরের রাস্তাগুলােই ছিল সােজা। প্রধান সড়ক ৩৫ ফুট চওড়া ছিল। সবচেয়ে অপরিসর রাস্তা ছিল ১০ ফুট প্রশস্ত। ছােট ছােট গলিপথ ছিল ৫ ফুট চওড়া। সব ধরনের রাস্তা সর্বত্রই একই মাপের প্রশস্ত হতাে। সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানাের জন্য রাস্তার প্রান্তসীমার বাড়িগুলাে বৃত্তাকারে তৈরি করা হতাে।
(২) পানি সরবরাহঃ হরপ্পা ও মহেনজোদারাে শহরের শাসকবৃন্দ নগরবাসীদের পানি সরবরাহের জন্য পথের ধারে কূপ খনন করতাে। অনেক বাড়ির ওঠোনের সামনেও কূপ ছিল।
(৩) পয়ঃপ্রণালীঃ নগর পরিকল্পনাকারীরা নগরজীবনকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মাটির নিচে সুরক্ষিত পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাধারণ এবং ব্যক্তিগত পয়ঃপ্রণালীর অস্তিত্ব ছিল। নগরায়ণের এই আধুনিক ধারণা অন্যকোনাে প্রাচীন সভ্যতায় দেখা যায়নি।
(৪) নগর প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাঃ দুই নগরের কর্তৃপক্ষই তাদের নগরে বহিরাক্রমণ রােধ করার জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এ কারণে দুই নগরীরই পশ্চিম প্রান্তে সুরক্ষিত দুর্গ তৈরি করা হয়। দুর্গগুলােতে প্রয়ােজনীয় সৈন্য ও অস্ত্র মজুদ রাখা হতাে।
(৫) স্থাপত্যঃ অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার মতাে সিন্ধু সভ্যতার স্থাপত্যসমূহেও বিশেষত্ব ছিল। নগরবাসীর বিভিন্ন প্রয়ােজনকে সামনে রেখে স্থাপত্য তৈরি হয়েছে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পৃথিবীতে যেসকল সভ্যতা রয়েছে তার মধ্যে সিন্ধু সভ্যতা অন্যতম। বলা হয়ে থাকে প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্যে ভরপুর হরপ্পা ও মহেনজোদারাে ছিল সিন্ধু সভ্যতার প্রাণ। এই শহর দুটির নগর পরিকল্পনা ছিল বিস্ময়কর। অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক এই নগর পরিকল্পনাকে আধুনিক নগর পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাই বলা হয়ে থাকে, সিন্ধু সভ্যতায় যে নগর ছিল তা যেকোনাে সভ্যতার নগরব্যবস্থা থেকে উন্নত।
0 মন্তব্যসমূহ