হিসাবের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর



প্রশ্নঃ হিসাবের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।

১.২৬ হিসাবের বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Account

ভূমিকাঃ হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায় সমজাতীয় লেনদেনের বিবরণী বা তালিকাকে হিসাব বলা হয়। ব্যবসায়ে প্রতিদিন অসংখ্য লেনদেন সংঘটিত হয়। প্রতিটি লেনদেনের ফলে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ ব্যবসায়ের সম্পদ, দায় ও মালিকানা স্বত্ব পরিবর্তিত হয়। দৈনন্দিন লেনদেনের ফলে ব্যবসায়ের সম্পদ, দায় ও মালিকানা স্বত্বের হ্রাস বা বৃদ্ধি শিরােনামের অধীনে যে সংক্ষিপ্ত বিবরণী বা ছক তৈরি করা হয় তাকে হিসাব বলা হয়

হিসাবের বৈশিষ্ট্যঃ নিম্নে হিসাবের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলাে—

১. নির্দিষ্ট শিরােনামঃ প্রতিটি হিসাবের একটি পৃথক ও উপযুক্ত শিরােনাম থাকবে। যেমন— ক্রয় খাতের জন্য ক্রয় হিসাব; বিক্রয় আয়ের জন্যে বিক্রয় হিসাব; বেতন খাতের জন্যে বেতন হিসাব; অফিসের চেয়ার, টেবিল, আলমিরা, র‍্যাক, সিন্ধুক ইত্যাদির জন্যে আসবাবপত্র হিসাব এবং অফিসের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত খাতা, কাগজ, কলম ইত্যাদির জন্যে মনিহারি হিসাব ইত্যাদি।

২. হিসাব কোডঃ বর্তমানে আধুনিক হিসাব ব্যবস্থায় সহজ ও সুষ্ঠুভাবে হিসাব লিপিবদ্ধকরণ এবং এর ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে প্রতিটি হিসাবের জন্যে একটি কোড ব্যবহার করা হয়। এর ফলে সহজেই হিসাব চিহ্নিত করা যায় এবং লেনদেন হিসাবভুক্ত করা যায়।

৩. নির্দিষ্ট ছক বা কাঠামােঃ প্রতিষ্ঠানের সব হিসাবসমূহের জন্যে একটি নির্দিষ্ট ছক বা কাঠামাে থাকে। সাধারণত বাস্তবে হিসাবের দুটি ছক বা কাঠামাে ব্যবহার হয়ে থাকে। যথা: i. সনাতন বা T ছক ও ii. আধুনিক ছক বা চলমান জের ছক।

৪. দুটি পক্ষঃ হিসাবের কাঠামাে যাই হােক না কেন প্রতিটি হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নামে দু'টি দিক/কলাম থাকবে। সনাতন পদ্ধতির হিসাব ছক অর্থাৎ T ছকে হিসাবকে সমান দুটি ভাগে ভাগ করে বাম দিককে বলা হয় ডেবিট দিক এবং ডান দিককে বলা হয় ক্রেডিট দিক। এরূপ ছক থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর উদ্বৃত্ত বের করা হয়। অপরদিকে বাস্তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বহুল ব্যবহৃত হিসাব ছক হল চলমান জের হিসাব ছক যেখানে ডেবিট, ক্রেডিট ও উদ্বৃত্ত নামে পর পর তিনটি বা চারটি টাকার কলাম থাকে। এ জাতীয় হিসাব থেকে প্রতিটি লেনদেন হিসাবভুক্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট হিসাবের উদ্বৃত্ত জানা যায়।

৫. তারিখঃ প্রতিটি হিসাবের তারিখ অনুযায়ী লেনদেনের সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ হিসাবভুক্ত করতে হয়।

৬. দ্বৈত সত্তার প্রতিফলনঃ লেনদেনগুলাে হিসাবে লিপিবদ্ধ করতে দ্বৈতসত্তা অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ লেনদেনের দুটি পক্ষ নির্ণয়ের পর খতিয়ানের একটি হিসাবে ‘ডেবিট’ এবং অন্য হিসাবে ক্রেডিট করতে হয়।

৭. জেরটানা ও ফলাফল নির্ণয়ঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তে প্রতিটি হিসাবের জের টানা হয় এবং উদ্বৃত্ত বের করা হয়। ডেবিট দিক বড় হলে ডেবিট উদ্বৃত্ত এবং ক্রেডিট দিক বড় হলে ক্রেডিট উদ্বৃত্ত বলা হয়। এভাবে প্রতিটি হিসাবের ফলাফল একটি নির্দিষ্ট সময় পর জানা যায়। যেমন- বেতন হিসাব থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে বেতন বাবদ খরচ জানা যায়, বিক্রয় হিসাব থেকে জানা যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রয়লব্দ আয়ের পরিমাণ ইত্যাদি। উল্লেখ্য চলমান জের হিসাব কাঠামােতে লেনদেন হিসাবভুক্ত হওয়ার পর পরই সংশ্লিষ্ট হিসাবসমূহের উদ্বৃত্ত জানা যায়।

৮. রেফারেন্সঃ প্রতিটি হিসাবের একটি রেফারেন্স কলাম থাকে। এর মাধ্যমে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট লেনদেনটি প্রাথমিকভাবে অর্থাৎ জাবেদা বহির কোথায় কত পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং তদানুযায়ী উহার প্রামাণ্য দলিলসমূহ ও খুঁজে পাওয়া যায়।

৯. হিসাবের সমাপনী জেরঃ আয়-ব্যয়বাচক হিসাবসমূহের জের বিশদ আয় বিবরণীতে স্থানান্তর করে হিসাব বন্ধ করা হয়। অর্থাৎ এ জাতীয় হিসাবসমূহের জের পরবর্তী বছরে নেয়া হয় না। কিন্তু সম্পদ, দায় ও মালিকানাস্বত্ব জাতীয় হিসাবসমূহের জের পরবর্তী বছরে নেয়া হয় অর্থাৎ এ হিসাবসমূহ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয় না। হিসাবকালের শেষে শুধুমাত্র উদ্বৃত্ত জানার জন্যে জের টানা হয়।

১০. সমাপ্তি রেখাঃ একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর হিসাব এর জের বের করে সমাপ্তি রেখা টেনে ঐ সময়ের জন্য হিসাব বন্ধ করা হয়।

উপসংহারঃ লেনদেনসমূহ নির্দিষ্ট শিরােনামের অধীনে ডেবিট ও ক্রেডিট অনুযায়ী অতি সংক্ষিপ্ত আকারে লিপিবদ্ধ করাকে হিসাব বলে। খতিয়ানের ক্ষুদ্রতম অংশ হলাে হিসাব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক