অথবা, গণতন্ত্রের সফলতার জন্য শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতা একান্ত অপরিহার্য- ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ সরকার হচ্ছে রাষ্ট্রের পরিচালকমণ্ডলী এবং এর মাধ্যমেই রাষ্ট্রের ইচ্ছা প্রকাশিত ও কার্যে পরিণত হয়। সরকার যে তিনটি অঙ্গসংস্থার সমন্বয়ে গঠিত শাসন বিভাগ হচ্ছে তন্মধ্যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য শাসন বিভাগের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। সরকারের যে বিভাগ প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে অর্থাৎ যে বিভাগ আইন বলবৎ করে তাকেই শাসন বিভাগ বলা হয়। বর্তমান কালে সকল রাষ্ট্রেই শাসন বিভাগের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রিত ও জবাবদিহিমূলক করতে না পারলে গণতন্ত্র অর্থহীনঃ বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই শাসন বিভাগের ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দিক লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে, সকল ধরনের সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগের ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইংল্যান্ডের ন্যায় সংসদীয় গণতন্ত্রেও শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেকেই ক্যাবিনেট একনায়কত্বের অভিযােগ করেছেন। বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সময়ে শাসন বিভাগের ক্ষমতা এতই প্রসারিত হয়েছে যে, একে নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহি করা আবশ্যক। বর্তমান জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কার্যাবলি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সম্পাদনের দায়িত্ব শাসন বিভাগের উপরে এসে পড়েছে। আর এসব কার্যাবলি শাসন বিভাগকে অধিক ক্ষমতাশালী হতে সহায়তা করেছে।
মূল্যায়নঃ আইনসভার নির্বাচিত অংশ আইন প্রণয়নে এবং অন্যান্য কাজে যথার্থ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই তাদেরকে শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। ফলে নির্বাচিত হওয়ার পরও নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা সম্পূর্ণভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে গণতন্ত্র ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ গণতন্ত্রায়ন তাকেই বলে যেখানে দেশের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ তাদের নিজ নিজ গণ্ডিতে কার্য নিষ্পন্ন করতে পারবে।
তবে বর্তমানে শাসন বিভাগের উপর অধিক আস্থাশীলতা আইন বিভাগকে দুর্বল করে তুলছে। তাই এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে আইন বিভাগ তার কার্যসম্পাদনে যথার্থ সুযােগ সুবিধা পায় এবং শাসন বিভাগকে আইনগত নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা যায়। শাসন বিভাগকে তাদের কার্যাবলির জন্য আইনসভার নিকট দায়িত্বশীল থাকতে হবে। নতুবা গণতন্ত্র নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান কালে শাসন বিভাগের ক্ষমতা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ ক্ষমতা যাতে গণতন্ত্রকে বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্য শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহি করার রেওয়াজ প্রচলন করতে হবে। শাসন বিভাগকে তাদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আইনসভার নির্বাচিত অংশকে কাজ করার যথাযথ সুযােগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। ফলে আইন ও শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
0 মন্তব্যসমূহ