আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা দাও। এর ভিত্তি আলোচনা কর


প্রশ্নঃ 
আন্তর্জাতিক আইন কাকে বলে? এর ভিত্তি কি? 

অথবা, আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা দাও। 

অথবা, আন্তর্জাতিক আইন বলতে কী বুঝ? 

ভূমিকাঃ শান্তি চায় না এমন কোন মানুষ বা জাতি নেই। সকল জাতি ও সকল মানুষের একান্ত কাম্য হলাে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তারপরও বিভিন্ন কারণে যুদ্ধ-বিগ্রহ আরম্ভ হয়। ইতিমধ্যে দু'টি বিশ্বযুদ্ধও অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতিসংঘ। প্রতিষ্ঠার পর জাতিসংঘ ঘােষণা করে যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রের বৈধতা বা আচার আচরণের মাপকাঠি হবে আন্তর্জাতিক আইন।

আন্তর্জাতিক আইন (International Law) কাকে বলেঃ 
বিভিন্ন আইনবিদগণ আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন।

অধ্যাপক ওপেনহাম এর মতে, আন্তর্জাতিক আইন বলতে প্রথাযুক্ত আইনের সমষ্টি ও সন্ধির সমষ্টিকে বােঝায় যার ভিত্তিতে সভ্য দেশগুলাের পারস্পরিক কাজে আইনগত বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করে।

অধ্যাপক হল এর মতে, আন্তর্জাতিক আইন বলতে এমন কিছু নিয়মাবলীকে বােঝায় যা আধুনিক রাষ্ট্রসমূহ তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে অবশ্য পালনীয় বলে গ্রহণ করে। সুতরাং বলা যায়, ন্যায়-নীতি ও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে আইন প্রয়ােগ করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে।

আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিঃ 
আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তি মূলত দুইটি নীতি বা মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। (১) মৌলিক অধিকার বিষয়ক মতবাদ, (২) সম্মতিমূলক মতবাদ।

(১) মৌলিক অধিকার বিষয়ক মতবাদঃ প্রত্যেকটি মানুষ জন্মগতভাবে কিছু অধিকার ভােগ করে। আবার প্রত্যেকটি রাষ্ট্রও কিছু সহজাত অধিকার ভােগ করে। যেমন- স্বাধীনতা রক্ষা করা, বহিঃশত্রুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা, নিজেদের আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা ইত্যাদি। আলােচ্য মতবাদ অনুযায়ী এই সকল সহজাত অধিকার থেকে আইনের উৎপত্তি। অর্থাৎ আইন থেকে এই সকল অধিকারের উৎপত্তি হয় নি। রাজনৈতিক শূন্যতার উপর ভিত্তি করে আইন তৈরি হয় না। তবে রাষ্ট্রের দ্বারা আইন উপস্থাপিত হয়।

(২) সম্মতিমূলক মতবাদঃ সম্মতিমূলক মতবাদে যারা বিশ্বাস করেন তাদের ধারণা সম্মতি হলাে আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যতামূলক ভিত্তি। যেমন-

অধ্যাপক হল এর মতে, আধুনিক রাষ্ট্রগুলি তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে যে সকল আচরণ অবশ্য পালনীয় মনে করে তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে।

অধ্যাপক ওপেহাম এর মতে, রাষ্ট্রসমূহকে যে সকল পারস্পরিক আদান-প্রদান মেনে চলতে হয় আন্তর্জাতিক আইন হলাে সেই সকল প্রথাভিত্তিক নিয়ম। এই মতবাদীরা মনে করেন, রাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া আন্তর্জাতিক আইন হতে পারে না। আবার অনেকে এই মতবাদ সঠিক বলে মনে করেন না। এই শ্রেণির মতে রাষ্ট্রর সম্মতি থাক বা থাক আন্তর্জাতিক আইন সকল সভ্য রাষ্ট্রের জন্য প্রযােজ্য।

উপসংহারঃ আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন বিষয় পর্যালােচনা করে বলা যায়, রাষ্ট্র হলাে আন্তর্জাতিক আইনে প্রথম বিষয়বস্তু। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোন ব্যক্তিকেও আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে গণ্য করা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক