উপস্থাপনাঃ উপমহাদেশের শাসন ক্ষমতায় ব্রিটিশদের অনুপ্রবেশ এ দেশের স্বদেশপ্রেমী জনগণ মেনে নিতে পারেননি। এ কারণেই এ দেশে সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী বিভিন্ন আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। সৈয়দ আহমদ বেরলভীর আযাদী আন্দোলন এ ধাপেরই একটি প্রতিরােধমূলক আন্দোলন। স্বদেশ ও স্বজাতিকে ইংরেজ শাসনের কবল থেকে মুক্ত করে একটি আদর্শ রাষ্ট্রীয় কাঠামাে উপহার দেয়ার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
সৈয়দ আহমদ বেরলভীর পরিচয়ঃ সৈয়দ আহমদ বেরলভী ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে যুক্ত প্রদেশের রায়বেরেলী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কুরআন, হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। অতঃপর তিনি ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে হজ্জ পালন করার উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করেন। সেখানে তিনি দু’বছর অবস্থানকালে মুহাম্মদী মতবাদের সংস্পর্শে এসে এর সঞ্জীবনী ভাবধারা গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি আরবের সুপ্রসিদ্ধ আলেমগণের সাথে বহু আলাপ আলােচনার সুযােগ পেয়েছিলেন।
সৈয়দ আহমদ বেরলভীর অবদানঃ সৈয়দ আহমদ বেরলভী ছিলেন আযাদী আন্দোলনের অগ্রনায়ক। পবিত্র মক্কা থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি নবােদ্দীপনা ও উৎসাহের সাথে মুসলিম সমাজের সেবায় আত্মােৎসর্গ করেন। তিনি দুটি লক্ষ্য সামনে রেখে তার সংস্কার আন্দোলন পরিচালিত করেছিলেন। যেমন-
ক. অনৈসলামিক কুসংস্কার অনাচার দূর করে মুসলমানদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবন উন্নত করা।
খ. ভারত থেকে ইংরেজদের তাড়িয়ে পুনরায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্য অর্জনে তার ভূমিকা ছিল নিম্নরূপ-
১. সৈয়দ আহমদ বেরলভীর আযাদী আন্দোলনঃ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মুক্তি সংগ্রামের আহ্বানে মুসলমানগণ দলে দলে তার শিষ্যত্ব গ্রহণে এগিয়ে আসেন। তিনি প্রথমে পাটনা শহরে তার আন্দোলনের মূল কেন্দ্র স্থাপন করেন। পরে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের সিত্তানা নামক স্থানে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে আযাদী আন্দোলনকে বেগবান করেন।
২. শিখবিরােধী অভিযানঃ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর নেতৃত্বে পরিচালিত মুসলমানদের দুর্বার আন্দোলনের মুখে ইংরেজরা যখন দিশেহারা হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই পাঞ্জাবে শিখ রাজা রণজিৎ সিং ইংরেজদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। এ সংবাদ অবগত হয়ে সৈয়দ আহমদ বেরলভী তার শিষ্যদের নিয়ে শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হন।
৩. বালাকোটে শাহাদাতবরণঃ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর ইচ্ছা ছিল শিখ রাজ্য ধ্বংস করে ইংরেজদের রাজ্যে আক্রমণ করা, কিন্তু ১৮৩১ সালে বালাকোটের যুদ্ধে সৈয়দ আহমদ বেরলভী এবং তার বহু অনুগামী শাহাদাতবরণ করেন। সৈয়দ আহমদ বেরলভীর শাহাদাতের পর তার অনুগামীরা সৈয়দ ওমর শাহের নেতৃত্বে শিখদের বিরুদ্ধে জেহাদ অব্যাহত রাখেন, কিন্তু ১৮৪৯ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষের বড়লাট লর্ড ডালহৌসী শিখ রাজ্য জয় করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করায় মুসলমানদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি।
উপসংহারঃ যদিও সৈয়দ আহমদ বেরলভীর স্বপ্ন পূরণ হয়নি, তথাপি সংস্কার আন্দোলন ও শিখবিরােধী আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য তিনি মুসলিম জাতিকে যে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন, তা জগৎ বিলয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানদের অন্তরে অম্লান হয়ে থাকবে।
0 মন্তব্যসমূহ