অথবা, সমাজ জীবন কিভাবে বংশগতি/জৈবিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত তা লিখ।
ভূমিকাঃ সমাজজীবন কিছু মৌল উপাদান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এই মৌল উপাদান দ্বারাই মূলত সমাজজীবন পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে সমাজজীবন একদিকে যেমন ভৌগােলিক দিক দিয়ে প্রভাবিত হয় তেমনি কখনাে বংশগতি বা জৈবিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
সমাজ জীবনে বংশগতি/জৈবিক উপাদানের প্রভাবঃ নিচে সমাজ জীবনের ওপর এর প্রভাব আলােচনা করা হলাে-
(১) মুদ্ধিমত্তা বিকাশেঃ সমীক্ষায় দেখা গেছে, বুদ্ধিমত্তা (I.Q) উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিদের সন্তান সন্ততি অপেক্ষা অশিক্ষিত ব্যক্তিদের সন্তান-সন্ততিদের অনেক বেশি। সুতরাং এটা প্রমাণিত হয় যে, বংশগতি বুদ্ধিমত্তা নিরূপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(২) সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়ঃ সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ও বংশগতি বিশেষ ভূমিকা রাখে। আদিম সমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসে রক্ত, বংশ এবং জৈবিক নির্বাচন’ এগুলাের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা নিরূপিত হতাে। যেমনঃ গ্রিস ও রােমের অভিজাত ও দাস, পেট্টিসিয়ান ও প্লেবিয়ান ইত্যাদি শ্রেণির মূলে ছিল রক্ত ও বংশগত বিভিন্নতা।
(৪) সামাজিক স্তর বিন্যাসেঃ বংশগতি সামাজিক স্তরায়নে বিশেষ প্রভাব রাখে। সাধারণত রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় বংশ মর্যাদাকেই প্রাধান্য দিয়ে সমাজকে স্তরায়িত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দু সম্প্রদায়ের জাতবর্ণ প্রথা ও সামাজিক শ্রেণি ও স্তরবিন্যাসকে দাঁড় করানাে যায়।
(৫) রাজনীতি চর্চায়ঃ রাজনীতিক ক্ষেত্রেও বংশগতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলাের বাদশাহী শাসনব্যবস্থা এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্রতম দেশগুলাের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বংশগতি বা বংশগত প্রভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
পরিশেষঃ সামগ্রিক আলােচনার শেষে যে বিষয়টি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে তা হলাে, সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানগুলাের মধ্যে কৃৎকৌশল/সংস্কৃতি বা বংশগতির প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ জীবনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তাই উপযুক্ত উপাদান দু’টির ভূমিকা বা প্রভাব বেশ ভালােভাবেই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ