অথবা, দ্বান্দ্বিক জড়বাদ বলতে কী বুঝ?
ভূমিকাঃ দর্শনের জন্মকাল থেকেই জড় সম্পর্কিত আলােচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কেননা জড় হল জাগতিক বস্তুর মূল উপাদান। এই জাগতিক বস্তুর পরিবর্তন সাধিত হতে পারে কিন্তু জড়ে কোন পরিবর্তন সাধিত হয় না। কার্ল মার্কস (১৮১৮-৮৩) দ্বান্দ্বিক জড়বাদের প্রবর্তক। এঙ্গেলস ও লেনিন হলেন তার সমর্থক। স্টালিন, মার্কস, এঙ্গেলস ও লেলিনের প্রধান কথাগুলােকে তার ঐতিহাসিক জড়বাদে বিস্তারিত আলােচনা করেন।
দ্বান্দ্বিক জড়বাদঃ দার্শনিক হেগেলের স্বনামধন্য শিষ্য কার্ল মার্কস দ্বান্দ্বিক জড়বাদের প্রধান প্রবক্তা। প্রাকৃতিক জগৎও সমাজ সম্পর্কে মার্কসের দর্শনে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় বলে মার্কসের দর্শনকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বলা হয়। তিনি এঙ্গেলস-এর সহায়তায় এই মতবাদ ঘােষণা করেন। পরবর্তীকালে দ্বান্দ্বিক জড়বাদের, বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ মডারেশন করা হয়।
দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি দার্শনিক আলােচনার একটি অন্যতম পদ্ধতি। এটি একটি বিশেষ ধরনের যুক্তি বা চিন্তার বিন্যাস, যার মাধ্যমে যথার্থ ও সুনিশ্চিত জ্ঞানলাভ করা হয়ে থাকে। এই মতবাদ অনুসারে জড়ের দ্বান্দ্বিক গতি হল জাগতিক পরিবর্তন অথবা ক্রমােন্নতির একমাত্র কারণ। “প্রকৃতির প্রক্রিয়া হল দ্বান্দ্বিক”-এঙ্গেলস।
দ্বান্দ্বিক জড়বাদের মতে প্রকৃতির আসল রূপের মধ্যে পরিবর্তন নিহিত। বস্তু স্থির বা নিশ্চল নয় বরং চলমান বা গতিশীল। বস্তু দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে অবিরতই উন্নতির পথে এগিয়ে চলে। মার্কস যুক্তি দেখান যে, হেগেলের চিন্তাধারার বিরুদ্ধে বিরূপ মনােভাব প্রকাশ করতে গিয়ে ফয়েরবাক হেগেলের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির অবদান বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলাে স্বপক্ষ ও বিপক্ষ মতবাদের বিরােধের মাধ্যমে অগ্রসর হয়ে সমস্যার সমাধান করা। তবে দ্বান্দ্বিক জড়বাদের দ্বন্দ্ব কথাটির অর্থ হচ্ছে জড়ের সাথে জড়ের দ্বন্দ্ব। একটি জড়কে সদর্থক ধারণা হিসেবে গ্রহণ করলে তার একটি নঞর্থক ধারণা থাকতে বাধ্য। আর এই সদর্থক ও নঞর্থক ধারণার বিরােধিতার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় সমন্বয় অথবা নতুন একটি জড় পদার্থ এবং তার ধারণা এভাবে দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবকিছু ব্যাখ্যা করা যায়। এ পদ্ধতির বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যেও এটি ব্যবহার করা হয়েছে। দার্শনিকগণ সাধারণত দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির দুটি রূপের কথা বলেন। যথা-
(১) নেতিবাচক পদ্ধতিঃ নেতিবাচক পদ্ধতির কাজ হল বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মতবাদ খণ্ডন করা। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস এ মতবাদের ওপর এতই গুরুত্বারােপ করেন যে, এটি সক্রেটিসের পদ্ধতি নামেও পরিচিত।
(২) ইতিবাচক পদ্ধতিঃ অপরপক্ষে ইতিবাচক দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির কাজ হল সংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকৃত সত্তা নিরূপণ করা। এই পদ্ধতিতে হেগেল তার দর্শন আলােচনা করেন।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়,কম-বেশি সব মতবাদেরই ত্রুটি থাকে। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিরও বেশকিছু ত্রুটি পাওয়া যায়। তবুও এ পদ্ধতি কার্ল মার্কস জড়বাদে প্রয়ােগ করে যে দ্বান্দ্বিক জড়বাদ প্রণয়ন করেন, তা আজ সর্বমহলে প্রশংসিত।
0 মন্তব্যসমূহ