কারফিউর ফাঁকে খিজিরসহ মহল্লা থেকে ৫/৭ জন মিছিলে নামে- সে মিছিল দ্রুত লােকে ভরে যায়- কীভাবে?


প্রশ্নঃ কারফিউর ফাঁকে খিজিরসহ মহল্লা থেকে ৫/৭ জন মিছিলে নামে- সে মিছিল দ্রুত লােকে ভরে যায়- কীভাবে?

অথবা, ‘এই এলাকার সবাই জানে’- কী জানে? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসটি। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দুই বছর আগে বিপুল গণঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে সারা দেশ আইয়ুব বিরােধী মিছিল আর মিটিং এ ফেটে পড়ে। মিটিং আর মিছিল আর গুলি বর্ষণ আর কারফু ভাঙা আর গণআদালত সব জায়গায় ফেটে পড়ে ক্ষোভ ও বিদ্রোহ। এমনি এক মিছিলকে ওসমান দেখেছে অন্য চোখে।

সারাদিন কারফিউ- সন্ধ্যায় সামান্য সময়ের জন্য কারফিউ তুলে নিয়েছে পাকিস্তানিরা। এ সময় ওসমান না গেলেও খিজিরসহ ৭/৮ জন পাড়ায় মিছিলে নেমে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে নানা দিক থেকে স্লোগান ভেসে আসছে- জেলের তালা ভাঙব- শেখ মুজিবকে আনব। এত মানুষ কোথেকে আসে- মহল্লার গলি, উপগলি, শাখাগলি থেকে আরাে সব লােক ছুটেছে খিজিরদের সাথে। এবার ওসমান ঠিকই ধরতে পেরেছে- মহল্লার জ্যান্ত মানুষের সাথে ভিড়ে গেছে- ১০০ বছর আগে সাহেবদের হাতে নিহত, সাহেবদের পােষা কুকুর- নবাবদের হাতে নিহত- মিরাটের সেপাই, বেরিলির সেপাই, লক্ষৌ এর মানুষ, ঘােড়াঘাটের মানুষ, লালবাগের মানুষ। ভিক্টোরিয়া পার্কের পাম গাছগুলাের সাথে ফাসিতে লটকানাে সেই সব মানুষ যারা- অমাবস্যায়, পূর্ণিমায়, প্রতিপদে, একাদশীতে- মধ্যরাত্রি হলেই মহল্লাজুড়ে টহল দেয়, শত্রুপক্ষের গুলিগালাজের আওয়াজ শুনে কণ্ঠনালিতে, জিভে ও টাকরায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে, মহল্লা মাত করে জীবিত মানুষের সাথে তারা স্লোগান দেয় মানি না, মানি না। কলতাবাজারের বন্ধগলিটাও মিছিলে যােগ দিয়েছে। অমাবস্যার রাতে, পূর্ণিমার রাতে মুন্ডুহীন সেই সেপাই ছুটে বেড়ায় নবদ্বীপ বসাক লেন, নন্দলাল দত্ত লেন, নাসিরুদ্দিন সর্দার লেন ও পাঁচভাই ঘাট লেন জুড়ে। মুন্ডু নেই। বলে বেচারা শুধু হাত তুলে তুলে স্লোগানে শামিল হচ্ছে। এভাবে মানুষে মিছিল ভরে যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক