অথবা, নৃবিজ্ঞানের শাখাসমূহ আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে নৃবিজ্ঞান অন্যতম। নৃবিজ্ঞানকে মানুষের সামগ্রিক বা পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়ন বলা হয়। এজন্য নৃবিজ্ঞান মানুষকে একদিকে যেমন জীব হিসেবে অধ্যয়ন করে, অন্যদিকে তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীব হিসেবে তার সমাজ ও সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন করে।
নৃবিজ্ঞানের শাখাসমূহঃ মানুষের সামগ্রিক অধ্যয়ন হিসেবে নৃবিজ্ঞানের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। নিম্নে বিস্তারিত আলােচনা করা হলাে–
দৈহিক নৃবিজ্ঞান Physical Anthropology): দৈহিক নৃবিজ্ঞানের কতগুলাে শাখা রয়েছে এগুলাে হলাে-
(১) বিবর্তনধর্মী জীব বিজ্ঞানঃ বিবর্তনধর্মী জীব বিজ্ঞান মানব বিবর্তনের ধারা বিশ্লেষণ করে। এটি আবার দু'ভাগে বিভক্ত। মানব জীবাশ্ম বিজ্ঞান ও প্রাইমেট তত্ত্ব।
(২) মানব জীব বিজ্ঞানঃ মানব জীববিজ্ঞানীরা অতীত মানুষের বিবর্তনের চেয়ে বর্তমান মানুষ সম্পর্কেই প্রধানত গবেষণা করেন। তারা বর্তমানে মানুষের মধ্যে জৈবিক বিভিন্নতার প্রকৃতি এবং বিভিন্নতার মাত্রা নির্ণয় করেন।
(৩) মানবদেহের গঠন তত্ত্বঃ কিভাবে মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ সমন্বিতভাবে দেহের রূপ প্রদান করেছে, সে সম্পর্কে মানব দেহের গঠনতত্ত্ব আলােচনা ও গবেষণা করে। দেহের কাঠামাে ও গঠনই এর প্রধান আলােচ্য বিষয়।
(৪) মানব দেহের পরিমাপ বিদ্যাঃ মানব দেহের বিভিন্ন অংশের আনুপাতিক পরিমাপ ও হিসাব সম্পর্কে মানব দেহের পরিমাপ তত্ত্ব গবেষণা করে।
(খ) সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানঃ কোন জনগােষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক এবং ধর্মীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ঐ ব্যবস্থাবলী সম্পর্কে বিশ্বাস-আচরণ এবং ঐ ব্যবস্থাবলীর আলােকে চলমান জীবন প্রণালী পর্যালােচনাই সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের কতগুলাে শাখা রয়েছে। এগুলাে হলাে-
(১) এথনােগ্রাফীঃ কোন জনগােষ্ঠীর জীবনযাত্রা-প্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত লিখিত বর্ণনাকে এথনােগ্রাফী বলে। এথনােগ্রাফী হচ্ছে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের ভিত। নৃবিজ্ঞানী হােবেল বলেন, এথনােগ্রাফী সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের ভিত্তি প্রস্তর সরবরাহ করে।
(২) প্রত্নতত্ত্বঃ প্রত্নতত্ত্ব হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ ও তার সমাজের বর্ণনা। প্রত্নতত্ত্ব আধুনিক ও প্রাচীন মানুষের সংস্কৃতির ক্রমবিকাশের ধারা বর্ণনা করে। এর মাধ্যমে অতীত সমাজের মানুষের সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
(৩) মানব জাতি তত্ত্বঃ প্রত্নতত্ত্ব যেখানে শেষ মানব জাতিতত্ত্বের সেখানে শুরু। মানুষের সামাজিক প্রক্রিয়া, মানব জাতির উদ্ভব এবং পরিণতি সম্পর্কে মানব জাতিতত্ত্ব আলােচনা করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নৃবিজ্ঞান যেহেতু মানুষের বিজ্ঞান, এজন্য মানুষের দৈহিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক দিক নিয়ে নৃবিজ্ঞান আলােচনা করে। তাই এর শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত হয়ে চলেছে। বর্তমানে নৃবিজ্ঞান আধুনিক সমাজের মানুষ হয়ে চলেছে। বর্তমান নৃবিজ্ঞান আধুনিক সমাজের মানুষ সম্পর্কে পঠন-পাঠন এর শাখাসমূহের আরাে বিস্তৃতি ঘটছে।
0 মন্তব্যসমূহ