নয়া গাঙের দুরন্ত ইতিহাস বর্ণনা কর



প্রশ্নঃ নয়া গাঙের দুরন্ত ইতিহাস বর্ণনা কর।
অথবা, “নদীর রহস্য তারা শুনিয়াও আনন্দ পায়, শুনাইয়াও আনন্দ পায়।”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসের তথ্যমতে তিলকচাঁদ প্রবীণ জেলে- তারই মুখ দিয়ে লেখক প্রকাশ করেছেন নয়া গাঙের দুরন্ত ইতিহাস।

নয়া গাঙ ছিল একদা মেঘনা নদীর খালের অংশ। কিন্তু বর্তমানে সে নিজেই একটা বড় নদী। হঠাৎ-ই একদিন- মেঘনার সেই খালটাতে একটা বড় স্রোতের সৃষ্টি হয়। আর সেই খালের মুখে ধরে সর্বনাশা ভাঙন। ভাঙনের প্রচণ্ডতায় খাল দুই দিকে তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভাঙনের সাথে সাথে তীব্র জলরাশিরও আবির্ভাব ঘটে। হু হু স্রোত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে- মাটির ধস আরাে তীব্র হয়ে ওঠে। মাটি-খেত-প্রান্তর ভেঙে, ছােটো ছােটো পল্লি নিশ্চিহ্ন করে, রাশি রাশি গাছপালা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে সে জলধারা দিনের পর দিন উদ্দাম গতিতে ছুটে চলে। কার সাধ্য তার সে গতিরােধ করা দুর্বার, দুর্মদ, প্রলয়ঙ্কর সে গতিবেগ। চাষিরা অকালে তাদের খেতের ফসল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। অনেক পল্লিবাসীরা ভয়ে বিমূঢ় হয়ে তৈজসপত্র বেঁধেছেদে, গরুবাছুর হাঁকিয়ে পশ্চিমে চলে যায়। কালক্রমে খাল একদা স্বয়ং মেঘনা হতে, প্রশস্ত, অনেক বেগবতী, সমাধিক ভয়ংকরী হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে নয়াগাঙের মােহনায় প্রচুর মাছ ধরা পড়তে থাকে। এ কাহিনি অনেকে জানলেও তিলক আবেগপূর্ণ ভাষায় সবিস্তারে বর্ণনা করে এর কাহিনি। তিলক নদীর এই রহর্স শুনিয়েও আনন্দ পায়, শুনেও আনন্দ পায়।

আসলে নয়াগাঙের উৎপত্তি-পরিণতি জেলেদের কাছে এক ধরনের রােমাঞ্চ; তাই সুযোেগ পেলেই তারা নয়াগাঙের কাহিনি সবিস্তারে বর্ণনা করে আনন্দ লাভ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক