প্রাচীন মিশরীয়দের সামাজ জীবন আলােচনা কর


প্রশ্নঃ প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অধিবাসীদের সমাজ জীবনের বিবরণ দাও।
অথবা, প্রাচীন মিশরীয়দের সামাজ জীবন আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ মিশরীয় সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা। মিশরের নীল নদের অববাহিকায় এই সমৃদ্ধ সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। মানব জাতির ক্রমবিবর্তন, উন্নতি ও উৎকর্ষতার এতাে বড় অবদান মিশরীয় সভ্যতার মত আর কোনাে সভ্যতা রাখতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার পথিকৃত হিসেবে মিশরীয় সভ্যতা এক অনন্য সাধারণ গুরুত্বের দাবিদার। সভ্যতার প্রতিটি শাখায় যেমন; সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় প্রাচীন মিশরীয়গণ এক অভূতপূর্ব অবদান রাখেন।

মিশরীয়দের সমাজ জীবনঃ প্রাচীন মিশরীয় সমাজ পেশাভিত্তিক কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যেমন- (১) রাজপরিবার, (২) পুরােহিত শ্রেণি, (৩) অভিজাত সম্প্রদায়, (৪) ব্যবসায়ী শ্রেণি, (৫) লেখক সমাজ, (৬) শিল্পী এবং (৭) কৃষক ও ভূমিদাস শ্রেণি। এসব পেশাদারদের নিয়ে মূলত পুরাে সমাজ দু'টো শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। সমাজের সর্বোচ্চ স্তরে ছিল শাসক সম্প্রদায় ও রাজপরিবার এবং নিম্নস্তরে ছিল শ্রমজীবীগণ তথা কৃষক ও ভূমিদাস।

সমাজ ব্যবস্থার স্বরূপঃ তকালীন সমাজব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত শিথিল প্রকৃতির। বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে অর্থনৈতিক অবস্থান ও মর্যাদার দিক থেকে বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও যে কোনাে ব্যক্তি তার নিজস্ব মেধা, যােগ্যতা ও কর্মের দ্বারা নিচু শ্রেণি থেকে উঁচু শ্রেণিতে আরােহণ করতে পারত। প্রাচীন মিশরীয় সমাজ পরিবারে বিভক্ত ছিল। পরিবার প্রথায় এক বিবাহ প্রচলিত ছিল। বিবাহিত জীবনে অধিকাংশ পুরুষ একটি স্ত্রীতেই সন্তুষ্ট থাকতাে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ খুব কমই হতাে। তৎকালীন সমাজে মাতৃতান্ত্রিক প্রথা প্রচলিত ছিল। মেয়েরা উচ্চ সামাজিক মর্যাদা ভােগ করতাে।

প্রাচীন মিশরীয় সংস্কৃতিঃ মানব সভ্যতায় মিশরীয়দের সাংস্কৃতিক অবদান অনস্বীকার্য। প্রাক-রাজবংশীয় যুগে মিশরীয়গণ বর্ণভিত্তিক চিত্রলিপির উদ্ভাবন করেন। এ ধারার লিখন পদ্ধতিতে এক একটি চিত্র অক্ষরের বিকল্প হিসেবে মনের ভাব প্রকাশ করত। ধীরে ধীরে এ লিপির মাধ্যমে বিমূর্ত ভাব প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্তভাবে প্রাচীন রাজবংশের যুগে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ২৪টি চিহ্ন ব্যবহার করা হত। প্রত্যেকটি চিহ্ন মানুষের স্বরের এক একটি ব্যঞ্জনধ্বনি প্রকাশ করত। এর ফলে চিত্রভিত্তিক, অক্ষরভিত্তিক এবং বর্ণভিত্তিক এ তিনটি রূপে লিখন পদ্ধতি আত্মপ্রকাশ করেছে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরীয় সভ্যতা মানব সভ্যতার পথিকৃত ও প্রাচীন সভ্যতার শীর্ষে। মিশরীয় সভ্যতা বিশেষত রাষ্ট্র ও সমাজ, ধর্ম এবং সংস্কৃতি অনুকরণ করেনি এমন সমাজ ও সভ্যতার কথা কমই জানা যায়। এ সভ্যতার ব্যাপ্তি ছিল বিশ্বব্যাপী। ইউরােপ ততা সমগ্র বিশ্ব যখন বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখনই আলাের দিশারী হিসেবে মিশরীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক