অথবা, শিক্ষণ বলতে কী বােঝায়?
অথবা, শিক্ষণ কাকে বলে?
অথবা, শিক্ষণের সংজ্ঞা দাও।
ভূমিকাঃ প্রত্যেক সমাজই সুসভ্য মানুষ আশা করে থাকে। কিন্তু মানুষকে সুসভ্য হতে হলে অবশ্যই। তাকে স্বীয় সমাজের অনেক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন বা শিক্ষণের মাধ্যমে জানতে হয়। কেননা, শুধুমাত্র শিক্ষণের মাধ্যমেই একজন সভ্য ও সুশিক্ষিত দায়িত্বপূর্ণ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে। এমনিভাবে সভ্য, সুশিক্ষিত ও পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য তাকে অসংখ্য আচরণ শিক্ষা করতে হয়। শিক্ষণ মানুষের জীবনে একটি অতি প্রয়ােজনীয় ব্যাপার।
শিক্ষণের সংজ্ঞাঃ অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনের ফলে আচরণের যে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তন হয়, তাকে শিক্ষণ বলে। অধিকাংশ মনােবিজ্ঞানীর ধারণা হলাে, শিক্ষণ চেষ্টা ও অভিজ্ঞতার ফলে সৃষ্টি হয়। অনেকে মনে করেন, সাপেক্ষণের ফলে শিক্ষণ সংঘটিত হয়। আবার অনেকের ধারণা হলাে, ব্যক্তি বা প্রাণী তার প্রেরণা পূরণ করতে গিয়ে শিক্ষণ অর্জন করে। এ ধরনের শিক্ষণ পদ্ধতিকে সহায়ক শিক্ষণ পদ্ধতি বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ শিক্ষণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মরগ্যান ও কিং (১৯৭৫) বলেছেন যে, শিক্ষণ হলাে আচরণের যেকোন মােটামুটি স্থায়ী পরিবর্তন, যা অনুশীলন অথবা অভিজ্ঞতার ফলে ঘটে থাকে। তাদের নিজেদের ভাষায়, "Learning can be defined as any relatively permanent change in behavior which occurs as a result of practice or experience" (Morgan and King 1975, Page 97)। এই সংজ্ঞায় শিক্ষণ বলতে অনুশীলন অথবা অভিজ্ঞতার ফলে আচরণের পরিবর্তনকে বুঝানাে হয়েছে।
অন্যদিকে ক্রাইডার ও অন্যান্য (১৯৮৩) যে সংজ্ঞা দিয়েছেন সেটি অপেক্ষাকৃত ব্যাপক। তাদের মতে, অভিজ্ঞতার ফলে অব্যহিত অথবা প্রচ্ছন্ন আচরণে যে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তন সৃষ্টি হয়, তাকেই শিক্ষণ বলে।
উপরের সংজ্ঞা তিনটি বিশ্লেষণ করলে শিক্ষণের কয়েকটি লক্ষণ পরিষ্কার বােঝা যাবে। নিম্নে সেগুলাে দেয়া হলাে-
১। শিক্ষণ হলাে আচরণের পরিবর্তন।
২। এই পরিবর্তন সূচিত হয় অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনের ফলে।
৩। অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনের ফলে আচরণের যে পরিবর্তন সৃষ্টি হলাে সেটি অপেক্ষাকৃত স্থায়ী হতে হবে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, ওপরের বৈশিষ্ট্যগুলাে মূলত আনুষঙ্গিক ঘটনাবলী। তাই একে বৈশিষ্ট্য না বলে আনুষঙ্গিক ঘটনাবলি বলা অপেক্ষাকৃত সমীচীন। এই আনুষঙ্গিক ঘটনাবলির মাধ্যমে শিক্ষণতত্ত্ব অনেকটা সফল হয়েছে। তবে এগুলাের ব্যাখ্যাগত বিষয় নিয়ে মনােবিজ্ঞানে যথেষ্ট জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সম্প্রতি থাইক, স্পিনার ও প্যাভলভ গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব দিয়ে একদিকে যেমন জ্ঞান-ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি অন্যদিকে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ