রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজকল্যাণের সম্পর্ক বর্ণনা কর


প্রশ্নঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজকল্যাণের সম্পর্ক বিস্তারিত বর্ণনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজকল্যাণের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তারিত আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ মানুষের বস্তুগত চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে যেমন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে, তেমনি সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, শাসনক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ও বণ্টন প্রভৃতি বিষয়াদির সমাধানকল্পে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে। যার মৌলিক উপাদান হচ্ছে রাষ্ট্র। জনগণের কল্যাণই এর মূল লক্ষ্য। সমাজকল্যাণও তেমনি মানবকল্যাণে নিবেদিত।

সমাজকল্যাণের সংজ্ঞাঃ সাধারণত সমাজের কল্যাণ করাকে সমাজকল্যাণ বলে। কিন্তু আধুনিক সমাজকল্যাণ বলতে একটি পেশাদার সুসংগঠিত সাহায্য প্রক্রিয়াকে বুঝায়। তবে আধুনিক সমাজকল্যাণকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজকল্যাণের সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজকল্যাণের সংজ্ঞা পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলােচনা করা হলাে-

(১) বিষয়বস্তুগত সম্পর্কঃ যেসব আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজস্থ মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানবিক চাহিদাগুলাে পূরণ হয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলােচনা করে। অন্যদিকে মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদা পূরণ ও সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ ঐসব প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুতরাং দেখা যায় যে, আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠানের আলােচনা সমাজকল্যাণেরও বিষয়বস্তু।

(২) লক্ষ্যগত সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য হলাে নিজ নিজ অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তােলা। অন্যদিকে সমাজকল্যাণও মানুষের অধিকার, ভােগ, চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। এ পর্যায়ে সমাজকল্যাণ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।

(৩) অধিকারগত সম্পর্কঃ সমাজকল্যাণ যেমন মানুষকে তাদের নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সজাগ করে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তােলে, তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানও মানুষকে নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সজাগ করে তােলে। সুতরাং নাগরিক অধিকার ও কর্তব্যের দিক দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজকল্যাণের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

(৪) সমাজ সংস্কারে সম্পর্কঃ এমন অনেক ক্ষতিকর সামাজিক প্রথা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলাে সমাজকল্যাণের পরিপন্থী। এসব ক্ষতিকর প্রথা-প্রতিষ্ঠানের উচ্ছেদ ও সংস্কারের জন্য অনেক সময় আইন প্রণয়ন করতে হয় যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হয়। অর্থাৎ উভয়ই পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।

উভয়ের মধ্যে পার্থক্যঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজকল্যাণের গভীর সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এদের মাঝে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়-

(১) রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষকে রাজনৈতিক জীব হিসেবে গণ্য করে। কিন্তু সমাজকল্যাণ মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে গণ্য করে।

(২) রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি তাত্ত্বিক বিজ্ঞান। রাষ্ট্র ও নাগরিকতা সম্পর্কিত জ্ঞান দান করাই এর কাজ। কিন্তু সমাজকল্যাণ একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান। মানুষের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এটা পরিচালিত।

(৩) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু হলাে মানুষের জীবন ও রাষ্ট্রের কার্যাবলি আলােচনা। কিন্তু সমাজকল্যাণ মানবজীবনের সমগ্র দিক নিয়ে আলােচনা করে।

(৪) রাষ্ট্রবিজ্ঞান জনগণের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন নীতিমালা নিয়ে আলােচনা করে। কিন্তু সমাজকল্যাণ সেসব নীতিকে সেবায় পরিণত করে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজকল্যাণ পরম্পর ঘনিষ্ঠভাবে নির্ভরশীল। কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষকে তাদের বিভিন্ন অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে চায়। এক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সহায়তা করে। অন্যদিকে সমাজকল্যাণ সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণসাধনের প্রচেষ্টা চালায়। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমাজকল্যাণকে রাষ্ট্রীয় কাঠামাে, নীতি, সরকারের ধরন প্রভৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক