উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের আধুনিক ঔপন্যাসিকদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান, সচেতন এবং শক্তিমান শিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। জীবনঘনিষ্ঠ, আধুনিক শিল্পকরণ, তীব্র শৈল্পিক সচেতনা, সংযম, দক্ষতা ও পরিমিতিবােধ তার ঔপন্যাসিক প্রতিভার মূল বৈশিষ্ট্য। জীবন, ব্যক্তি এবং সমাজ-পরিবেশের গ্রন্থিসমূহের উন্মোচনে তিনি ছিলেন সতত পরীক্ষা প্রবণ। তার রচনাতে প্রতিফলিত হয়েছে পরাবাস্তববাদের দর্শন।
‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসে পরাবাস্তববাদঃ জীবনবােধের প্রাগ্রসরতায় ঔপন্যাসিক চাঁদের অমাবস্যায় বিশ্বমনস্ক ও অস্তিত্ববাদী তত্ত্বসংলগ্ন হওয়ায় এ উপন্যাসের অভ্যন্তর পরিচর্যা এবং ভাষাশৈলীতে এসেছে। পরাবাস্তবরীতি যুবক শিক্ষকের সামাজিক অবস্থান, অন্তর্গত সংকট, তার ভয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ দোলাচল মানসিকতায় উপস্থাপিত হয়েছে পরাবাস্তবরীতি। আরেফ আলীর মনােবাস্তবতা বর্ণনাতেও এসেছে ভীতিপ্রবাহী শব্দপুঞ্জ। যেমন-
“তারপর মাটিতে মুখ গুঁজে সে নিস্তেজভাবে পড়ে থাকে। শীঘ্র তার পিঠ শিরশির করে ওঠে। পিঠে সাপ চড়েছে যেন।”
সত্যানুসন্ধান আত্মখননকারী ও বিপন্ন অভিজ্ঞতায় ক্রমসংকুচিত আরেফ আলী সবসময়ই ঔপন্যাসিকের মনঃসংযােগ ও মেধা আকর্ষণ করেছে। ফলে আরেফ আলীর চেতনারবিকাশ ও পরিণতিতেও ব্যবহৃত হয়েছে পরাবাস্তবরীতি। যেমন-
“ওপরে ঝলমলে জ্যোৎস্না, কিন্তু সামনে নদী থেকে কুয়াশা উঠে এসেছে। কুয়াশা না, আর কিছু, হয়তাে সে ঠিক ববাঝে না। হয়তাে একদল সাদা বকরী দেখে, যার শিং-দাঁত-চোখ কিছুই নাই। হয়তাে মনে হয় রাত্রি গা মােড়ামুড়ি দিয়ে উঠে বসেছে, চোখ-ধাঁধানাে অন্তহীন জ্যোত্সালােকে জীবনের আভাস দেখা দিয়েছে।”
সুতরাং উপযুক্ত আলােচনা থেকে বলা যায়- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তার প্রথম উপন্যাস ‘লালসালু’ থেকে পরাবাস্ত ববাদরীতির ব্যবহার করেছেন এবং ধীরে ধীরে তা ক্রমবিকশিত হয়ে ‘চাঁদের অমাবস্যা' উপন্যাসে শিল্পিতরূপ লাভ করেছে। ব্যক্তির অন্তর্জটিলতা, অন্তর্লীন চিন্তা-স্রোতকে সমাজচিন্তার সাথে সমভাবে প্রযুক্ত করে পরাবাস্তবরীতিকে ভিন্নমাত্রা দান করেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ