অথবা, নব্য বাস্তববাদ কি?
ভূমিকাঃ ভাববাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যে মতবাদের আবির্ভাব তার নাম নব্য বাস্তববাদ। জড়বস্তু এবং সময়কে কোন কোন ভাববাদী দার্শনিক অবাস্তব বলেছিলেন। নব্য বাস্তববাদীরা এ মতকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেন। নব্য বাস্তববাদের সার্থক প্রকাশ দেখতে পাই আমরা জি ই মুর-এর দর্শনে। সুতরাং তার মতানুসারে আমরা নব্য বাস্তববাদ আলােচনার চেষ্টা করব।
মুরের নব্য বাস্তববাদঃ মুরের মতে, আমরা সচরাচর যেসব জিনিসকে কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে বাস্তব বলে জানি সেগুলােকে অবাস্তব বলা অসঙ্গত। তার মতে, জগৎসংক্রান্ত কাণ্ডজ্ঞান আমাদের বুদ্ধিপ্রসূত এবং এসব ধারণাবলিও সত্য। এ ছাড়া উচ্চতর দার্শনিক সত্য বলে কিছু নেই। সহজ অভিজ্ঞতা দিয়ে জানা যায় না এমন কোন বিমূর্ত চেতনাতীত সত্তার কথা বলা ঠিক নয়। কারণ তাতে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। কিন্তু দর্শনের কাজ তা নয়। যথার্থ দার্শনিকের কাজ সহজ সরল বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজ বক্তব্য স্পষ্ট করে বলা। মুর ‘ভাববাদ খণ্ডন' নামক একটি বইয়ে তার বাস্তববাদের ব্যাখ্যা দেন। এ বইয়ে তিনি চেতনার ক্রিয়া এবং চেতনার বস্তু এ দুয়ের পার্থক্য নির্দেশ করেন। এবং এ পার্থক্যের আলােকে তিনি বার্কলির আত্মগত ভাববাদ খণ্ডনের প্রয়াস পান। তার মতে, সংবেদনক্রিয়া এবং সংবেদিত বস্তু উভয়ই সংবেদন কথাটির আওতায়। জ্ঞানের বস্তু চেতনক্রিয়া থেকে পৃথক। চেতনার বস্তু সম্পর্কে আমরা যখন সচেতন হই, তখন তা যা থাকে তার সম্পর্কে সচেতন না হলেও তা ঠিক তা-ই থাকে।
নব্য বাস্তববাদের মূল বক্তব্যঃ নব্য বাস্তববাদের প্রবক্তাদের মতে, জ্ঞান দ্বিপদ সম্বন্ধীয় ব্যাপার। যেখানে বাহ্যবস্তু প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞাতার কাছে প্রকাশিত। জ্ঞাতা সাক্ষাৎভাবেই বস্তুকে জানতে পারে, কোন রকম ধারণা বা প্রতীকের প্রয়ােজন হয় না। এদের মতে, জগতে বহু স্বাধীন সত্তাবিশিষ্ট বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান। এমনকি বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে যে সম্বন্ধ দেখা যায়, তা নিছক বাহ্যিক; অভ্যন্তরীণ নয়। এদের মতে, জগতের মূল সত্তা হলাে কতগুলাে নিরপেক্ষ পদার্থ। এসব নিরপেক্ষ পদার্থ দেশ ও কালের গণ্ডির অতীত নির্বিশেষে উপাত্তসম্পন্ন নিত্যপদার্থ। এসব নিত্যপদার্থ দেশ ও কালের সম্পর্কে এবং সর্বোপরি কারণকার্য সম্পর্কে আবদ্ধ হলে অস্তিত্বসম্পন্ন জড় জগৎ রচনা করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, নব্য বাস্তববাদীরা মনে করেন যে বস্তুর মুখ্য গুণ নয়, বস্তুর গৌণ গুণগুলােও বাস্তর। তাদের মতে, রূপ-রস-গন্ধ প্রভৃতি গুণকে আমরা বাস্তবরূপে সরাসরি প্রত্যক্ষ করি। এ গুণগুলাে যেরূপ বাস্তব, তাদের মধ্যস্থিত সম্পর্কও তেমনি বাস্তব। সুতরাং আমরা নব্য বাস্তববাদকে বলতে পারি এমন একটি মতবাদ যা বহুত্ববাদের সমর্থক।
0 মন্তব্যসমূহ