কান্টের বিচারবাদ সম্পর্কে আলোচনা কর


প্রশ্নঃ 
কান্টের বিচারবাদ সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সংক্ষেপে কান্টের বিচারবাদ ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ দর্শনের যে শাখা জ্ঞানের উৎপত্তি, স্বরূপ, শর্তসীমা প্রভৃতি আলােচনা করে, তাকে জ্ঞানবিদ্যা বলে। জ্ঞানের উৎপত্তি কিভাবে হয় এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে কতগুলাে মতবাদ গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিচারবাদ অন্যতম। দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ এদুটি মতবাদকে বিচার-বিশ্লেষণ করে এদের সমন্বয়ে যে নতুন মতবাদ প্রচার করেন, তার নাম কান্টের বিচারবাদ। এ মতবাদ সম্পর্কে নিম্নে আলােচনা করা হলাে-

কান্টের বিচারবাদঃ বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ উভয়ই চরম মতবাদ। বুদ্ধিবাদ বুদ্ধির ওপর এবং অভিজ্ঞতাবাদ অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্বারােপ করে। কান্ট নিজের মতবাদে বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের সমন্বয় সাধন করার চেষ্টা করেছেন। কান্ট দেখালেন যে, জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা উভয়েরই অবদান আছে। কোনােটিকে বাদ দিয়ে জ্ঞান সম্ভব নয়। কান্টের মতে, অন্য বস্তুর মত জ্ঞানেরও দুটি দিক আছে। একটি তার আকার, যা বুদ্ধির কাছে থেকে পাওয়া। আরেকটি উপাদান যা সংবেদন বা-অভিজ্ঞতার কাছ থেকে পাওয়া যায়। কান্ট দেখালেন যে, বুদ্ধি কেবল জ্ঞানের আকার দিতে পারে। আর অভিজ্ঞতা কেবল জ্ঞানের উপাদান দিতে পারে, কিন্তু জ্ঞানের আকার দিতে পারে না। বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের সমন্বয়ে কান্টের বস্তুর দুটি দিক আছে-

অবভাসিক দিকঃ বস্তুটি যেভাবে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, তাকেই বস্তুর অবভাসিক দিক বলা হয়। যেমন-গােলাপ লাল, এই লাল দেখাটিই বস্তুর অবভাসিক দিক।

অতীন্দ্রিয় সত্তাঃ বস্তুটি আসলে যা তাই, যেমন রঙের বাইরে গােলাপের যে আসল রূপ আছে, সেটাই তার অতীন্দ্রিয় সত্তার দিক। বস্তুর আসল রূপ অজ্ঞাত, অজ্ঞেয়।

জ্ঞানের উপাদান ও সংবেদন আসে মনের বাইরে থেকে। বস্তুটির অতীন্দ্রিয় সত্তা বা যথার্থ স্বরূপই এই সংবেদন উৎপন্ন করে। কিন্তু এই সংবেদন যতক্ষণ না মনের সংশ্লেষণী ক্রিয়ার দ্বারা সুসংহত ও সুসংবদ্ধ হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান উৎপন্ন হতে পারে না।

মন তার অন্তর্নিহিত অভিজ্ঞতাপূর্ব জ্ঞানের আকারগুলাের দ্বারা সংবেদনকে সুসংবদ্ধ ও সুসংহত করে। এই সংবেদন দেশ ও কালের মাধ্যমে মনে এসে উপস্থিত হয়। কান্ট বলেছেন, মনের আকারগুলােকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা- (১) ইন্দ্রিয়ানুভূতির আকার, (২) বােধজাত আকার এবং (৩) বুদ্ধির ধারণার আকার, আবার কান্টের মতে, আমাদের মনের মােট বারােটি ক্যাটাগরি আছে। যেমন-(১) সমগ্রতা, (২) বহুতু, (৩) একতু, (৪) বাস্তবতা, (৫) নিষেধ, | (৬) সীমাবদ্ধতা, (৭) দ্রব্য, (৮) কার্যকরণ, (৯) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, (১০) সম্ভাব্য ও অসম্ভাব্য, (১১) আস্তি-নাস্তি এবং (১২) অনিবার্যতা-আপত্তিকতা। কান্টের মতে, যথার্থ জ্ঞানের নতুনত্ব ও সঠিকতায় অনিবার্যভাবেই এ দুটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। আর এটা সম্ভব হবে শুধু অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধির সমন্বয়ের মাধ্যমে।

পরিশেষঃ উপরােক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কান্টের বিচারবাদে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও জ্ঞানের উৎপত্তিবিষয়ক মতবাদগুলাের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে সন্তোষজনক মতবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক