ব্যবহারিক জীবনে নীতিবিদ্যার উপকারিতা:আলােচনা কর


প্রশ্নঃ ব্যবহারিক জীবনে নীতিবিদ্যার উপকারিতা:আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যার প্রধান কাজ হলাে কোনাে কর্মের ভালাে মন্দ, উচিত অনুচি সম্পর্কে মানুষকে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও অনেক সময় ভুলে যায় ভালাে-মন্দের পার্থক্য, বিপথগামী হয়.নৈতিক আদর্শের পথ থেকে। তাই সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের মাঝে সত্য সুন্দর মঙ্গলকে প্রতিষ্ঠা করাই নীতিবিদ্যার কাজ।

ব্যবহারিক জীবনে নীতিবিদ্যার উপকারিতাঃ ব্যবহারিক জীবনে বা বাস্তব জীবনে নীতিবিদ্যার উপকারিতা মূল্যায়ন করা কষ্টকর হলেও নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে-

১. ভালাে-মন্দ সম্পর্কে জ্ঞানঃ ব্যবহারিক জীবনে নীতিবিদ্যার অন্যতম প্রধান উপকারিতা হচ্ছে ভালাে মন্দের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ যে সকল কাজ করছে তা ভালাে না মন্দ মূল্যায়ন করা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার জন্য নীতিবিদ্যা আবশ্যক কেননা নীতিবিদ্যার জ্ঞান না হলে ভালাে-মন্দের মূল্যায়ন করা একেবারেই অসম্ভব। তাই বলা যায় ভালাে-মন্দ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে নীতিবিদ্যার উপকারিতা অপরিসীম।

২. নীতিবােধ জাগ্রতকরণঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষ পশুর সমান। যার মাঝে নীতিবােধ নেই সে নিজ স্বার্থের জন্য সকল প্রকারের অন্যায় কাজ করতে পারে। নীতিবিদ্যা পাঠের মাধ্যমে নীতিবােধ জাগ্রত সম্ভব হয়। মানুষ কুসংস্কারমুক্ত হয়। নিজ স্বার্থের চেয়ে সমাজের বা অন্যের স্বার্থের জন্য কাজ করে।

৩. নৈতিকতামূলক সমাজ গঠনঃ মানব জীবনে নৈতিকতা মানুষের অমূল্য সম্পদ। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে নৈতিকতামূলক সমাজ গঠন করা জরুরি। কিন্তু মানুষ লােভের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেক সময় অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত হয় ফলে সমাজে অনৈতিকতা বিরাজ করে। আর এ অনৈতিকতা দূর করতে নীতিবদ্যার পাঠের বিকল্প নেই।

৪. অন্তর্দৃষ্টি লাভঃ নীতিবিদ্যা পাঠের ফলে মানুষ এক ধরনের অন্তর্দৃষ্টি লাভ করে যা আমাদের আচরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। এ অন্তর্দৃষ্টি হলাে আমাদের নৈতিক বাধ্যবাধতাবােধ অথবা সহজ কথায় আত্মসচেতনতা যা আমরা নীতিবিদ্যা পাঠের ফলে বুঝতে পারি।

৫. নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে জাগ্রতকরণঃ নীতিবিদ্যা পাঠ করার মাধ্যমে মানুষ নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে জাগ্রত করতে পারে। ফলে মানুষ তাদের ভালাে-মন্দের বিচার করতে পারেন। কোনাে কাজটি করা তার পক্ষে ঠিক, কোনােটি ঠিক নয় তা মূল্যায়ন করতে পারে। সুতরাং মানুষের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে জাগ্রত করতে নীতিবিদ্যা পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

৬. ব্যক্তিত্ববােধ জাগ্রত হয়ঃ নীতিবিদ্যা পাঠের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ববােধ জাগ্রত হয়। প্রত্যেক মানুষের কিছু না কিছু ব্যক্তিত্ববােধ থাকে, তবে সবসময় তা জাগ্রত হয় না। তাই নীতিবিদ্যা সেই ব্যক্তিত্ববােধ জাগ্রত করার সুযােগ করে দেয়ার ফলে ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ববােধ জাগ্রত করতে সক্ষম হন। তাই বলা যায় ব্যক্তিতুবােধ জাগ্রতকরণে নীতিবিদ্যা পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

৭. ব্যবহারিক জীবনে প্রভাবঃ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, শাসননীতির উপর নীতিবিদ্যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ধর্মনীতি, শিক্ষানীতি ও রাষ্ট্রনীতি কেমন হবে। কেমন হওয়া উচিত অর্থনীতির ক্ষেত্রে সম্পদ কিভাবে বণ্টন করা দরকার ইত্যাদি বিষয়ে নীতিবিদ্যা আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করে। তাই বলা হয় ব্যবহারিক জীবনে নীতিবিদ্যা পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

৮. ধর্মীয় অনুসরণঃ ধর্মীয় অনুসরণের ক্ষেত্রে নীতি বিদ্যার পাঠের গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা ধর্ম ও নৈতিকতা একে অপরের পরিপূরক। কোনাে ব্যক্তির মাঝে নৈতিকতাবােধ আছে কিন্তু ধর্ম নেই তা হতে পারেনা। কারণ নৈতিকতাই ধর্মের শক্তি। নীতিবিদ্যা পাঠের ফলে মানুষের ধর্মীয় চেতনার পূর্ণ বিকাশ ঘটে তথা ধর্মীয় অনুসরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

৯. সমাজজীবন গঠনে সহায়কঃ নৈতিকতা ব্যতীত সুখী সমাজ গঠন সম্ভব নয়। নৈতকতাই একজন মানুষকে কর্তব্যপরায়ণ ন্যায়পরায়ণ,নিষ্ঠাবান, দয়ালু, ধার্মিক ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলে। নৈতিকতাই মানুষের চরিত্র -গঠনের মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয় রােধ করে আদর্শ সমাজজীবন গঠনে সহায়তা করে।

১০. নীতি শাস্ত্রবিদদের মতামতঃ নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে উইলিয়াম লিলি বলেন, বিশেষ বিশেষ। পরিস্থিতিতে পথ নির্দেশ করাই নীতিবিদ্যার প্রধান উপযােগিতা নয়। সাধারণভাবে নৈতিক ব্যাপার সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে উদার এবং আমাদের উদ্দেশ্য দৃঢ় করাই এর প্রধান কাজ।

১১. আত্মসংশােধন করা সম্ভবঃ নীতিবিদ্যা পাঠের মাধ্যমে আত্মসংশােধন করার সুযোেগ পাওয়া যায়। কোনাে ব্যক্তির নৈতিকতা ঠিক থাকলে এমনিতেই আত্মসংশােধন হয়ে যায়। আর নৈতিকতা ঠিক রাখার উপায় নীতিবিদ্যা পাঠ করা। সুতরাং বলা যায় নীতিবিদ্যা পাঠের মাধ্যমে আত্মসংশােধন করার সুযােগ পাওয়া যায়।

১২. আদর্শ চরিত্র গঠনঃ চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। আবার এই চরিত্রই মানুষের অমূল্য সম্পদ নষ্ট করে দেয়। তবে সেই চরিত্র হচ্ছে অশুভ চরিত্র যা সর্বজন ঘৃণিত তাই সর্বজন ঘৃনিত চরিত্রকে দূর করতে নীতিবিদ্যা সাহায্য করে। মানুষের কর্ম, আচরণ এবং কথাবার্তার মাধ্যমে তার চরিত্র প্রকাশ পায়। নীতিবিদ্যা পাঠের মাধ্যমে বিবেকবােধ জাগ্রত হয়। ফলে মানুষ নিজ স্বার্থ পরিহার করে সকলের কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করে। ফলে সে সমাজের জন্য আদর্শ চরিত্রে পরিণত হয়।

উপসংহারঃ নৈতিকতা মানুষের অমূল্য সম্পদ। মানুষ কখনাে কখনাে এই সম্পদ নষ্ট করে ফেলে লােভের কারণে। তাই এই অমূল্য সম্পদ রক্ষায় নীতিবিদ্যা বিশেষ ভূমিকা রাখে। সুতরাং ব্যবহারিক জীবনে নীতিবিদ্যা পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক