আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা এবং পরানীতি বিদ্যার মধ্যে পার্থক্য আলােচনা কর


প্রশ্নঃ আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা এবং পরানীতি বিদ্যার মধ্যে পার্থক্য আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা মানুষের সকল প্রকার কর্মের একটি যৌক্তিক বিশ্লেষণ নিয়ে আলােচনা করে। মানুষের কর্মের মধ্যে কি উচিৎ, কি অনুচিত কোনােটি মঙ্গলকর এবং কোনােটি মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না সে বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। নীতিবিদ্যাকে সাধারণভাবে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা এবং পরানীতি বিদ্যাও বলা হয়ে থাকে।

আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যাঃ আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা বলতে আমরা পরম কল্যাণের আদর্শ নিরূপণ করাকেই বুঝি। অর্থাৎ পরম কল্যাণের মাধ্যমে কর্মের উচিত-অনুচিত নির্ণয় করাই হলাে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা। অর্থাৎ মানুষের আচরণ কি হওয়া উচিৎ, যার দ্বারা সে পরমার্থ লাভে সক্ষম হয় তাই আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা আলােচনা করে।

পরানীতিবিদ্যাঃ পরানীতিবিদ্যা হলাে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার দাবি ও পদ্ধতি বিশ্লেষণের সংশ্লিষ্ট একটি বিদ্যা। এটি আদর্শ জীবন-যাপনের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও বর্ণনা দেয়। অর্থাৎ নীতিবিদ্যার যে অংশ নীতিবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়ের একটি বিশ্লেষণী অনুশীলন দেয় তাই হলাে পরানীতিবিদ্যা। এটি মূলত নীতিবিদ্যায় নৈতিক অবধারণসমূহের অবস্থান নির্ণয় করে।

আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা ও পরানীতিবিদ্যার মধ্যে পার্থক্যঃ আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা এবং পুরানীতি বিদ্যার মধ্যে পার্থক্যসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলােঃ

১. আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা বলতে আমরা সাধারণত পরম আদর্শের মাধ্যমে মানব আচরণের অন্যায়-ন্যায়, উচিৎ অনুচিত ইত্যাদি বিচারকে বুঝি। পক্ষান্তরে পরানীতি বিদ্যা বলতে নৈতিক পদ ও অবধারণা তাৎপর্য ও কার্যাবলির ব্যাখ্যাকে বুঝি।

২. আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যাকে প্রধান বা বাস্তব নীতিবিদ্যা বলা হয়। পক্ষান্তরে, পরানীতি বিদ্যাকে বিশ্লেষণী নীতিবিদ্যা বা নীতিবিদ্যার তাত্ত্বিক আলােচনাকে বুঝি।

৩. আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদদের মতামত ভিন্ন বলে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার আলােচনার পদ্ধতি জটিল। পক্ষান্তরে, পরানীতি বিদ্যায় বিশ্লেষণী পদ্ধতি প্রয়ােগ করা হয় বলে এর আলােচনার পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত সহজ।

৪. নীতিবিদদের নৈতিক উক্তি বা আদর্শ সংক্রান্ত যুক্তি নিয়ে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা আলােচনা করে। পক্ষান্তরে, পরানীতিবিদ্যা-নৈতিক সার্বিক ধারণার প্রকৃতি সম্বন্ধীয় নৈতিক পদ ও উক্তির অর্থ বা প্রয়ােগ নিয়ে আলােচনা করে।

৫. আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা একটি নৈতিক, উক্তিকে কিভাবে যৌক্তিকভাবে সমর্থন করা যায় তা দেখানাের চেষ্টা করেন। পক্ষান্তরে, পরানীতি বিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদদের দাবি ও পদ্ধতি বিশ্লেষণ করেন এবং তার বিষয়াবলিকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেন।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, পরানীতি বিদ্যা মূলত আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার যৌক্তিক বিশ্লেষণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এদের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও এরা মূলত একে অপরের পরিপূরক। অর্থাৎ আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা যেমন, বিশ্লেষণ ছাড়া গ্রহণযােগ্য নয় তেমনি পরানীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা ছাড়া অচল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক