চাকরি শেষ করে দাদাসাহেব বাড়িতে এসে কী কাজে ব্রতী হন? সংক্ষেপে লেখ


প্রশ্নঃ চাকরি শেষ করে দাদাসাহেব বাড়িতে এসে কী কাজে ব্রতী হন? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘চাঁদের অমাবস্যা' উপন্যাসের উল্লেখযােগ্য চরিত্র দাদাসাহেব। পাঁচ বছর আগে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে স্থায়ীভাবে গ্রামে বাস করছেন। পূর্বে গ্রামের সাথে তার সংযােগ থাকলেও তা ছিল অনিয়মিত, তিনি কেবল ছুটি-ছাটাতেই দেশে আসতেন। চাকরি শেষে বা অবসরপ্রাপ্তিতে দাদাসাহেব নিজে ধর্মপালনের সাথে সাথে পরিবারের অন্যান্যদেরকেও ধর্মকর্মে ব্ৰতী করে তােলেন।

চাকরি থেকে অবসরের পরে দাদাসাহেব বাড়িতে এসে বুঝতে পারলেন যে, তার অবসর সময়ােচিত হয়েছে। বাড়িতে সংখ্যায় দশাধিক বালক-বালিকা। তার গ্রামবাসী বড়ছেলের ছয়টি ছেলেমেয়ে- বিধবা মেয়ে ও পাঁচটি সন্তান। তাদের শিক্ষাদীক্ষার একান্ত প্রয়ােজন। তাদের সে বয়সটি শিক্ষা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল; অনেকটা সার দেওয়া জমির মতাে। ধর্মের ব্যাপারে দাদাসাহেব মাঝে মাঝে অসংযত হয়ে পড়েন। তাকে দেখে ধর্মের বিষয় মনে করে অনেক বয়ােবৃদ্ধব্যক্তিরা শ্রদ্ধা-সমীহ করে। কেননা, ধর্মের ব্যাপারে তিনিই শিশুর মতাে সরল বা প্রাণবন্ত বালকের মতাে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে পারেন।

দাদাসাহেবের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার বিধবা কন্যা আনােয়ারা ও তার পুত্র ফজলু অন্যতম। অবসরপ্রাপ্ত দাদাসাহেব যত্নবান হলেন পারিবারিক ধর্ম ও নীতিনৈতিকতা শিক্ষায়। তার বাড়ি ফেরার এক মাসের মধ্যেই পরিবারের সর্বত্রই প্রবাহিত হয়েছে ধর্মীয় শিক্ষার বাতাস এবং ক্রমান্বয়ে তা আরাে ঘনীভূত হয়ে তার গার্হস্থ্য পরিবেশকে করেছে আমূল প্রভাবিত। ঔপন্যাসিক জানাচ্ছেন-
“প্রথম সপ্তাহে তিনি নির্দেশ দিলেন, বিসমিল্লাহ না বলে কেউ যেন লােকমা না তােলে। শীঘ্র আর এক হুকুম হলাে, কারাে একটি নামাজ যেন কাজা না হয়। তারপর ঈমানের অর্থ, কুরআন পাঠ ও হাদিস-সুন্নাহর প্রয়ােজনীয়তা, তসবি পড়ার উপকারিতা, নফল নামাজের কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ ব্যাখ্যান দিতে লাগলেন।”
দাদাসাহেব ধর্মান্ধ। চাকরি জীবনে ‘বিধর্মী’ মনিবের প্রতি বিতৃষ্ণার রেশ ধরে গ্রামের বাড়িতে অবসর জীবনযাপন করতে এসে তিনি কঠোর হাতে তার পরিবারে ধর্মীয় বিধিনিষেধ আরােপ করেন এবং গড়ে তােলেন একটি ধর্মীয় পরিমণ্ডল। বাড়ির ছােটো ছােটো ছেলে মেয়েদের ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষাদানে তিনি সদাসতর্ক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক