পরানীতিবিদ্যা বলতে কি বুঝায়?


প্রশ্নঃ পরানীতিবিদ্যা বলতে কি বুঝায়?
অথবা, পরানীতিবিদ্যা কি?

ভূমিকাঃ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বসবাস করে সমাজের মানুষের দ্বারা তার আচরণ প্রভাবিত হয়। নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসরত মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করে থাকে নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের ভিত্তিতে মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করে থাকে।

পরানীতিবিদ্যাঃ নীতিবিদ্যার যে শাখা নৈতিক ভাষার গঠনাত্মক দিক নিয়ে আলােচনা ও বিশ্লেষণ করে তাকে পরানীতিবিদ্যা বলে। পরানীতিবিদ্যার প্রধান কাজ হচ্ছে নৈতিকতার ভাষার বিশ্লেষণ, যৌক্তিকতা প্রদর্শন এবং নৈতিক যুক্তির স্বরূপ, যুক্তির আকার এবং নৈতিক জ্ঞানবিদ্যার ধারণাগত ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ করা। মূলত পরানীতিবিদ্যা হচ্ছে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার ব্যবহৃত শব্দ, পদ, প্রত্যয় এবং নৈতিক অবধারণসমূহের ধারণাগত ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ। পরানীতিবিদ্যার কাজ প্রধানত দুটি। যথাঃ ধারণাগত বিশ্লেষণ এবং অন্যটি হচ্ছে যৌক্তিক বিশ্লেষণ। নিচে ধারণাগত বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ সম্পর্কে আলােচনা করা হলােঃ

ধারণাগত বিশ্লেষণঃ পরানীতিবিদ্যার প্রধান কাজ হলাে ধারণাগত বিশ্লেষণ। ধারণাগত বিশ্লেষণ বলতে বুঝায় নৈতিক ভাষায় ব্যবহৃত পদ, শব্দ প্রত্যয় এবং নৈতিক অবধারণসমূহের অর্থ অনুসন্ধান ও ব্যাখ্যা করা। নৈতিক ভাষায় ভালাে, ন্যায়, দায়িত্ব, কর্তব্য, উচিত প্রভৃতি নৈতিক পদসমূহের ব্যবহার কিভাবে হয়, তা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা পরানীতিবিদ্যার কাজ। প্রত্যেক ব্যক্তিই শিশুকাল থেকে নৈতিকতা সম্পর্কে গ্রহণ শুরু করে থাকেন। নৈতিক ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ ধারণের অর্থ ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা এবং সে সম্পর্কে জানার অনুসন্ধানই পরা নীতিবিদ্যার মূল লক্ষ্য ও কাজ।

যৌক্তিক বিশ্লেষণঃ পরানীতি বিদ্যার দ্বিতীয় কাজ হলাে নৈতিক ভাষায় ব্যবহৃত নৈতিক যুক্তির যৌক্তিক বিশ্লেষণ করা। বিজ্ঞানীগণ বৈজ্ঞািনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক বাক্যগুলােকে যাচাই করে এবং প্রমাণের সাহায্যে সমর্থন করে পরানীতিবিদ্যক দার্শনিকগণ নৈতিক ধারণা ও অবধারণের সত্য ও মিথ্যা নির্ণয়ের চেষ্টা করেন এবং এ সকল ধারণা ও অবধারণ কিভাবে সত্য বা মিথ্যা হয় তা প্রমাণ করে জানার চেষ্টা করেন। এই সকল নৈতিক যুক্তির বিশ্লেষণের দুটি দিক রয়েছে। প্রথমটি হলাে নৈতিক সত্য বা নৈতিক জ্ঞান বলতে কিছু আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা। দ্বিতীয়টি হলাে, যদি নৈতিক সত্য বলে কিছু থাকে তাহলে তা জানার পদ্ধতি ও উপায় কী হবে তা বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধান করা।

উপসংহারঃ সমাজে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য এবং সুষ্ঠু সমাজ পরিচালনার জন্য নৈতিকতার প্রয়ােজন আছে। বিভিন্ন দিক থেকে নৈতিক জীবন যাপনের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ শিশুকাল থেকে নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং নীতিবিদ্যার যে শাখা নৈতিক ভাষার গঠনাত্মক দিক নিয়ে আলােচনা ও বিশ্লেষণ করে তাকে পরানীতিবিদ্যা বলে। নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করা নীতিবিদ্যার অন্যতম কাজ। তাই নীতিবিদ্যা হচ্ছে একটি আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যাকে একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক