রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে রুশাের সামাজিক চুক্তি মতবাদটি সংক্ষেপে লিখ


প্রশ্নঃ রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে রুশাের সামাজিক চুক্তি মতবাদটি সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, রুশাের সামাজিক চুক্তি মতবাদটি সংক্ষেপে আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সামাজিক চুক্তি মতবাদ অত্যন্ত প্রাচীন। গ্রিক মনীষী প্লেটো ও এরিস্টটলের দর্শনে সামাজিক চুক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। সপ্তদশ শতাব্দীতে টমাস হবস ও জন লক এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে জ্যা জ্যাক রুশাের কাছ থেকে সামাজিক চুক্তি মতবাদের পূর্ণ ব্যাখ্যা ও সমর্থন পাওয়া যায়।

সামাজিক চুক্তি মতবাদের মূলকথাঃ সামাজিক চুক্তি মতবাদের মূলকথা হলাে- রাষ্ট্র বিধাতার ইচ্ছায় সৃষ্টি নয়, বলপ্রয়ােগেও সৃষ্ট নয়। রাষ্ট্র মানুষের নিতান্ত প্রয়ােজনেই সামাজিক চুক্তির ফলে সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক চুক্তি মতবাদীদের মতে, আদিম যুগে রাষ্ট্রের কোনাে অস্তিত্ব ছিল না। শাসক বা আইন-কানুন কিছুই ছিল না। মানুষ তখন প্রকৃতির রাজ্যে বাস করতাে। মানুষ নিজ নিজ খেয়াল-খুশীমত, প্রাকৃতিক আইন মেনে চলতাে। কিন্তু নানাকারণে প্রকৃতির রাজ্যে নানা নিয়ম-শৃঙ্খলাবিহীন জীবনযাত্রা থেকে রেহাই পাবার জন্য পুরস্পরের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে। এ চুক্তিকেই সামাজিক চুক্তি বলা হয়।

রুশাের সামাজিক চুক্তি মতবাদঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর অবিসংবাদিত ফরাসি দার্শনিক রুশাের হাতে সামাজিক চুক্তি মতবাদ এক নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। তিনি তার 'সােসিয়াল কন্ট্রাক্ট' নামক গ্রন্থে সামাজিক চুক্তি মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দান করেন। তিনি হর্স ও লকের মতাে কোনাে বিশেষ উদ্দেশ্যে আকৃষ্ট হয়ে মতবাদ প্রচার করেননি। তিনি তার নিজস্ব ধ্যান-ধারণার মাধ্যমেই এ মতবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি তার মতবাদে হবস ও লকের চিন্তার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। জন রুশাের মতে প্রকৃতির রাজ্য ছিল আদর্শ রাজ্য। ঐ রাজ্যে বসবাসরত সবাই স্বাধীন ছিল। পরস্পরের মধ্যে কোনাে ঝগড়া-বিবাদ ছিল না। প্রত্যেকে পরস্পরের প্রতি সহানুভুতিশীল ছিল। রুশাে প্রকৃতির রাজ্যের এই সুন্দর অবস্থাকে ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রুশাের মতে, কালক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানার বিবেক জন্ম নেয়। এর ফলে মানুষ আপন-পর বিচার করতে শেখে। সহজ-সরল জীবন ক্রমে ক্রমে জটিলতার দিকে ধাবিত হতে থাকে। মানুষের সুখ-শান্তি বিনষ্ট হবার ফলে সকলে সম্মিলিতভাবে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করে। জনগণ তাদের রাষ্ট্রের হাতে অর্পণ করে। রাষ্ট্র সার্বভৌম শক্তির অধিকারপ্রাপ্ত হয়। এই সার্বভৌম শক্তিই জনগণের বিবাদ-বিসংবাদের মীমাংসা করবে।

পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সামাজিক চুক্তি মতবাদ একেবারে মূল্যহীন নয়। এর একটি মূল্যবান অবদান হলাে ব্যক্তিবাদের গােড়াপত্তন। লক ও রুশাে উভয়েই বলেছেন যে, মানুষ নিজেই তাদের রাজনৈতিক ভাগ্য নিয়ন্ত্রক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক