সমাজবিজ্ঞানের সাথে দর্শনের সম্পর্ক আলােচনা কর


প্রশ্নঃ সমাজবিজ্ঞানের সাথে দর্শনের সম্পর্ক আলােচনা কর।
অথবা, সমাজবিজ্ঞানের সাথে দর্শনের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ সমাজবিজ্ঞান মানবসমাজের একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ। অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান সমাজের একেকটি বিশেষ দিক নিয়ে আলােচনা করে। অনেক মানবিক বিজ্ঞানও সমাজের কোনাে কোন বিশেষ দিক নিয়ে আলােচনা করে। তাই সমাজবিজ্ঞানের সাথে যেসব সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক রয়েছে তাদের মধ্যে দর্শনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।

সমাজবিজ্ঞান ও দর্শনঃ অন্যান্য বিষয়ের মতাে সমাজবিজ্ঞানের সাথে দর্শনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জ্ঞানের এ দুটি শাখা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল এবং একটি অপরটির পরিপূরক। সমাজবিজ্ঞান সমাজের উৎপত্তি, গঠন ও বিকাশ, রীতি-নীতি, আচার-ব্যবহার, অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিষয় আলােচনা করে। আর দর্শন সমাজের উদ্দেশ্য, আদর্শ এবং মূল্যবোধ নিয়ে আলােচনা করে। এদের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের সম্পর্ক রয়েছে।

সমাজবিজ্ঞান ও দর্শনের সাদৃশ্যঃ সমাজবিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যকার সাদৃশ্যগুলাে নিম্নে আলােচনা করা হলাে-

(১) সমাজবিজ্ঞান ও সমাজদর্শন উভয়ই একই সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলােচনা করে।

(২) সমাজবিজ্ঞানীর একটি প্রতিষ্ঠানের স্বরূপ আলােচনার জন্য সে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও আদর্শ জানা দরকার। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানীকে সমাজদর্শনের সাহায্য নিতে হয়। আবার সমাজ দার্শনিকেরও কোনাে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বুঝার জন্য সমাজবিজ্ঞানীর সহযােগিতা নিতে হয়।

(৩) যে প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা সমাজ নিয়ন্ত্রিত হয়, সমাজবিজ্ঞান সে সম্পর্কে সমাজদর্শনকে জ্ঞান দিয়ে থাকে।

(৪) সমাজবিজ্ঞান সমাজজীবন সম্পর্কে যেসব তথ্য সরবরাহ করে, সমাজ সংস্কার ও সমাজ দার্শনিক তার সাহায্যে নীতি-নির্ধারণ করতে পারেন।

(৫) সমাজদর্শনকে সমাজ ও দর্শনের মিলনস্থল বলা হয়। সামাজবিজ্ঞান সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান দান করে আর সমাজদর্শন যৌক্তিকতার মাধ্যমে তা সমষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করে।

সমাজবিজ্ঞান ও দর্শনের বৈসাদৃশ্যঃ সমাজবিজ্ঞান ও সমাজদর্শনের মধ্যে উপরােক্ত সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে। এগুলাে হলাে-

(১) সমাজবিজ্ঞান হলাে বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান আর সমাজদর্শন হলাে আদর্শনিষ্ঠ জ্ঞান।

(২) সমাজবিজ্ঞান সমাজের প্রকৃতি নিয়ে আলােচনা করে। আর সমাজদর্শন আলােচনা করে সমাজ কী রকম হওয়া উচিত, সমাজের আদর্শ কী হবে ইত্যাদি নিয়ে।

(৩) সমাজে বিধি ও গঠনের মধ্যে যে আদর্শ আছে তা সমাজদর্শন আলােচনা করে। আর সমাজবিজ্ঞান বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমাজের বিভিন্ন দিক আলােচনা করে।

(৪) সমাজবিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সমাজের বিভিন্ন দিক আলােচনা করে। আর সমাজদর্শন কল্পনাশ্রয়ী হয়ে আলােচনা করে।

(৫) সমাজবিজ্ঞান সমাজের উপায় বের করে এবং সমাজদর্শন সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়।

মোটকথা, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজদর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি পৃথক হলেও উভয়েই সমাজকে নিয়ে পর্যালােচনা, করে। এজন্য এদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানী বটমাের বলেন, রাষ্ট্রীয় দর্শন ও ইতিহাস দর্শন। সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার পটভূমি রচনা করেছে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান, সমাজ মনােবিজ্ঞান এবং সমাজদর্শন প্রত্যেকটি বিষয়ই সমাজ নিয়ে আলােচনা করে। সমাজবিজ্ঞান যেখানে পূর্ণাঙ্গ সমাজকে বিজ্ঞানভিত্তিতে পাঠ করে, সেখানে সমাজ মনােবিজ্ঞান ও সমাজ দর্শনসমাজের বিশেষ দিক নিয়ে আলােচনা করে। তাই বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানের সাথে সমাজ মনােবিজ্ঞান ও সমাজদর্শনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও গভীর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক