অথবা, নবােপলীয় যুগের হাতিয়ারের পরিচয় দাও।
ভূমিকাঃ আধুনিক সভ্য জগৎ একদিন বা এক বছরে সৃষ্টি হয়নি। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক সভ্য জগতের অভ্যুদয় হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে বিভিন্ন যুগের নিদর্শন আবিষ্কার করেছেন। খনন কাজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ প্রাগৈতিহাসিক কালকে কতিপয় সুনির্দিষ্ট যুগে বিভক্ত করেছেন। এগুলাে প্রাচীন প্রস্তর যুগ, নব্য প্রস্তর যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ এবং লৌহ যুগ।
(i) ভাঙা ও মসৃণ পাথুরে অস্ত্রঃ নবােপলীয় যুগের শুরুর দিকে পাথর ভেঙে তা প্রয়ােজনমতাে মসৃণ করে কুঠার, বাটালি ও হাতুড়ি বানানাে হতাে। প্রয়ােজন অনুযায়ি হাতিয়ার বানাতে এগুলাের উপযােগিতা ছিল বেশি। বিশেষ করে গাছ কাটা, কাঠের দ্রব্য তৈরি এবং ভূমি কর্ষণের জন্য কুঠার, বাটালি ও হাতুড়ির মতাে অস্ত্রের প্রয়ােজন ছিল।
(ii) নিড়ানি ও মাটি গর্ত করার হাতিয়ারঃ নবােপলীয় যুগের প্রথম দিকে কৃষিজীবী মানুষেরা ভূমি কর্ষণ ও নিড়ানির কাজে কুঠার ও বাটালি ব্যবহার করতাে। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা নিড়ানি তৈরি করতে শেখে। এশেরিয়ার হাসুনা (Hassuna) অঞ্চলে এ রকম নিড়ানি পাওয়া গিয়েছে যা বেলেপাথর ও কোয়ার্টজাইট পাথরে তৈরি মাটি গর্ত করার লাঠি বা হাতিয়ার পুরােপলীয় যুগ থেকেই ব্যবহৃত হতাে।
(iii) অন্যান্য হাতিয়ার এবং চকমকি ও সাধারণ পাথরের দ্রব্যাদিঃ নবােপলীয় যুগে পশু শিকারের গুরুত্ব কমে যাওয়ায় শিকারের প্রয়ােজনীয় অস্ত্রের তেমন একটা উন্নয়ন সাধিত হয়নি। তীব-ধনুকের ব্যবহার এ সময় অব্যাহত ছিল। শেষ পুরােপলীয় যুগ এবং মধ্যপলীয় যুগে ব্যবহৃত তীরের ফলা নবােপলীয় যুগে লক্ষ্য করা যায়। তীরের তির্যক ফলা এ যুগে অধিক কার্যকর বড়শিস ফলায় রূপান্তর করা হয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,নবােপলীয় যুগের মানুষ মসৃণ, ধারালাে ও উন্নত ধরনের পাথরের হাতিয্যব তৈরি করে। তারা চকমকি পাথর ও কোয়ার্টজ পাথর ব্যবহার করে কোদাল ও হাতিয়ার তৈরি করে। এ ছাড়া পাখি শিকারের জন্য বর্শা ও তীর এবং নিড়ানাে ও গর্তকরার জন্য লাঠিও তৈরি করে। অর্থাৎ এক কথায় নবােপলীয় যুগে হাতিয়ারের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়। ফলে মানবসভ্যতা আরও সামনের দিকে অগ্রসর হয় বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন।
0 মন্তব্যসমূহ