অথবা, হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ টমাস হবস ছিলেন সপ্তদশ শতাব্দীর ইউরােপীয় রাজনৈতিক দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দার্শনিক হবস ছিলেন একজন বাস্তববাদী দার্শনিক। তিনি তার দর্শনের সত্যতা প্রমাণের জন্য সম্পূর্ণ নির্ভর করেন তার সমকালীন বিজ্ঞানের যে উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে তার ওপর।
হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদঃ হবস বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদে বিশ্বাস করতেন এবং তার মতে বিশ্বে যা কিছু ঘটছে তার মূলে রয়েছে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ।
হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের স্তরঃ হবস বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- ১. প্রথম স্তর রয়েছে পৃথিবী অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ ও জ্যোতিষ্ক ইত্যাদি জড় পদার্থসমূহ, ২. দ্বিতীয় স্তরে আছে গণিত, জ্যামিতি ও যন্ত্রবিদ্যার স্থান, ৩. সর্বশেষটি হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণাসমূহ।
গণিত ও জ্যামিতির প্রাধান্যঃ হবস তার রাষ্ট্র দর্শনের সংগঠনের যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন তার মধ্যে গণিত ও জ্যামিতিই সর্বাধিক প্রাধান্য লাভ করেছে। তিনি জ্যামিতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বলেন যে, সকল বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জ্যামিতিক পদ্ধতি প্রয়ােগ করা উচিত।
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের উৎসঃ হবসের মতে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের উৎস। তিনি মধ্যযুগের বিশ্বাসের বিরােধীতা করেন এবং বলেন যে, বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনাে মতবাদেরই সত্যতা স্বীকার করে নেয়া যায় না।
পৃথিবীর সবকিছুই জড় বস্তুঃ দুনিয়াতে যা কিছুর অস্তিত্ব বিদ্যমান, তাই এক একটি জড় বস্তু এবং প্রত্যেকটি বিদ্যমান। আর এসব গতিশীলতা জ্যামিতিক নিশ্চয়তা ও গাণিতিক নির্ভুলতার দ্বারা ধাবিত হয়ে থাকে। এ গতিতত্ত্ব শুধু জড় জগতেই সীমাবদ্ধ নেই, তা মানব সমাজেও প্রযােজ্য। হবস বলেন, আমরা সর্বত্র এক ও অভিন্ন আচরণ করি।
পরিশেষঃ হবস হচ্ছেন সকল বস্তুবাদীদের আদি গুরু। কারণ তিনিই সর্বপ্রথম বিকাশমান বস্তুবাদী বিজ্ঞানের ধারাকে মানব ও মানবেতর জীবনের বিশ্লেষণে প্রয়ােগ করেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ