দর্শন চর্চার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযােগগুলাে খণ্ডন কর



প্রশ্নঃ দর্শন চর্চার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযােগগুলাে খণ্ডন কর।
অথবা, দার্শনিকগণ কীভাবে দর্শন চর্চার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযােগগুলাে খণ্ডন করেছেন?

ভূমিকাঃ দর্শন আজ যথেষ্ট উৎকর্ষতার সিঁড়িতে পদার্পন করলেও, পঠনযােগ্য বিষয় হিসাবে আজোও তা সর্বজনীন স্বীকৃতি লাভ করতে পারেনি। তাই দর্শন চর্চায় মানুষ আপত্তি তুলে থাকে। কিন্তু তাদের এসব আপত্তিসমূহ এক ধরনের বিষয়ী বা বস্তুবাদী মানসিকতার পরিচালক। কেননা, প্রকৃতপক্ষে এসব আপত্তির কোনাে ভিত্তি নেই, দর্শনের প্রকৃত স্বরূপ ও ভূমিকা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই এসব আপত্তি উত্থাপিত হয়। দার্শনিকগণ তাই এসব আপত্তিসমূহ যুক্তির মাধ্যমে খণ্ডন করেছেন এবং দর্শনের প্রয়ােজনীতাকে সবার কাছে যুক্তিগ্রাহ্য করে তুলেছেন।

আপত্তি খণ্ডনঃ নিম্নে দর্শনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আপত্তিগুলাে খণ্ডন করা হলাে-

(১) ধর্ম ও দর্শন পরিপন্থী নয়ঃ দর্শন কখনই কোনাে ধর্মবিশ্বাসে কুড়াল মারে না, যদি না সে ধর্ম প্রগতির পরিপন্থী হয়। কিন্তু বিশ্বের কোনাে ধর্মই প্রগতির পরিপন্থী নয়। তাই ধর্মের বিকৃত ব্যবহারে দর্শন আপত্তি তুলে তা বিশ্লেষণ করে।

(২) নিশ্চিত সত্য অবাস্তবঃ দর্শন নিশ্চিত সত্যে পৌছাতে পারে না, কারণ নিশ্চিত সত্য বলে কিছু নেই। পৃথিবীতে সবকিছুই অনিশ্চিত। মৃত্যু ও ধ্বংসও হঠাৎ ঘটনা। তাই নিশ্চিত বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। তা ছাড়া সাম্প্রতিককালে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা প্রমাণ করেছে যে, সবকিছুই অনিশ্চিত।

(৩) জীবন এক ঘেঁয়েমিতা নয়ঃ মানুষ বিচিত্র এবং বৈচিত্রত্যর মাঝেই আনন্দ পায়। প্রত্যেকটি মানুষের জীবন জিজ্ঞাসা স্বতন্ত্র। জগতের দিকে বিভিন্ন লােক বিভিন্নভাবে তাকায় ও তথ্য সংগ্রহ করে। যদি সব মানুষ একই প্রকৃতির হতাে, তাহলে মানুষ ও রােবটের মধ্যে কোনাে পার্থক্য থাকত না।

(৪) জীবনের উপলব্ধিই দর্শনঃ জীবনের উপলব্ধি থেকেই দর্শনের উৎপত্তি হয়েছ। যুগে যুগে দর্শনের ইতিহাসে দেখা যায় যে, দর্শন চর্চা বৃহত্তর জীবন চেরণকে প্রভাবিত করেছে। তাই দর্শন ব্যবহারিক জীবনের বাইরে এ আপত্তি ভিত্তিহীন।

(৫) স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণঃ দর্শনে স্রষ্টাকে সরাসরি বিশ্বাসের আসনে না বসিয়ে বিচার-বিবেচনা ও যুক্তির আলােকে জানার পক্ষপাতি। দর্শনে স্রষ্টার বা পরমসত্তার পক্ষে একাধিক যুক্তি রয়েছে।

পরিশেষঃ পরিশেষে এক কথায় বলা যায় যে, দর্শনের বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে তা একদিকে অযৌক্তিক এবং অন্যদিকে মূল্যহীন। তাই দার্শনিকগণ তাদের যুক্তির কষ্টিপাথরে এসব আপত্তি খণ্ডন করে দর্শনের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক