অথবা, শাং সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে চীনের সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হওয়ার ফলে বিস্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পুরাতন মূল্যবােধ বর্জন করে নতুন মূল্যবােধের আলােকে চৈনিক দার্শনিক, নতুন করে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। এ সময়ের চীনের ধর্ম দর্শন দ্বারা বিভিন্ন সভ্যতা প্রভাবিত হয়। চৈনিক ধর্মের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দার্শনিকতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে অনেকে এটাকে দর্শনভিত্তিক ধর্ম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
শাং সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যঃ নিম্নে শাং সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলাে বর্ণনা করা হলাে-
(১) সামাজিক জীবনঃ শাং আমলে সমাজ ব্যবস্থা ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। প্রথম দিকে তাদের সমাজ ছিল মাতৃপ্রধান, পরে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রচলন হয়। তবে রাজা ও অভিজাতশ্রেণির মধ্যে বহু বিবাহের প্রচলন ছিল। শাং আমলে সমাজে দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। সে সময় দাসরা সমাজে অবহেলিত ও শােষিত শ্রেণিরূপে বিবেচিত হতাে।
(২) অর্থনৈতিক অবস্থাঃ শাং আমলে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত ছিল। তবে তাদের জীবিকার প্রধান উৎস ছিল কৃষিকাজ। তাদের চাষাবাদ পদ্ধতি ছিল আদিম। আর চাষাবাদ করতে কখনও তারা লাঙ্গলের ব্যবহারও করতাে। কৃষি ফসলের মধ্যে গম ও জোয়ার ছিল উল্লেখযােগ্য। তারা ধান ও সবজি খাদ্যরূপে ব্যবহার করতাে।
(৩) রাজনৈতিক জীবনঃ শাংদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্যাদি পাওয়া যায়নি। তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল বংশানুক্রমিক। তবে রাজার মৃত্যুর পর ছেলে চেয়ে উত্তরাধিকার নির্বাচনে ভাইয়ের অধিকার বেশি ছিল। রাজা সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন এবং গণপূর্তের কার্যাদি তদারক করতেন।
(৪) ধর্মঃ শাং আমলে চীনারা প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানকে দেবতা মনে করত। তারা মাটি, নদী, বাতাস ও দিকসমূহকে দেবতা ভাবত। ‘শাং’ বা ‘শাঙ্গ ছিল তাদের প্রধান দেবতা। তিনি ছিলেন বৃষ্টি, শস্য ও যুদ্ধের দেবতা। শাংদের ধর্ম দার্শনিক বা আধ্যাত্মিক ভাবাদর্শে পরিপূর্ণ ছিল না।
(৫) লিখন পদ্ধতিঃ শাং যুগের মানুষ জটিল ভাব-লেখ আয়ত্ত করেছিল। তা ছিল বর্তমানে চীনা লিখনের প্রত্যক্ষ পূর্বসূরী। তারা তুলা ও ভূসার কালী দিয়ে সিল্ক কাপড়, কাঠ বা বাঁশের পাতে লিখতাে।
(৬) স্থাপত্যঃ রাজপ্রাসাদ, মন্দির ও বিশাল কবরস্থানগুলাে ছাড়া শাংদের অন্যকোনাে স্থাপত্য নিদর্শন পাওয়া যায়নি। চীনে একটি কবরস্থানে এগারােটি রাজকীয় সমাধি পাওয়া গিয়াছে। এর মধ্যে একটি ১৮ মিটার এলাকা জুড়ে উল্টানাে পিরামিড আকৃতির। এ কবরটি ১২ মিটার গভীর ছিল।
(৭) ভাস্কর্যঃ শাং যুগের ভাস্কর্য বেশ উন্নত ছিল। এ সময় পাথরের ওপর শাং শিল্পীরা তাদের কারিগরি দক্ষতার প্রমাণ রেখে গেছেন। আবিষ্কত শাং মূর্তিগুলাের বেশীর ভাগই ছােট হলেও বৃহৎ আকৃতির ভাস্কর্যের নমুনাও দেখা যায়। ইম নগরীর নিকট শ্বেত মর্মর পাথরের ‘তা লি শিহ' নামক তিনটি দানব মূর্তি এদের মধ্যে অন্যতম।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে পৃথিবীতে বিভিন্ন সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছে। আর এ সকল সভ্যতার মধ্যে প্রাচীন শাং সভ্যতা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তারা চীনা সভ্যতাকে উচ্চতর পর্যায়ে অধিষ্ঠিত করে স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও সংস্কৃতিতে শাং যুগের রাজারা বেশ জোরালাে অবদান রেখেছেন, যা আজও বিশ্ব সভ্যতাকে নাড়া দেয়।
0 মন্তব্যসমূহ