অথবা, স্পেনসারের বিবর্তনবাদের তিনটি পর্যায় আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ জগৎ উৎপত্তির ইতিহাস আলােচনা করে দেখা যায় যে, বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক চিন্তার শ্রেষ্ঠ ফসল হিসেবে বিবর্তনবাদই একটি অধিকতর গ্রহণযােগ্য মতবাদ হিসেবে স্থান লাভ করেছে। বিবর্তনবাদের প্রতি অর্থাৎ জগতের এই বিবর্তন প্রক্রিয়া কি উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত নাকি লক্ষ্যহীন স্বতঃস্ফূর্তভাবে জগতের বিবর্তন ঘটছে এ নিয়ে দর্শনে বিভিন্ন মতের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে যান্ত্রিক মতবাদ তথা যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ অন্যতম।
হার্বাট স্পেন্সরের বিবর্তনবাদঃ হার্বাট স্পেন্সারের বিবর্তনবাদের তিনটি পর্যায় নিচে তুলে ধরা হলােঃ
(১) ঐক্যবিধান, পৃথকীকরণ ও নিয়মানুগত্যঃ হার্বাট স্পেনসার বিবর্তনের পেছনে ঐক্যবিধা, পৃথকীকরণ ও নিয়মানুগত্য এই তিনটি মূলনীতিকে স্বীকার করে। এ মতবাদ অনুসারে ঐক্যবিধান নিয়মের ফলে পৃথিবীতে জীবকোষ ও প্রাণের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে গােটা নক্ষত্র জগতের। পৃথকীকরণ নিয়মের ফলে জীবকোষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এবং নক্ষত্র জগত থেকে কিছু বিচ্ছিন্ন অংশ খসে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে তারকারাজীসহ বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহের। আর নিয়ন্ত্রণ বা নিয়মানুগত্য প্রক্রিয়ার ফলে বিশ্বজগত একটি নিয়মের রাজত্বের মধ্যদিয়ে চলে এবং জড়জগত ও জীবজগতের অগ্রগতি একটি অর্নিদিষ্ট বা অসংবদ্ধ অবস্থা থেকে একটা নির্দিষ্ট বা সুসংবদ্ধ অবস্থার দিকে পরিচালিত হয়।
(২) জড়, গতি, ও শক্তিঃ হার্বাট স্পেন্সর জড়, গতি ও শক্তিকে এক অজ্ঞাত শক্তির প্রকাশ বলে ধরে নিয়ে তা থেকেই বিশ্বজগতের আলােচনা শুরু করেন। প্রাথমিক অবস্থায় এ জড়, গতি ও শক্তি ছিল অসংবদ্ধ এবং নীহারিকাপুঞ্জ ছিল বিশৃংখল। ঐক্য বিধান নিয়মের ফলে এই অসংবদ্ধ নিহারিকা পুঞ্জ বা জ্বলন্ত গ্যাস বা বিক্ষিপ্ত মেঘের ধূলিকণা থেকে সৃষ্টি হলাে সূর্যসহ গােটা নক্ষত্র জগতের। নক্ষত্রজগত সৃষ্টির পর তাদের ঘনীভূত সত্তা থেকে হঠাৎ করে পৃথকীকরণ নিয়ম অনুযায়ী কিছু কিছু অংশ খসে পড়ে। এ বিচ্ছিন্ন অংশগুলােই এখন বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ নামে পরিচিত।
(৩) প্রাণের আবির্ভাবঃ আমাদের এ পৃথিবী গ্রহটার জন্মের পর বহু বছর কেটে গেছে। এ সময়ের মধ্যে প্রথমে তার উপরিভাগ, ঘনীভূত হয়েছে তারপর আস্তে আস্তে তাতে আবির্ভাব ঘটেছে বাতাস, পানি, নদীনালা ইত্যাদির। আর সর্বশেষে আক্সিজেন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্যের ঐক্যবিধানের ও সংমিশ্রণের ফলে পৃথিবীতে জীবকোষ ও প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে। এ জীবকোষে পৃথকীকরণ নিয়মের মাধ্যমে জীবকোষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের এবং এর ফলে সম্ভব হয়েছে পৃথিবীতে পূর্ণাঙ্গ প্রাণির অস্তিত্বলাভ।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, বিবর্তন বা বিবর্তন প্রক্রিয়ার যান্ত্রিক ব্যাখ্যা বিভিন্নভাবে সামালােচিত হলেও জগতের উৎপত্তি সম্পর্কে যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। মূলত যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ জগতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে, যা বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে অনেকাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
0 মন্তব্যসমূহ