এরিস্টটলের নৈতিকতা সম্পর্কিত পূর্ণতাবাদ ব্যাখ্যা কর


প্রশ্নঃ এরিস্টটলের নৈতিকতা সম্পর্কিত পূর্ণতাবাদ ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ স্বজ্ঞাবাদের মাধ্যমে নৈতিকতার সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না। স্বজ্ঞাবাদ সর্বদা বিচার বিবেচনাকে এড়িয়ে চলতে চায়। কিন্তু নৈতিক দিক থেকে মূল্যায়ন করলে দেখা যায় বিচার-বিবেচনারও অপরিহার্য মুল্য রয়েছে। মানুষের ভিতরে যে অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে সেগুলাের পূর্ণ বাস্তবায়নই মানব জীবনের কল্যাণ আনতে পারে।

এরিস্টটলের পূর্ণতাবাদঃ এরিস্টটল নৈতিক জীবনের পরম লক্ষ্য বা চরম কারণের নাম দিয়েছেন ‘ইউডেমনিয়া’ (Eudaemonia) যার নিকটতম বাংলা শব্দ হচ্ছে কল্যাণ বা পূর্ণতা। তিনি তার ‘দি নিকোম্যাকিয়ান এথিকস্’ গ্রন্থে চরম উৎকর্ষ বা সদগুণ অনুসারে এবং যদি একাধিক চরম উৎকর্ষ থাকে, তাহলে সব থেকে ভালাে বা পূর্ণ উৎকর্ষ অনুসারে মানুষের আত্মার অনুশীলন করা বা মানুষের কর্মক্ষমতা বা সামর্থ্যের উপলব্ধি বা বাস্তবায়ন হিসেবে ‘ইউডেমনিয়া’ শব্দটির সংজ্ঞা দেন। তিনি মনে করেন, মানুষের কল্যাণ সদগুণ অনুসারে তার সামর্থের পূর্ণ বিকাশ সাধনের মধ্য দিয়ে ঘটে থাকে। কোনাে বস্তুর ভালােত্ব তার বিশেষ স্বভাবের পূর্ণ বিকাশ সাধনের মধ্যে নিহিত থাকে।

মধ্যম পন্থা বা সুবর্ণ মধ্যক মতঃ এরিস্টটলের মতে, মানব আত্মার মধ্যে বুদ্ধিময় ও বুদ্ধি বিবর্জিত দু'টি উপাদান রয়েছে। বুদ্ধি হচ্ছে আত্মার বুদ্ধিময় অংশ এবং কামনা বাসনা, অনুভূতি ইত্যাদি বুদ্ধি বিবর্জিত অংশ। বুদ্ধিকে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কামনা-বাসনা জাতীয় বুদ্ধি বিবর্জিত অংশের সঙ্গে সহযােগিতা বা সঙ্গতি স্থাপন করার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। তার মতে, সৎ বা ন্যায়পরায়ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আত্মার বুদ্ধিময় ও বুদ্ধি বিবর্জিত অংশের মধ্যে একটি পূর্ণ সঙ্গতি স্থাপিত হয়। চরম উৎকর্ষের আকারে আত্মার ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ আসে। মানব চরম উৎকর্ষ বলতে কেবল মানুষের দৈহিক ক্রিয়াকে বােঝায় না। বরং আত্মার ক্রিয়াকে বােঝানাে হয়ে থাকে। কারণ আত্মার ক্রিয়াকেই শান্তি নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। শান্তির নিশ্চয়তার জন্য আত্মার কাজ কিভাবে করা উচিত, এ প্রশ্নের উত্তরে এরিস্টটল তার বিখ্যাত মধ্যম পন্থা বা সুবর্ণ মধ্যক মত এর কথা বলেন।

তিনি বলেন, সদগুণ বা সততা দু'টি চরম বা ভ্রান্ত পন্থার মধ্যবর্তী অবস্থাকে বােঝায়। উদাহরণ স্বরূপ সাহস হচ্ছে হঠকারিতা ও ভীরুতা হচ্ছে মধ্যবর্তী অবস্থা। কিন্তু এই মধ্যম পন্থা প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে এবং সর্ব অবস্থায় এক নয়। এই মধ্যম পন্থা আমাদের নিজেদের কাছে আপেক্ষিক কিন্তু এটা বুদ্ধির দ্বারা নিয়ােজিত হয়ে থাকে। তিনি মনে করেন, সদগুণ আমাদের কাছে আপেক্ষিক মধ্যবর্তী অবস্থায় সংগঠিত বিবেচনা প্রসূত উদ্দেশ্য বা পছন্দের সাথে জড়িত। এমন একটা মানসিক অভ্যাস যা বুদ্ধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল বলেন, শান্তি নয়, বরং মানুষের সমগ্র পূর্ণতা বা কল্যাণই নৈতিক আদর্শ। নৈতিক আদর্শ অর্জিত হলেই শান্তি তার অনুগামী হয়ে থাকে। তাই দেখা যায় তার মতে, মানুষের সমগ্র পূর্ণতা বা কল্যাণই নৈতিক আদর্শ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক