মার্টিনিউর স্বজ্ঞাবাদ ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন কর।


প্রশ্নঃ মার্টিনিউর স্বজ্ঞাবাদ ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন কর।


ভূমিকাঃ বিচার বুদ্ধির পরিবর্তে অনেক সময় অন্তর্নিহিত মূল্যের কথা বলে কোনাে কাজের নৈতিকতা নিকলন করা হয়। মানুষের অন্তরে স্বজ্ঞা বা বিবেক নামে একটি বৃত্তি রয়েছে যার সাহায্যে আমরা সরাসরি কোনাে কাজের নৈতিকতা বিচার করতে পারি। স্বজ্ঞাবাদ মনে করে যে, যে কোনাে ঐচ্ছিক ক্রিয়ার প্রকৃতির মধ্যেই ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব বা ভালাে মন্দত্বের গুণ বিদ্যমান রয়েছে। বাটলার, প্রিচার্ড এবং রস প্রমুখ ব্যক্তিরা স্বজ্ঞা নিয়ে সবিশেষ আলােচনা করেছেন।

মার্টিনিউর স্বজ্ঞাবাদঃ মার্টিনিউর মনে করেন বিবেক নীতিবােধের এমন একটা কিছু যার সারসত্তা নৈতিক মানদণ্ডের বিভিন্ন নীতিবােধের সংবেদনশক্তি নিহিত। কোনাে প্রবৃত্তি বা প্রবণতার নৈতিক মূল্যকে বিবেক বা স্বজ্ঞার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। এই বিবেক বা স্বজ্ঞা হচ্ছে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের বাণী। তাই নৈতিক মূল্যের প্রত্যক্ষণের ক্ষেত্রে বিবেকের আদেশ নির্ভুল ও বিশ্বাসযােগ্য।

ক্রিয়ার উৎসঃ মার্টিনিউর-এর মতে, মানুষের অভ্যন্তরীণ জীবনে প্রবৃত্তি বা প্রবণতার দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতেই নৈতিক অবধারন কেবল তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠে। মার্টিনিউ আমাদের ক্রিয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি তালিকা প্রণয়ন করেন। তিনি মনে করেন, এই উদ্দেশ্যগুলাে ক্রিয়ার উৎসকে গঠন করে। তিনি উৎকর্ষের ক্রম অনুসারে ক্রিয়ার উৎসগুলাে সাজান। তিনি ভক্তি বা শ্রদ্ধাকে উচ্চ স্থানে এবং নিন্দা, প্রতিহিংসা ও সন্দেহকে নীচ স্থানে স্থাপন করেন।

উচ্চতর ও নিম্নতর প্রবৃত্তিঃ নৈতিক অবধারণের সারসত্তা ক্রিয়ার যেকোনাে দুটি মূল উৎসের মধ্যকার মূল্যের তুলনামূলক পার্থক্যকরণের প্রত্যক্ষণেই নিহিত। নিম্নতর প্রবৃত্তিকে বর্জন করে উচ্চতর প্রবৃত্তিকে গ্রহণ করলে একটি কাজ ন্যায় হয়। তিনি মনে করেন, নিম্নতর প্রবৃত্তি বা নীতি বর্জন করে উচ্চতর প্রবৃত্তি বা নীতিকে অনুসরণ করলে প্রত্যেকটি কাজ ন্যায় হয়। পক্ষান্তরে, উচ্চতর প্রবৃত্তি বা নীতিকে বর্জন করে নিম্নতর প্রবৃত্তি বা নীতিকে অনুসরণ করলে প্রত্যেকটি কাজ অন্যায় হয়।

ত্রুটিসমূহঃ মার্টিনিউ বিচার-বিবেচনার সাহায্য না নিয়ে বিবেকের মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত ও সরাসরি কোনাে কাজের ভালােত্ব-মন্দত্ব, ন্যায়-অন্যায়ত্ব উপলব্ধি করার কথা বলেন। তিনি যেভাবে বলেন সেভাবে যদি বিবেক ব্যক্তিগত ও বিচার বিবেচনা নিরপেক্ষ হয় তাহলে নৈতিক অবধারণ ব্যক্তিবিশেষের খেয়াল খুশির ব্যাপার হয়ে উঠে। কিন্তু এ ধরনের ব্যক্তিগত অনুভূতি কখনাে নৈতিকতার সুষ্ঠু মানদণ্ড হতে পারে না।

অন্যদিকে মার্টিনিউ ক্রিয়ার উৎস সম্পর্কে যে তালিকা দেন, তাও সন্তোষজনক নয়। আধুনিক মনােবিদ্যা মানব মনকে একটা আঙ্গিক সমগ্রের সত্তা বলে মনে করে এবং মার্টিনিউ-র তালিকায় যেভাবে বিভিন্ন বৃত্তির কথা বলা হয়েছে, সেভাবে বৃত্তিগুলাের ধারা বা পার্থক্যকে বর্জন করে। তিনি যেসব উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলাে সরল নয়, বরং খুবই জটিল ঘটনা এবং সেগুলাে যে পন্থায় সংঘটিত, সে পন্থার উপরে যেকোনাে বিশেষ দৃষ্টান্তে সেগুলাের উৎকর্ষ নির্ভর করে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মার্টিনিউ বিবেক বা অন্তদৃষ্টিকেই নৈতিকতার মানদণ্ড বলে মনে করেন। বিবেক | বিভিন্ন প্রকার হতে পারে যেমন, প্রত্যক্ষগত, ব্যক্তিগত ও বিবেচনা সাপেক্ষ। সুতরাং মার্টিনিউর স্বজ্ঞাবাদকে নৈতিকতার | মানদণ্ড হিসেবে সন্তোষজনক মতবাদ বলা যায় না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক