সামাজিক বিচ্যুতিমূলক আচরণ সম্পর্কে আলােচনা কর


প্রশ্নঃ সামাজিক বিচ্যুতিমূলক আচরণ সম্পর্কে আলােচনা কর।
অথবা, বিচ্যুতি আচরণের ক্রিয়া ও অনভিপ্রেত ক্রিয়া সম্পর্কে আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে গিয়ে মানুষকে কতগুলাে সামাজিক নিয়মনীতি, আইন-কানুন তথা সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হয়। সামাজিক বিধি-বিধানগুলাে মেনে চলাই তার কর্তব্য। কিন্তু সমাজে প্রায়শই বিধি বহির্ভুত কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, প্রথা ও মূল্যবােধের সাথে পরিচিত হয়। সেই থেকেই এগুলাের প্রতি একাত্মতা ঘােষণা করে বাস্তব জীবনে তা ধারণ করতে চেষ্টা করে।

সামাজিক বিচ্যুতির ধরণঃ সামাজিক বিচ্যুতিমূলক আচরণ মূলত চার ধরনের। নিম্নে এগুলাে তুলে ধরা হলাে-

(১) আচরণের বিচ্যুতিঃ এ ধরনের বিচ্যুতির মধ্যে পড়ে খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ, জুয়া খেলা, মাদকদ্রব্যের চোরাচালান, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের দুর্নীতি সমকামিতা, যৌন নিপীড়ন, অত্যাচার, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি।

(২) অভ্যাসের বিচ্যুতিঃ এ ধরনের বিচ্যুতির মধ্যে পড়ে মাদকাসক্তি, জুয়াখেলা, পরনারীতে আসক্তি, সুরাপান ইত্যাদি। বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম তার 'Anomic' তত্ত্বে এ ধরনের অভ্যাসগত বিচ্যুতিগত বিচ্যুতির কারণে নানাবিধ সামাজিক সমস্যার উদয় হয় বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন যে, অতিরিক্ত মদ্যপান সড়ক দুর্ঘটনা ও নারী নির্যাতন বৃদ্ধি করে।

(৩) মনস্তাত্ত্বিক বিচ্যুতিঃ এ ধরনের বিচ্যুতি ঘটলে ব্যক্তি সমাজে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। আবেগপ্রবণতা ও আবেগজনিত অসঙ্গত আচরণ ও ধরনের বিচ্যুতিমূলক কর্মকাণ্ডের উদাহরণ।

(8) সাংস্কৃতিক বিচ্যুতিঃ এ ধরনের বিচ্যুতির মধ্যে পড়ে অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতাসম্পন্ন নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আকর্ষণ, ধর্মীয় ক্ষুদ্র গােষ্ঠীর উদ্ভব ইত্যাদি। বিচ্যুতিমুলক আচরণ সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজের জন্য কাম্য নয়। এ জন্য ব্যক্তি ও গােষ্ঠীকে সমাজবিরােধী ও সামাজিক মূল্যবােধ ও আদর্শ পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য সামাজিক নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। কেননা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে সমাজের সার্বিক কল্যাণ, উন্নতি ও সুষ্ঠু সমাজ জীবন অসম্ভব।

বিচ্যুতি আচরণের ক্রিয়া ও অনভিপ্রেত ক্রিয়াঃ সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচ্যুতিমূলক আচরণ সামাজিক সংহতির পরিপন্থী। আবার অনেকে মনে করেন বিশেষ বিশেষ অবস্থায় সামাজিক বিচ্যুতি তথা মানুষের বিচ্যুতিমূলক আচরণ সমাজের প্রয়ােজনীয় উপাদানে পরিণত হয়। সমাজবিজ্ঞানী ট্যালক্ট পারসন্সের মতে, এমন কতগুলাে বিচ্যুতিমূলক আচরণ লক্ষ করা যায় যা সামাজিক, ব্যক্তিগত ও আদর্শগত দিক থেকে ক্ষতিকর। চুরি-ডাকাতি, অপমান ইত্যাদি সম্পদ ও ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া মাদকাসক্তি, আত্মহত্যা ইত্যাদি নিজের জন্য ক্ষতিকর।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, কোনাে সমাজের জন্যই বিচ্যুতি বা বিচ্যুত আচরণ কাম্য নয়। মানুষের বিচ্যুতিমূলক আচরণ অনেক সময়ই তাকে সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে ফেলে। তবে কোনাে কোনাে সমাজে অনেক সময় বিশেষ ক্ষেত্রে বিচ্যুত আচরণের সামাজিক প্রয়ােজনীয়তা দেখা দিলেও সমাজকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তােলার জন্য কোনােভাবেই বিচ্যুত আচরণ কাম্য নয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক