তেভাগা আন্দোলন কী? সংক্ষেপে লেখ


প্রশ্নঃ তেভাগা আন্দোলন কী? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আসার পরেই ঘটে গেল পঞ্চাশের মন্বন্তর, অনাহারে মরতে লাগল হাজার হাজার মানুষ আর মুনাফালােভী জোতদার আর চোরাকারবারির দল সেই সুযােগে সর্বস্বান্ত করতে চাইল খেটে খাওয়া মানুষদের। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নাৎসীবাদের চূড়ান্ত পরাজয় ও দুনিয়াব্যাপী নতুন যুগের সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিতেই তেভাগার সূচনা। নিপীড়িত, অত্যাচারিত কৃষক সমাজের উপর জোতদারদের জোরজুলুম বন্ধ করার দাবি নিয়ে এসেছিল তেভাগা।

সারা বছরের হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে ধান কাটা, জোতদারদের খােলানে কাটা ধান বহন করা, ঝাড়াই মাড়াই করা, আর গােলাভর্তি করে বেগার খেটে যৎসামান্য ধান নিয়ে নিজের ভরণপােষণ করাই ছিল চাষিদের কাজ। কিন্তু এ ক্ষোভের মেঘ পুঞ্জিভূত হতে হতে বিশাল আন্দোলনের আকার নেয় এবং স্লোগান ওঠে- “ধান কেটে ঘরে তােলো এবং দখল রেখে, চাষ করাে” এবং “আধির বদলে তেভাগা চাই।” অর্থাৎ মােট উৎপন্ন ফসলের দুভাগ পাবে চাষি এবং একভাগ পাবে জমির মালিক। এমনি করে প্রচলিত অন্যায় ব্যবস্থাকে গুড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে চলল মেহনতি মানুষের মিছিল- এটাই তেভাগা আন্দোলন।

এ আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে তখনাে পূর্ব পাকিস্তানের কৃষক সমাজ দূরেই ছিল, কারণ দেশ বিভাজনের বিষবাষ্প তখনাে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ক্রমে ক্রমে ফাটল ধরল, মুসলিম কৃষকদের মধ্যে থেকেও তেভাগার ডাক আসতে লাগল। মানুষ বুঝতে শিখল মুসলমান জোতদার আর হিন্দু জোতদারদের মধ্যে যেমন পার্থক্য নেই তেমনি মুসলমান আর হিন্দু কৃষকের মধ্যেও কোনাে পার্থক্য নেই। ধর্মের গণ্ডিকে মানুষ সহজেই পেরিয়ে এসে বলল- ‘দাড়ি টিকি ভাই ভাই, লড়াই এর ময়দানে জাতভেদ নাই।’

সুতরাং সার্বিক বিচারে বলা যায়-ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ লাভের অধিকার থেকেই কৃষকসম্প্রদায় তেভাগা আন্দোলনের সূচনা করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক