নীতিবিদ্যার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর


প্রশ্নঃ নীতিবিদ্যার শ্রেণিবিভাগ কর।
অথবা, চিত্রের সাহায্যে নীতিবিদ্যার শ্রেণিবিভাগ আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের আলােকে মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করে থাকে। মানুষের আচরণের ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত মূল্যায়ন করে থাকে। নীতিবিদ্যার ইতিহাস ও আলােচ্য বিষয়াবলির পর্যালােচনা করলে নীতিবিদ্যার যে দুটি চিন্তাধারা পরিলক্ষিত হয় তাকে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা ও পরানীতিবিদ্যা বলে আখ্যায়িত করা চলে। আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যাকে কখনও কখনও প্রধান বা বাস্তব নীতিবিদ্যা বা নৈতিক আচার ব্যবহার সম্পর্কীয় বিদ্যা নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। পরানীতিবিদ্যাকে বিশ্লেষণী নীতিবিদ্যা নামে আখ্যায়িত করা হয়।

নীতিবিদ্যার শ্রেণিবিভাগঃ নীতিবিদ্যাকে মূলত ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথাঃ
১. আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা (Normative Ethics);
২. বর্ণনামূলক নীতিবিদ্যা (Descriptive Ethics);
৩. পরানীতিবিদ্যা (Meta Ethics) এবং
৪. ব্যবহারিক নীতিবিদ্যা (Practical Ethics)।

১. আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যাঃ নীতিবিদ্যামূলত আদর্শ নিষ্ঠ বিজ্ঞান। আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার প্রধান কাজ হচ্ছে নৈতিক নিয়মাবলি ও নৈতিক মানদণ্ডসমূহ অনুসন্ধান, অনুশীলন, ব্যাখ্যা ও চিহ্নিত করা। নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের ভিত্তিতে নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণ মূল্যায়ন করে থাকে।

২. বর্ণনামূলক নীতিবিদ্যাঃ নীতিবিদ্যার আর একটি বিভাগ হচ্ছে বর্ণনামূলক নীতিবিদ্যা। নৈতিকতার বিজ্ঞান সম্মত আলােচনাকে সাধারণত বৈজ্ঞানিক বা বর্ণনামূলক নীতিবিদ্যা বলা হয়। বর্ণনামূলক নীতিবিদ্যার প্রধান কাজ হলাে নৈতিকতা সম্পর্কিত তথ্যাবলির বর্ণনামূলক ব্যাখ্যা করা ব্যক্তির নৈতিক চেতনা এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতিক কার্যাবলির বর্ণনাও ব্যাখ্যা প্রধান করাই বর্ণনামূলক নীতিবিদ্যার মূল কাজ।

৩. পরানীতিবিদ্যাঃ নীতিবিদ্যার যে শাখা নৈতিক ভাষার গঠনাত্মক দিক দিয়ে আলােচনা ও বিশ্লেষণ করে তাকে পরানীতিবিদ্যা বলে। পরানীতি বিদ্যার প্রধান কাজ হলাে নৈতিকতার ভাষার বিশ্লেষণ যৌক্তিকতা প্রদর্শন এবং নৈতিক যৌক্তির স্বরূপ, যুক্তির আকার এবং নৈতিক জ্ঞানবিদ্যার ধারণাগত ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ করা।

৪. ব্যবহারিক নীতিবিদ্যাঃ ব্যবহারিক নীতিবিদ্যা নীতিবিদ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে সাম্প্রতিক কালে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত নৈতিক নিয়মাবলির প্রয়ােগের প্রক্রিয়াকে ব্যবহারিক বা প্রায়ােগিক নীতিবিদ্যা বলা হয়। বর্তমানে ব্যবহারিক নীতিবিদ্যার পরিধি ও সীমানা বিস্তৃত হচ্ছে।

উপসংহারঃ নীতিবিদ্যাকে মূলত উল্লিখিত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের আলােকে মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করে থাকে। তাই ব্যক্তির জীবনে নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক