হার্বাট স্পেন্সারের নৈতিক বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা কর


প্রশ্নঃ হার্বাট স্পেন্সারের নৈতিক বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ বিবর্তন মানে হলাে পরিবর্তন। একটা সুশৃঙ্খল পরিবর্তন। একটি ধারাবাহিক ক্রম পরিবর্তনের মাধ্যমে জটিল অবস্থা থেকে সরল অবস্থায় উপনীত হওয়াকে বিবর্তন বলে। বিবর্তনবাদ হলাে একটি আধুনিক মতবাদ। ডারউইন বিবর্তনবাদের প্রতিষ্ঠাতা হলেও স্পেন্সার এবং কোৎ এর পিছনে ব্যাপক অবদান রাখেন।

হার্বাট স্পেন্সারের নৈতিক বিবর্তনবাদঃ হার্বাট স্পেন্সর নৈতিকতার ক্ষেত্রে বিবর্তনবাদের প্রয়ােগ করে বিবর্তনবাদী সুখবাদের প্রবর্তন করেন। তিনি মনে করেন যে, নৈতিক নিয়ম জীববিদ্যার নিয়ম থেকে অনুমিত। জৈবিক নিয়ম থেকে কি ধরনের কাজ আবশ্যিকভাবে সুখ উৎপাদন করে এবং কি ধরনের কাজ দুঃখ উৎপাদন করতে পারে, তা অনুমান করাই নীতিবিদ্যার কাজ। আচরণ হচ্ছে লক্ষ্যের সাথে কাজের সামঞ্জস্যবিধান। বাহ্যিক সম্পর্কের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের অবিরত সংগতি বিধানের মধ্যে জীবনের সারসত্তা নিহিত। যে কাজ সামঞ্জস্য বিধানে সহায়ক, সে কাজ ভালাে যে কাজ সামঞ্জস্য বিধানে ক্ষতিকারক, সে কাজ মন্দ।

সুখই জীবনের লক্ষ্যঃ ভালাে আচরণ আপেক্ষিকভাবে অধিকতর বিবর্তিত আচরণ এবং মন্দ আচরণ অল্পতর বিবর্তিত আচরণ। লক্ষ্যের সাথে কাজের উন্নতি সংগতি বা পরবর্তী আচরণ বিবর্তন প্রক্রিয়ার ফলে জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করে। এবং জীবনের সুখ বৃদ্ধি করে। সুখই জীবনের লক্ষ্য। কিন্তু জীবনের আসল লক্ষ্য হচ্ছে জীবনের দৈর্ঘ্য ও বিস্তার। দৈর্ঘ্য স্থিতির এবং বিস্তার এর ঘনত্ব বা পরিমাণ ও জটিলতার অর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু সুখ হচ্ছে’দৈর্ঘ্য ও বিস্তার উভয় দিক থেকে জীবনের বৃদ্ধির সূচিপত্র। এটা ঠিক যে, ভালাে সার্বিকভাবে সুখদায়ক। ভালাে আচরণ সুখের সৃষ্টি করে। কেননা ভালাে আচরণ সঙ্গতিপূর্ণ সংগতিবিধান করে থাকে। স্পেন্সর মনে করেন যে, আত্মবাদ ও পরার্থবাদ এই উভয় মতবাদই মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। বিশুদ্ধ আত্মবাদ ও বিশুদ্ধ পরার্থবাদ এই উভয় মতবাদ অবৈধ। তিনি নিরপেক্ষ নীতিবিদ্যায় বিশ্বাস করেন। তার মতে, বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আত্মবাদ ও পরার্থবাদের সমন্বয় সাধিত হতে পারে। স্পেন্সার জীববিদ্যার নিয়মের মাধ্যমে নৈতিকতার ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু জীববিদ্যার নিয়ম ও নৈতিক নিয়ম এক নয়। আবার, বিবর্তনবাদী সুখবাদ সুখবাদের একটি রূপ হওয়ার জন্য সুখবাদের ত্রুটি বিবর্তনবাদের উপরে বর্তে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, হার্বাট স্পেন্সর বিবর্তনবাদ সম্পর্কে যে মতবাদ দিয়েছেন তার গুরুত্বকে এড়িয়ে চলা যায় না। তিনি ব্যক্তি স্বার্থ ও সমাজস্বার্থের মাধ্যমে সংগতি স্থাপন করেন। তার মতে, বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আত্মবাদ ও পরার্থদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার চেষ্টা করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক