হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ (ধারা ৫)


হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১

ধারা-৫ঃ বিনিময়পত্র (Bill of exchange)—’বিনিময়পত্র’ হল উহার লেখক কর্তক দলিলবিশেষ, যা দ্বারা উক্ত লেখক কোন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অপর কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তার আদিষ্ট ব্যক্তিকে বা দলিলের বাহককে [চাহিবামাত্র বা নির্ধারিত সময়ে বা নির্ধারণযােগ্য ভবিষ্যৎ সময়ে] প্রদানের নিঃশর্ত আদেশ দেয়।

যে টাকা পরিশােধের সময়ের যুক্তিতে কিংবা নির্দিষ্ট ঘটনার পর প্রকাশিত কিস্তির সময় অতিবাহিত হবার কারণে, যা মানুষের সাধারণ প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘটে থাকে, যদিও এরূপ ঘটনা সংঘটনের সময় অনিশ্চিত থাকে, এমন প্রেক্ষিতে অত্র ধারা ও ৪নং ধারার অর্থ মােতাবেক টাকা পরিশােধের প্রতিশ্রুতি বা পরিশােধের আদেশ শর্তযুক্ত হবেনা।

অত্র ধারা ও ৪নং ধারার অর্থানুযায়ী, পরিশােধযােগ্য টাকা “নির্দিষ্ট” হতে পারে, যদিও ভবিষ্যতে প্রদেয় সুদ এর আওতাভুক্ত হতে পারে, কিংবা এটা কোন নির্দেশিত বিনিময় হারে পরিশােধযােগ্য হতে পারে, কিংবা [বিনিময়ের বর্তমান হার অনুযায়ী পরিশােধযােগ্য হতে পারে এবং নির্ধারিত কিস্তিতে পরিশােধযােগ্য হতে পারে এবং এরূপ বিধানও এর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যে, এক বা একাধিক কিস্তির টাকা বা সুদ অপরিশােধে সম্পূর্ণ অথবা অনাদায়ী অংশ পাওনা হবে।]

[অত্র ধারার ও ৪নং ধারার অর্থবােধে, অঙ্গীকারপত্র বা বিনিময়পত্র যুক্তিসঙ্গতভাবে যে ব্যক্তিকে নির্দেশ দেয়া হয় তিনি “নির্দিষ্ট ব্যক্তি” হবেন এবং যে ব্যক্তির নিকট পরিশােধযােগ্য সে ব্যক্তিও নির্দিষ্ট হবেন, যদিও কেবলমাত্র বর্ণনায় ব্যক্তির নামে ও খেতাবে ভুল হতে পারে।

কোন নির্দিষ্ট ফান্ড হতে আদিষ্ট প্রদেয় এ ধারার অর্থানুযায়ী শর্তহীন হবেনা, কিন্তু শর্তহীন আদিষ্ট প্রদেয় হতে হলে তাতে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত হবে-

(এ) গ্রাহক বিশেষ যে তহবিল হতে নিজে পরিশােধ করে বা বিশেষ যে হিসাবে খরচের টাকা লিখা হয়, তার নির্দেশ; অথবা

(বি) কোন লেনদেনের বিবরণ যা অঙ্গীকারপত্র বা বিনিময় বিলের শর্তহীন বৃদ্ধি করে।

প্রাপক কাল্পনিক (fictitious) বা অস্তিত্বহীন ব্যক্তি হলে সেক্ষেত্রে বিনিময়পত্র বাহককেই পরিশােধযােগ্য বলে বিবেচিত হবে।

আলােচনা

ধারার পরিধি (Scope): উপরােক্ত সংজ্ঞামতে, বিনিময় বিল হল এমন এক প্রকার হস্তান্তরযােগ্য দলিল যাতে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য শর্তহীন নির্দেশ প্রদান করে। ব্যাপক অর্থে, আদেষ্টা কর্তৃক স্বাক্ষরিত যে দলিলে উক্ত ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে বা তার আদেশে কোন ব্যক্তিকে বা দলিলে বাহককে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট সময় পরে বা চাহিবামাত্র প্রদানের জন্য অন্য কোন ব্যক্তিকে যে শর্তহীন নির্দেশ দেয় তাকে বিনিময় বিল বা বিনিময়পত্র বলে অভিহিত করা হয়। বিনিময় বিল এক ধরনের ঋণের দলিল বিধায়, বিল তৈরীর পর হতে পরিশােধের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন পক্ষ এর সাথে সংযুক্ত হতে পারে।

বিনিময় বিলের পক্ষসমূহ (Parties to a Bill of Exchange)বিনিময় বিলে তিনাট প্রধান পক্ষ থাকে, যেমন—(১) আদেষ্টা বা লেখক (drater), (২) আদিষ্ট গ্রাহক (drawee), (৩) প্রাপক (payee)। যে ব্যক্তি বিলটি লেখে তাকে বলা হয় বিল-লেখক, যার উদ্দেশ্যে বিলটি লেখা হয় তাকে বলা হয় বিল গ্রাহক এবং বিলে যাকে অর্থপ্রদানের আদেশ থাকে তাকে বলা হয় প্রাপক। এছাড়া একটি বিনিময় বিলে আরাে যেসকল পক্ষ জড়িত আছেন তারা হলেন, (৪) স্বীকৃতিদাতা (acceptor), (৫) অনুমােদন বলে প্রাপক বা স্বত্বগ্রহীতা (indorsee), (৬) অনুমােদনকারী বা স্বত্বান্তরকারী (indorser), (৭) ধারক (holder), (৮) যথাকালে ধারক (holder in due course), (৯) প্রয়ােজনবােধে গ্রাহক (drawee in case of need), (১০) সম্মানার্থে স্বীকৃতিকারী (acceptor for honour), ইত্যাদি। বিল লেখকের নিকট হতে বিল পাবার পর বিল-গ্রাহককে স্বাক্ষর করে ঐ বিল স্বীকার করতে হয় এবং তখন তাকে বলা হয় বিল স্বীকৃতিদাতা। স্বীকৃত বিল বিল-লেখকের মাধ্যমে যখন প্রাপকের হস্তগত হয়, তখন তাকে বলা হয় বিলের ধারক বা স্বত্বাধিকারী। বিলের ধারক তার ইচ্ছানুসারে বিলের পশ্চাতে স্বাক্ষর (endorsement) করে উহা অপর কাউকে স্বত্বান্তর করতে পারেন। এরূপ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বিল স্বত্বান্তর করে তাকে বলা হয় স্বত্বান্তরকারী এবং যাকে বিল স্বত্তান্তর করা হল তাকে বলা স্বত্বগ্রহীতা। এছাড়াও অবস্থা বিশেষে বিলের সহিত আরাে কতিপয় পক্ষ জড়িত থাকেন। বিনিময় বিলে বা বিলের পৃষ্ঠাঙ্কনে গ্রাহক ছাড়াও অপর এক ব্যক্তির নামের উল্লেখ থাকতে পারে, যে গ্রাহক কর্তৃক বিল স্বীকৃত না হলে ঐ বিল স্বীকার করে নিবে, তাকে বলা হয় ‘প্রয়ােজনবােধে বিল-গ্রাহক’ (drauee in case of need)। আবার বিল স্বীকার না করার দরুন বিল প্রত্যাখ্যাত হলে এবং ঐ বিল অস্বীকৃতির দরুন বা অধিকতর নিরাপত্তার জন্য লেখন ও প্রত্যাখ্যান প্রমাণ (noting or protesting) হবার পর, মূল গ্রাহকের বা পৃষ্ঠাঙ্কনকারীরে সম্মানার্থে অপর কোন ব্যক্তি উহাতে স্বীকৃতি প্রদান করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তিকে বলা হয় ‘সম্মানার্থে বিল স্বীকৃতিকারী’ (acceptor for honour)।

বিনিময় বিলের নমুনা (বাংলা) (Form of Bill of Exchange): বিনিময় বিলের একটি নমুনা নিম্নে প্রদান করা হল-


বিনিময় বিলের নমুনা (ইংরেজি) (Form of Bill of Exchange): বিনিময় বিলের একটি নমুনা নিম্নে প্রদান করা হল-

বিনিময় বিলের বৈশিষ্ট্য (Features of Bill of Exchange):বিনিময় বিল বা বিনিময়পত্রের অপরিহার্য উপাদানসমূহ নিম্নরূপঃ

(১) ইহা অবশ্যই লিখিত হতে হবে;

(২) এতে অর্থ প্রদানের একটি ব্যক্ত এবং শর্তহীন আদেশ অবশ্যই থাকতে হবে। অত্র উপাদানটিতে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, যেমন—(ক) এটি একটি অর্থ প্রদানের আদেশনামা, অনুরােধ নহে, (খ) এ আদেশ পণ্য প্রদানের নহে, ইহা অর্থ প্রদানের নিমিত্তে হতে হবে, (গ) আদেশটি শর্তহীন হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, “এ পত্রবাহককে দয়াপূর্বক ৭,০০০/= টাকা দিয়ে বাধিত করবেন”। এরূপ দলিল বিনিময়পত্র নহে, বরং তা একটি অনুরােধ মাত্র। সুতরাং উক্ত দলিল বিনিময়পত্র বলে গণ্য হবেনা [Little v, Slackford (1828) M. &W171]।

(৩) এতে উপযুক্ত মূল্যের ষ্ট্যাম্প লাগানাে বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশের প্রচলিত ষ্ট্যাম্প আইনের বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ষ্ট্যাম্প এতে না লাগালে প্রমাণ হিসেবে তা আদালতে গ্রাহ্য হবেনা।

(৪) এতে প্রধানতঃ তিনটি পক্ষ জড়িত থাকে। এ পক্ষগুলি হল লেখক, গ্রাহক ও প্রাপক। বিলটি

যে ব্যক্তি লেখে তাকে বলা হয় লেখক, যার উদ্দেশ্যে বিলটি লেখা হয় তাকে বলা হয় গ্রাহক এবং বিলটিতে যাকে অর্থ প্রদানের আদেশ থাকে তাকে বলা হয় প্রাপক। যেক্ষেত্রে লেখক ও প্রাপক একই ব্যক্তি হয়, সেক্ষেত্রে বিলের দু’টি পক্ষ থাকবে। এতে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত হতে হবে।

(৬) এটা লেখক কর্তৃক অবশ্যই স্বাক্ষরিত হতে হবে। এতে লেখকের স্বাক্ষর না থাকলেও উহা অসম্পূর্ণ দলিল হিসেবে গণ্য হবে। স্বাক্ষর বলতে যেকোন পরিচয়-জ্ঞাপক চিহ্ন বা ছাপ হলেও চলবে বা লেখকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি সহি করলেও চলবে।

(৭) বিনিময় বিলের অর্থ দেশের আইনসঙ্গত বা বিহিত মুদ্রায় পরিশােধ্য।

(৮) এটি একটি হস্তান্তরযােগ্য ঋণের দলিল বিধায় নিয়মানুগ হস্তান্তরের মাধ্যমে এর মালিকানার পরিবর্তন ঘটে।

(৯) বিলে অবশ্যই প্রস্তুত তারিখের উল্লেখ থাকতে হয়, তারিখবিহীন বিল গ্রহণযােগ্য নয়।

(১০) মেয়াদি বিনিময় বিল একবার স্বীকৃতির জন্য এবং পরবর্তীতে অর্থ পরিশােধের জন্য উপস্থাপন করতে হয়।

(১১) বিনিময় বিল অমর্যাদাকৃত হলে আদালতে এটি ঋণের প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়।

বিনিময় বিলের প্রকারভেদ (Classification of Bill of Exchange): বর্তমানকালে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের সাথে তাল রেখে বিভিন্ন ধরনের বিনিময় বিলের প্রচলন ও প্রসার ঘটেছে। ব্যাবসায়ীগণ তাদের প্রয়ােজনের সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে ঐ সকল বিল প্রস্তুত ও ব্যবহারিক প্রয়ােগ করে আসছে। সাধারণতঃ যে সকল দৃষ্টিকোণ থেকে বিলকে শ্রেণীবিভাগ করা হয় তা নিম্নরূপঃ

১। ভৌগলিক ভিত্তিতেঃ ভৌগলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিময় বিল দু'ভাগে বিভক্ত, যথা

(ক) আভ্যন্তরীণ বিনিময় বিল Inland Bill of Exchange): কোন দেশের ভৌগলিক সীমারেখার আওতায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যে বিনিময় বিল ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাকে আভ্যন্তরীণ বিনিময় বিল বলে। অর্থাৎ এ প্রকার বিলের লেখক, গ্রাহক ও প্রাপক সকলেই একই ভৌগলিক সীমারেখার আওতাধীন হয়ে থাকে, বিধায় এগুলােকে আভ্যন্তরীণ বি বিল নামে অভিহিত করা হয়।

(খ) বৈদেশিক বিনিময় বিল Foreign Bill of Exchange): কোন বিলের লেখক ও গ্রাহক একই দেশের নাগরিক হলে, তখন উক্ত প্রকার বিলকে বৈদেশিক বিনিময় বিল বলা হয়।

২। সময়ের ভিত্তিতেঃ সময়ের নিরীক্ষে বিনিময় বিলকে নিমােক্ত শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়, যেমন

(ক) মেয়াদি বিল (Time Bill): কোন বিনিময় বিলের অর্থ কোন নির্দিষ্ট মেয়াদে ভবিষ্যতের নির্ধারিত তারিখে প্রদেয় হলে, তাকে মেয়াদি বিল বলা হয়। তারতম্য সাপেক্ষে তা নিম্নোক্ত দু'ধরনের হতে পারে, যেমনঃ (i) তারিখ মােতাবেক দেয় বিল After date Bill)ঃ বিল প্রস্তুতের তারিখ হতে যে বিলের অর্থ পরিশােধের মেয়াদ আরম্ভ হয় তাকেই তারিখ মােতাবেক দেয় বিল বলে। (ii) দর্শন মােতাবেক মেয়াদি বিল (After sight Bill)ঃ যে বিলে স্বীকৃতি দেয়ার দিন হতে বিলের অর্থ পরিশােধের মেয়াদ আরম্ভ হয় তাকে দর্শন মােতাবেক দেয় বিল বলা হয়।

(খ) চাহিবামাত্র দেয় বিল (Demand Bill): ধারক কর্তৃক চাহিবামাত্র গ্রাহক যদি কোন বিলের | অর্থ পরিশােধে বাধ্য থাকে, তবে তাকে চাহিবামাত্র দেয় বিল বলা হয়।

(গ) দর্শনী বিল (Bill at sight): দর্শনী বিলের ক্ষেত্রে এর অর্থ বিলের গ্রাহক বা তার প্রতিনিধি দর্শনমাত্র প্রদান করা হয়।

৩। দলিলপত্রের ভিত্তিতেঃ দলিলপত্র সংযােজনের ভিত্তিতে বিলকে নিম্নোক্ত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমনঃ

(ক) দলিলী বিল (Documentary Bill): যে বৈদেশিক বিল উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বিলের সাথে চালানী রসিদ, বীমাপত্র, বহনপত্র ইত্যাদি আমদানি-রপ্তানি বিষয়ক দলিলপত্র, সংযুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয় তাকে দলিলী বিল বলে। এটি আবার দু'ধরনের হয়ে থাকে, যথা—(১) স্বীকৃতিসাপেক্ষ দলিলী বিল, ও (২) মূল্য পরিশােধসাপেক্ষ দলিলী বিল, ইত্যাদি।

(খ) পরিচ্ছন্ন বা দলিলবিহীন বিল (Clean Bill): সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কোন দলিলপত্র যদি বৈদেশিক বিনিময় বিলের সহিত সংযুক্ত করা না হয়, তবে তা পরিচ্ছন্ন বা দলিলবিহীন বিল হিসেবে গণ্য হয়। এরূপ বৈদেশিক বিলের সাথে দলিলপত্র সংযুক্ত করার প্রয়ােজন হয় না যখন আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক পূর্ব পরিচিত হয়।

৪। প্রস্তুত প্রণালীর ভিত্তিতেঃ প্রস্তুতপ্রণালীর নিরীক্ষে আবার বিনিময় বিলকে দু' শ্রেণীতে বিভক্ত করা চলে, যেমন—

(ক) সম্পন্ন বা সম্পূর্ণ বিল (Complete Bill): প্রস্তুতের সময় সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে তৈরী করা বিনিময় বিলকে সম্পন্ন বিল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তবে এরূপ বিল স্বাক্ষরের আগে বিলটি যথানিয়মে প্রস্তুত করা হয়েছে কিনা, আদেষ্টা তা ভালভাবে দেখে নেয়।

(খ) অসম্পূর্ণ বিল (Incomplete or Inchoate Bill): সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করার প্রাক্কালে লেখক কর্তৃক স্বাক্ষরিত হলে, এরূপ বিনিময় বিলকে অসম্পূর্ণ বিল বলা হয়ে থাকে। তবে অনুরূপ বিল সম্পূর্ণ বা আংশিক খালি অবস্থায় রেখে ষ্ট্যাম্প লাগিয়ে লেখক স্বাক্ষর প্রদান করে এবং বিলের ধারক বা অন্য কোন ব্যক্তি দ্বারা বিলটি পরবর্তীতে পূরণ হয়ে থাকে।

৫। প্রয়ােজন ভিত্তিকঃ প্রয়ােজনের ভিত্তিতে বিলকে নিম্নোক্ত দু'ভাগে বিভক্ত, যেমন

(ক) বাণিজ্যিক বিনিময় বিল (Commercial Bill): বাণিজ্যিক প্রয়ােজনে ও বাণিজ্যিক লেনদেন হতে উদ্ভুত লেনদেন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ব্যবহৃত বিনিময় বিলই এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের বিলের লেখক হলেন পাওনাদার এবং গ্রাহক হলেন দেনাদার।

(খ) অর্থ সংস্থানকারী বিল (Accomodation Bill): বাণিজ্যিক লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহৃত না হয়ে বরং পারস্পরিক সমঝােতায় লেখকের বা উভয় পক্ষের পারস্পরিক অর্থ সংস্থানের জন্য ব্যবহৃত হলে তা-ই অর্থ সংস্থানকারী বিল হিসেবে গণ্য হবে। উল্লেখ্য যে, এতে মূলতঃ কেউ দেনাদার ও পাওনাদার থাকে না এবং বিল স্বীকৃতির পর ব্যাঙ্ক হতে বাট্টা করা হয় ও প্রাপ্ত অর্থ প্রয়ােজনে উভয় পক্ষ বা এক পক্ষ ব্যবহার করে থাকে। ব্যাঙ্ক কর্তৃক উপস্থাপিত উক্ত বিলের অর্থ নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে পরিশােধ করতে হয়।

৬। অন্যান্য বিলঃ উপরােক্ত শ্রেণীবিভাগের বাইরেও এ ধরনের বিলসমূহ বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন

(ক) বাহকের বিল (Bearer, Bill): যেসকল বিনিময় বিলের অর্থ এর বাহকের অনুকূলে পরিশােধযােগ্য হয় তা-ই বাহকের বিল হিসেবে পরিচিত। মেয়াদান্তে যে ব্যক্তি অন্যরূপ বিল গ্রাহকের বরাবরে উপস্থাপন করে গ্রাহক সে ব্যক্তিকেই বিলের অর্থ পরিশােধ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, বাহকের বিল হস্তান্তরের জন্য অনুমােদন আবশ্যক নয়।

(খ) হ্রস্ব বিল (Short Bill): মেয়াদ পূর্তীর আগেই যদি বিনিময় বিল টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাঙ্কের নিকট জমা রাখা হয়, তবে ঐ বিলসমূহকে হ্রস্ব বিল বলা হয়। উক্ত বিলের টাকা আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃক মক্কেলের টাকার হিসাবের পার্শ্বে একটি স্থানে এরূপ বিলের রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয় ও মেয়াদান্তে টাকা প্রাপ্তি হলে মক্কেলের হিসাবে টাকা জমা প্রদান করা হয়।

(গ) নিবেশিত বিল (Domiciled Bill): কোন বিনিময় বিলের স্বীকৃতিকারী তার বাসগৃহ বা ব্যবসাস্থল ব্যতীত অন্যত্র বিলের টাকা পরিশােধে স্বীকৃতি প্রদান করলে উক্ত বিল এ শ্রেণীভুক্ত হবে। উল্লেখ্য যে, বিল পরিশােধের উক্তরূপ স্থানের ঠিকানা বিলের লেখক বা স্বীকৃতিকারী কর্তৃক বিলের গায়ে লিখে দিতে পারে।

(ঘ) দ্ব্যর্থবােধক বিল (Ambiguous Bill): কখনও কখনও কিছু বিল এমনভাবে তৈরী হয় যা ভাষাগত কারণে বিনিময়পত্র নাকি অঙ্গীকারপত্র তা সনাক্ত করা দুরূহ হয়ে পড়ে, বিধায় এ সমস্ত বিলকে দ্ব্যর্থার্থক বা অনিশ্চিত বিল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তবে এক্ষেত্রে বিলের ধারকই শুধু নিজের ইচ্ছা সাপেক্ষে বিনিময়পত্র বা অঙ্গীকারপত্র হিসেবে গ্রহণ করতঃ কার্যকর রাখতে পারেন।

(ঙ) ভুয়া বিল (Fictitious Bill): এমন সময় অনেক বিল পাওয়া যায় যার গ্রাহক, লেখক বা অন্যান্য পক্ষের নাম বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিথ্যাভাবে প্রদত্ত থাকে, বিধায় এগুলােকে ভুয়া বিল বলে। এরূপ বিলের ক্ষেত্রে লেখক বা স্বীকৃতিকারীর কোন একজনের নাম সঠিক থাকলেও এগুলাে বৈধ হয় না, যদিও বিলসমূহের ধারক যদি প্রকৃত ধারক হয় ও লেখক ও পৃষ্ঠাঙ্কনকারীর স্বাক্ষর ভুয়া হলেও তা আইনত গ্রহণযােগ্য হয়।

বিনিময়পত্র ও অঙ্গীকারপত্রের মধ্যে পার্থক্য (Difference between a Promissory Note and a Bill of Exchange): অঙ্গীকারপত্র ও বিনিময়পত্রের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, যেমনঃ

(১) অঙ্গীকারপত্র হল দেনাদার কর্তৃক পাওনাদারের নিকট লিখিত একটি প্রতিশ্রুতি, কিন্তু বিনিময়পত্র হল পাওনাদার কর্তৃক দেনাদারের উপর প্রদত্ত একটি আদেশ;

(২) অঙ্গীকারপত্রের সহিত প্রতিশ্রুতিদাতা (Promisor) এবং প্রতিশ্রুগ্রিহীতা (Promisee) এই দু’টি পক্ষ জড়িত থাকে, কিন্তু বিনিময় বিলে তিনটি পক্ষ থাকে, যেমন—বিল-লেখক (Drauer), গ্রাহক (Drauee) এবং প্রাপক (Payee);

(৩) অঙ্গীকারপত্রে স্বীকৃতির (Acceptance) কোন প্রয়ােজন নাই, কিন্তু বিনিময়পত্র গ্রাহক (Drauee) কর্তৃক স্বীকৃত হওয়া প্রয়ােজন;

(৪) অঙ্গীকারপত্রের ক্ষেত্রে অর্থপ্রদানের প্রাথমিক দায়িত্ব হল প্রতিশ্রুতিদাতার। কিন্তু বিনিময় বিলের ক্ষেত্রে অর্থপ্রদানের প্রাথমিক দায়িত্ব হল বিল-গ্রাহকের, বিল-লেখকের নহে। গ্রাহক স্বীকৃতি দান বা অর্থপ্রদানের অস্বীকার করলে তবে লেখক দায়ী হয়;

(৫) অঙ্গীকারপত্র প্রত্যাখ্যাত হলে প্রত্যাখ্যানের বিষয় অর্থপ্রদানের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাবার প্রয়ােজন নেই। কিন্তু বিনিময়পত্র প্রত্যাখ্যাত হলে, অর্থপ্রদানের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যানের বিষয় বিজ্ঞপ্তির (Notice) মাধ্যমে জানাতে হবে।

বিনিময় বিলের ষ্ট্যাম্প মাশুলঃ

হুন্ডি (Hundi): উপমহাদেশে বিভিন্ন প্রকারের হুন্ডির প্রচলন বহুদিন হতেই দেখা যায়। এরূপ হুন্ডির ব্যবহার হয়ে থাকে দেশীয় মহাজন, সহকার, পােদ্দার ও ব্যবসায়ীগণের মধ্যে। বিভিন্ন উপমহাদেশীয় ভাষায় এই সকল হুন্ডি লিখিত হয়। তবে উপমহাদেশের বা বাংলাদেশের যেকোন ভাষায়ই লিখিত হােক না কেন, হুন্ডির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বর্তমানে কার্যকর হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ প্রযােজ্য নহে বলে, এ সকল হুন্ডি বা দলিলসমূহকে সাধারণতঃ হস্তান্তরযােগ্য দলিল হিসাবে পরিগণিত করা হয় না। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইনের সংশ্লিষ্ট প্রথা বা রেওয়াজের কোন বিধানে বিপরীতধর্মীতা না থাকলে অনেক দেশীয় হুন্ডির প্রচলিত নিয়মাবলী এ আইনে প্রযােজ্য হবে, অথবা এর পক্ষসমূহের সম্পর্কে বর্তমান হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন দ্বারা এগুলাে নিয়ন্ত্রিত হবে। নিম্নে উপমহাদেশে প্রচলিত প্রধান প্রধান কয়েকটি হুন্ডির বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলাে—

(১) শাহযোগ হুন্ডি (Slian Jog fluidi): এই হুন্ডি উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশী প্রচলিত। এই জাতীয় হুন্ডি উহার সম্মানীয় (respectable) ধারককে (holder) নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য একজন ব্যবসায়ী কর্তৃক অপর একজন ব্যবসায়ীর উপর প্রদত্ত আদেশ। এতে সাধারণতঃ প্রাপকের নাম উল্লেখ থাকে এবং একস্থান হতে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণের মাধ্যম হিসাবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।

(২) জখমী হুন্ডি (Jokmi IHundi): সঠিক অর্থে একে হুন্ডি বলা যায় না। সাধারণতঃ পশ্চিম ভারতের উপকূলীয় ব্যবসায়ে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিগণের মধ্যে এর প্রচলন দেখা যায়। এর দ্বারা নৌবাহিত পণ্যের দুর্ঘটনা বীমার ব্যবস্থা হয়ে থাকে। এর লেখক চালানী পণ্যের প্রেরক (consignee) হিসেবে পণ্যের প্রাপকের (consignor) উপর এই হুন্ডি লেখে এবং এক শ্ৰেণীর কারবারী যারা হুডিওয়ালা নামে পরিচিত তাদের নিকট বিক্রয় করে। হুন্ডিওয়ালা, বীমার প্রিমিয়াম বাবদ অর্থ কেটে রাখে এবং বাকী টাকা হুন্ডিকারককে ফেরৎ দেয়। পণ্য গন্তব্যস্থানে পৌছবার পর পণ্যের প্রাপকের নিকট হুন্ডিওয়ালা হুন্ডিটি উপস্থাপিত করে এবং পণ্যের প্রাপক হুন্ডির অর্থ প্রদান করে পণ্য খালাস করে নেয়।

(৩) ধানীযােগ বা দেখন্দর হুন্ডি (Dhani Jog or Dekhander Hundi): এ জাতীয় হুন্ডির অর্থ উহার বাহকের নিকট প্রদেয়।

(৪) দর্শনী হুন্ডি (Darshani Hundi) দর্শনমাত্র প্রদেয় হুন্ডিকে বলা হয় দর্শনী হুন্ডি (Darshani Hundi)। এ জাতীয় হুন্ডি গ্রাহককে (Drawee) দেখিবামাত্র প্রদেয়।

(৫) মেয়াদী বা মুদ্দতি হুন্ডি (Miadi or muddati Hundi): এ জাতীয় হুন্ডি গ্রাহককে দেখিবামাত্র উহার অর্থ পাওয়া যায় না। প্রচলিত রীতি-নীতি ও মেয়াদক্রমে এর অর্থ প্রদেয়।

(৬) নামযােগ হুন্ডি (Nam Jog Hundi): হুন্ডিতে যে ব্যক্তির নাম উল্লিখিত থাকে তাকে বা তার আদেশানুসারে প্রদেয় হুন্ডিকে নামযােগ হুডি বলা হয়।

(৭) ফর্মান যােগ হুডি (Firman Jog Hundi): ধারকের আদিষ্ট-দেয় হুন্ডিকে ফর্মানযােগ হুন্ডি বলে আখ্যায়িত করা হয়।

(৮) জবাবী হুন্ডি (Jovabee Hundi): জবাবী হুন্ডির মাধ্যমে স্থান থেকে স্থানান্তরে অর্থ প্রেরণ করা হয়। প্রাপককে অর্থপ্রাপ্তি সংবাদ অর্থ প্রেরকের নিকট জানাতে বা জবাব দিতে হয়।

কয়েকটি প্রতিশব্দঃ দর্শনমাত্র প্রদেয় হুন্ডিকে বলা হয় দর্শনী হুন্ডি (Darshani Hundi)। নির্দিষ্ট সময় অন্তে প্রদেয় হন্ডিকে বলা হয় মেয়াদী বা মুদ্দতি হুন্ডি (Miadi or Muddati Hundi)। প্রদত্ত ও বাতিল হুন্ডিকে বলা হয় খােখা (Khokha)। অনেক সময় হুন্ডিকার হুন্ডির সহিত কোন সম্মানিত ব্যক্তিকে অনুরােধ করে তার নিকট এ মর্মে পত্র লেখেন যে, গ্রাহক অসমর্থ হলে তিনি যেন প্রদেয় অর্থ পরিশােধ করে দেন। এ চিঠিকে বলা হয় জিক্রী চিট (Zickri Chit) বা টিক্রি চিট (Tickri Chit)। এর দ্বারা ধারকের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে। যে ব্যক্তির নিকট পত্র লেখা হয় তিনি সম্মানার্থে স্বীকৃতিদাতার ন্যায় কাজ করেন। কিন্তু প্রত্যাখ্যানের লেখন বা প্রমাণ প্রয়ােজন হয় না। এ দুটি কার্যক্রম হুন্ডির ক্ষেত্রে প্রযােজ্য নহে। মূল হুন্ডিটি হারিয়ে গেলে উহার যে নকল (Duplicate) দেয়া হয় তাকে পৈঠ (Peth) বলা হয়। নকলকে বলা হয় আরপৈঠ বা পারপৈঠ (perpeth)।

হুন্ডি সংক্রান্ত নজীরঃ হুন্ডির কোন সংজ্ঞা না থাকলেও এশিয়া মহাদেশে এটি একটি লিখিত বিনিময় বিশেষ [(১৪৫) ১ সি ৬৬২] একটি বিনিময় বিলকে হুন্ডিভুক্ত করা গেলেও একটি হুন্ডিকে বিনিময় বিল ভুক্ত করা যাবে না [২৩ সিডব্লিউএন ৫৩৪]। শাহযােগ হুন্ডিকে হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইনের বিধান মােতাবেক বিনিময় বিল হিসেবে গণ্য করা হয় না [১৯৩৬ এলাহা, ৩৯৬]। হুন্ডি সাধারণত স্থানীয় রীতিনীতি অনুযায়ী প্রণীত ও নিয়ন্ত্রীত হয়। কখনাে হুন্ডি অঙ্গীকারপত্রের মত আবার কখনাে বিনিময়পত্রের মত ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বিনিময় বিল ও হুন্ডির মধ্যে পার্থক্য (Distinction between Bill of Exchange and Hundi): বিনিময় বিল ও হুন্ডি ভিন্ন প্রকৃতির দলিল হলেও এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান, তথাপিও এদের মধ্যে যে পার্থক্য দেখা যায় তা নিম্নরূপঃ

(১) বিনিময় বিল টাকা প্রদানের শর্তহীন আদেশ, কিন্তু হুন্ডি প্রয়ােজনীয় শর্তযুক্ত আদেশ বা অন্য অনুরােধ বিশেষ।

(২) বিনিময় বিলে স্বীকৃতির প্রয়ােজন রয়েছে, কিন্তু হুন্ডিতে স্বীকৃতির প্রয়ােজন নেই।

(৩) বিনিময় বিলের ব্যাপ্তি পৃথিবীব্যাপী ও আন্তর্জাতিক ভাষায় এর প্রস্তুত হতে পারে, কিন্তু হুন্ডির প্রচলন শুধু উপমহাদেশে সীমাবদ্ধ ও আঞ্চলিক শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে এটি তৈরী হতে পারে।

(৪) হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ মােতাবেক বিনিময় বিল একটি হস্তান্তরযােগ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত, কিন্তু হুন্ডি অত্র আইন দ্বারা অনুরূপ স্বীকৃতি না পেলেও এটি হস্তান্তরের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।

(৫) বিনিময় বিল হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ দ্বারা বিশেষভাবে প্রণীত ও নিয়ন্ত্রীত হয়, কিন্তু হুন্ডি স্থানীয় প্রথা ও রীতি-নীতি মােতাবেক প্রণীত, নিয়ন্ত্রীত ও পরিচালিত হয়ে আসছে।

(৬) এর ব্যবহার ও প্রয়ােগ মুখ্যত বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, কিন্তু দেশীয় বাণিজ্যে হুন্ডির ব্যবহার সর্বাধিক।

ষ্ট্যাম্পঃ উল্লেখ্য যে ডিমান্ড ড্রাফটস বিনিময় বিলের অন্তর্ভুক্ত, কারণ এটা একই ব্যাঙ্কের এক শাখা হতে অন্য শাখা বা এক ব্যাঙ্ক হতে অন্য ব্যাঙ্কে হস্তান্তরিত হয়। এরূপ দলিলের ধারক ও ব্যাঙ্কের সম্পর্ক পাওনাদার ও দেনাদারের সম্পর্ক বিশেষ [পিএলডি ১৯৫২ ঢাকা ১]।

বাংলাদেশে প্রচলিত ষ্ট্যাম্প আইনের ১ম তফসিলের ১৩নং অনুচ্ছেদের বিধান মােতাবেক বিনিময়পত্র অবশ্যই ষ্ট্যাম্পযুক্ত হতে হবে, যার পরিমাণ নিম্নরূপঃ
  • এককভাবে রচিত হলে পণ্যের মূল্যের ০.২%।
  • দুটির গুচ্ছাকারে রচিত হলে উহার প্রত্যেকটির অংশ বাবদ পণ্যের মূল্যের ০.১%।
  • তিনটির গুচ্ছাকারে রচিত হলে প্রত্যেকটির অংশ বাবদ পণ্যের মূল্যের ০.৭%।
অত্র আইনের ১১৮ ধারামতে সম্পাদিত বা লিখিত সকল হস্তান্তরযােগ্য দলিল প্রতিদানের উদ্দেশ্যেই সম্পন্ন হয় এবং অনুরূপ সকল দলিল স্বীকৃত, পৃষ্ঠাঙ্কিত, হস্তান্তরিত বা স্থানান্তরিত হলে, তবে তা প্রতিদানের জন্য স্বীকৃত, পৃষ্ঠাঙ্কিত, হস্তান্তরিত ব স্থানান্তরিত হয়েছে মর্মে অনুমিত হবে। এ ধরনের অনুমান অখন্ডনীয় এবং তা প্রমাণের দায়িত্ব যে ব্যক্তি উক্ত প্রতিদান অস্বীকার করে তার উপর বর্তায় [১৪ ডিএলআর (এসসি) ৮৬]।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক