বাকর্লির আত্মগত ভাববাদ কী?


প্রশ্নঃ বাকর্লির আত্মগত ভাববাদ কী?
অথবা, বাকর্লির আত্মগত ভাববাদ ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ তত্ত্ববিদ্যা বা সত্তাসম্পর্কিত দর্শনে বিশ্বজগতের আদি উপাদান নিয়ে আলােচনা করা হয়ে থাকে। এ সত্তা নিরূপণে প্রধানত দুই ধরনের মতবাদী গােষ্ঠী পরিলক্ষিত হয়। যথা- ভাববাদ ও বস্তুবাদ। নিম্নে বার্কলির আত্মগত ভাববাদ আলােচনা করা হলাে-

বার্কলির আত্মগত ভাববাদঃ আয়ারল্যান্ডের বিশপ বার্কলি (১৬৮৫-১৭৫৩) আত্মগত ভাববাদের প্রবক্তা। আত্মগত ভাববাদ অনুসারে জ্ঞেয় বস্তুর মননিরপেক্ষ কোন অস্তিত্ব নেই। জ্ঞেয় বস্তুমাত্রই জ্ঞাতার মানসিক অবস্থা বা চিন্তাবৃত্তির প্রকাশ স্বরূপ। জড় বস্তু নয়, ধারণাই জ্ঞানের যথার্থ বিষয়। বার্কলি মনে করেন, জড়বাদের সঙ্গে নিরীশ্বরবাদ ও সংশয়বাদ অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তাই তিনি জড়বাদকে খণ্ডন করতে গিয়ে উক্ত মত প্রকাশ করেছেন।

বার্কলি বলেন, জড় বস্তু মানে কতিপয় সংবেদন বা ইন্দ্রিয়লব্ধ গুণের সমষ্টি। এসব গুণের সবই মানসিক অবস্থা বা ধারণামাত্র। লক বস্তুর গুণাবলিকে মুখ্য ও গৌণ দু শ্রেণীতে বিভক্ত করে বলেছিলেন যে, বর্ণ-স্বাদ-গন্ধ ইত্যাদি গৌন গুণ আংশিকভাবে মননির্ভর হলেও কাঠিন্য, বিস্তৃতি, আকার ইত্যাদি মুখ্য গুণ সম্পূর্ণভাবে মর্মনিরপেক্ষ। মুখ্য গুণের অবস্থান বস্তুতে এবং এরা বস্তুর স্বরূপকে প্রকাশিত করে।

বার্কলি লকের এ মত প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে, বস্তুর মুখ্য ও গৌণ গুণের এ পার্থক্য নিতান্তই কাল্পনিক। বস্তুর সব গুণই ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার ফল। গৌণ গুণাবলির মতই মুখ্য গুণাবলি বস্তুসৃষ্ট মানসিক সংবেদনের ফল। এ কথা প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি বলেন যে, বিস্তৃতি, কাঠিন্য, আকার ইত্যাদি তথাকথিত মুখ্য গুণগুলাে মন দ্বারা প্রত্যক্ষ হয়ে থাকে। সুতরাং এরা মনেরই ধারণা। এরা মনেরই সংবেদন। মনেরই সংবেদনাত্মক গুণ।

বার্কলির যুক্তিগুলাে হলঃ
(১) মুখ্য গুণগুলাে প্রত্যক্ষভাবে মনের ধারণা, মনের বাইরে এদের কোন স্থান নেই।
(২) গৌণ গুণগুলাের ন্যায় মুখ্য গুণগুলােও বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন স্বরূপ হতে পারে। যেমনঃ একই ফল একজনের কাছে মিষ্টি অন্য জনের কাছে টক।
(৩) মুখ্য ও গৌণ গুণগুলাে পৃথকভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় না। যেমন- কোন বস্তুর রূপ আছে কিন্তু আকার নেই এমন কিছু প্রত্যক্ষ করা যায় না। সুতরাং গৌণ গুনগুলাে যদি মনের ধারণা হয়, তবে মুখ্য গুণগুলােও মনেরই ধারণা।

বার্কলির মতে, সংবেদন ছাড়া কোন বস্তুর দর্শন অথবা বােধ জন্মে না। কাজেই বস্তু ও বস্তুর সংবেদন অভিন্ন। সংবেদনের বাইরে কোন বস্তু প্রত্যক্ষীভূত হতে পারে না। সুতরাং মনের বাইরে কোন বস্তুর অস্তিত্ব নেই।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, বার্কলির আত্মগত ভাববাদে সমালােচনা আছে সত্য, তবুও দর্শনের ইতিহাসে তার মতবাদের যথেষ্ট মূল্য আছে। কারণ এ মতবাদকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীকালে অবভাসিক ও বস্তুগত ভাববাদের উদ্ভব ঘটে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক